উন্নয়ন ও গবেষণা সংস্থা বারসিক

রাজশাহীতে ১১ শতাংশ গৃহকর্মীর বয়স ১৫ বছরের নিচে; চান সাপ্তাহিক ছুটি

রাজশাহী ব্যুরো।

২৮ মে ২০২৫, ২০:২৩ পিএম

ছবিঃ সংগৃহীত।

রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত এক জনসংলাপে সাপ্তাহিক ছুটির বিষয়টি উঠে এসেছ গৃহকর্মীদের কণ্ঠ থেকে।

নিজেদের প্রয়োজন আর অধিকারের বিষয়টি তারা নিজেদের কথ্যভাষাতে প্রকাশ করেছেন। বুধবার (২৮ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরের একটি হোটেলের সম্মেলন কক্ষে এই জনসংলাপের আয়োজন করে বেসরকারি উন্নয়ন ও গবেষণা সংস্থা বারসিক। সংলাপের শিরোনাম ছিল ‘রাজশাহী নগরীর গৃহকর্মীদের অবদান, সমস্যা এবং সমাধানের উপায়’।

অনুষ্ঠানের শুরুতে “রাজশাহী নগরীর গৃহকর্মীদের অবদান, সমস্যা ও সমাধানে নীতি গবেষণা” শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, রাজশাহী নগরে বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার গৃহকর্মী কাজ করছেন।
৭০ বছর বয়সী গৃহকর্মী শহরবানু বিবির এক হাত ভাঙা। থাকেন পদ্মাপাড়ের বস্তিতে। ভাঙা হাত নিয়েই তিনি গৃহকর্মীর কাজ করে যাচ্ছেন। জনসংলাপে তিনি বলেন, “আমি একা হয়ে গেছি। তাই এক বাড়িতে কাজ করি। ওখানে খাইতে দ্যায়, মাস শেষে দেয় এক হাজার টাকা। কাজ করতে গিয়ে ভুল হলে বাড়িওয়ালির কড়া কথা খুব কষ্ট দেয়। মানুষ মাত্রই ভুল করে, এইটুকু বুঝলে ভালো হতো।”

গৃহকর্মী মুনমুন জানান, একদিন কাজ করতে করতে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলেন। তখন গৃহকর্তার স্ত্রী তাকে পা দিয়ে লাথি দিয়ে ওঠান। অসুস্থ থাকায় পরদিন ছুটি চাইলেও তা মেলেনি। তিনি বলেন, “কাজে না গেলে বাদ দিয়ে দিত। অসুস্থ শরীর নিয়েই কাজ করতে হয়েছিল। অন্তত একটা দিন ছুটি আমাদেরও দরকার।”

আজেমা বেগম নামের আরেক গৃহকর্মী বলেন, “ওরা চাকরি করে, ছুটি পায়। আমরা সামান্য বেতনে কাজ করি, অথচ ছুটি চাইলে বলা হয়, ‘চাইলে কাজ করো, না চাইলে যাও।’ এটা অন্যায়।” গৃহকর্মী শিলা বলেন, “কাজ দেওয়ার সময় বলা হয় একটা কাজ। কিন্তু কাজে গেলে সাতটা কাজ দাঁড়িয়ে যায়। ভুল করলেও ক্ষমা নেই। অসুস্থ হয়ে একদিন না গেলে দারোয়ানকে বলে রাখা হয় যেন পরদিন ভেতরে ঢুকতে না দেয়। এটা খুব কষ্টের।”

নগর দরিদ্র অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, “গৃহকর্মীরা বাড়িতে রান্না করেন, সেই খাবার দিনের পর দিন ফ্রিজে থেকে নষ্ট হয়। অথচ তাদের ভালো খাবার দেওয়া হয় না। অসুস্থ হলে বেতন কেটে নেওয়া হয়। এ বিষয়ে গৃহকর্তাদের আরও উদার হওয়া দরকার। যদিও কিছু ব্যতিক্রম আছে, যারা গৃহকর্মীদের সম্মান করেন ও আপনজন মনে করেন।”

উন্নয়নকর্মী সম্রাট রায়হান বলেন, “অবহেলিত এই শ্রমজীবীদের অধিকার আদায়ে সংগঠিত হওয়া দরকার। তাদেরও অ্যাসোসিয়েশন থাকা উচিত, যেন তারা যৌক্তিক দাবি আদায়ে একত্রিতভাবে সোচ্চার হতে পারে।”
জনসংলাপে অংশ নেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের রাজশাহীর সহকারী পরিচালক নীলা ইয়াসমিন, শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা আবদুল আমিন, কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলের হোস্টেল সুপার ফেরদৌস রাবিয়া এবং জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আইনুল হক। সংলাপ পরিচালনা করেন বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম।

এর আগে বারসিকের পলিসি রিসার্স অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি অফিসার আমরীন বিনতে আজাদ গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এ বছরের মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, রাজশাহীতে এখনও ১১ শতাংশ গৃহকর্মীর বয়স ১৫ বছরের নিচে। ৪০ শতাংশ গৃহকর্মী নিরক্ষর। মাসে ২ হাজার টাকার কম বেতন পান ২৫ শতাংশ। আর ৪ হাজার টাকার বেশি পান মাত্র ১০ শতাংশ। গবেষণায় শিশুশ্রম বন্ধ, বেতন কেটে না নিয়ে সাপ্তাহিক ছুটি নিশ্চিত করা এবং গৃহকর্মীদের জন্য স্বাস্থ্যসুবিধা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে।