× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

রাজশাহী জুটমিল

নায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত ৪৪৩ শ্রমিক পরিবার

রাজশাহী প্রতিনিধি

১৩ জানুয়ারি ২০২২, ০৬:১৫ এএম

রাজশাহী জুটমিলে ৪৪৩ শ্রমিকের পাওনা অর্থ আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী জুটমিল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বছরের পর বছর ইচ্ছা করেই ঘোরাচ্ছে জুটমিল কর্তৃপক্ষ। তবুও মিলছে না প্রাপ্য অর্থ। যাদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের ভালো সম্পর্ক তারা ঠিকই তুলে নিয়েছেন তাদের টাকা।

জুটমিল সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জুট মিল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৯ সালে। স্বাধীনতার পর এটিকে জাতীয়করণ করা হয়। এখনো এটি বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের আওতায় পরিচালিত। লোকসানের কারণে ২০২০ সালের ২ জুলাই রাত ১০টার দিকে সরকার জুট মিলটি বন্ধ ঘোষণা করে। এতে রাতারাতি বেকার হয়ে পড়েন এক হাজার ২০৯ জন স্থায়ী শ্রমিক। এছাড়া এক হাজার ৫০ জন শ্রমিককে বদলি করা হয়। এনিয়ে ওই সময়ে রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শ্রমিক আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। পরে বিভিন্নভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয় প্রশাসন।

পরবর্তীতে রাজশাহী জুটমিলে ২০১৩ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুন সময়ের মধ্যে ১০০ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এসময়ের মধ্যে বদলি হয় ৩৩২ জনের আর নাম ভুল থাকার কারণে আরও ১১ জনের পেনশন, গ্রাচুইটি, পিএফ ও বীমার টাকা আটকে দেয় জুটমিল কর্তৃপক্ষ।

তবে জুট মিল বন্ধের সময় ‘গোল্ডেন হ্যান্ডসেকে’ চাকরি হারানো অনেকেই পেয়েছেন তাদের টাকা। তাদের মধ্যে অধিকাংশই সিবিএ নেতা ও ক্ষমতাধর পরিবারের লোকেরা। তবে পাওনা অর্থ পায়নি বাকি ৪৪৩ জনের পরিবার। এসব পরিবারের অনেকেই জুটমিলে কাজ করেছেন ১০, ১৫, ২০, ৩০ কিংবা চাকরির পুরো ৪০ বছর। কেউবা কর্মরত অবস্থায় অথবা অবসর নেওয়ার পর মারা গেছেন।

এনিয়ে মাঝে মধ্যেই উত্তেজনার সৃষ্টি হচ্ছে রাজশাহী জুটমিল করপোরেশনে। প্রায় প্রতিদিনই ৪৪৩ জন ব্যক্তির কোনো না কোনো পরিবারের সদস্য জুটমিলে ধর্ণা দিচ্ছেন পাওনা টাকার আশায়। গত সোমবার (১০ জানুয়ারি) পাওনা অর্থ না পাওয়ার ক্ষোভে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিক্ষোভ করে ভুক্তভোগীর পরিবারের লোকেরা।

নাম প্রকাশে কয়েকজন ভুক্তভোগী বলেন, সকল নমিনীর কাগজ জমা নেওয়া হলেও মাত্র কয়েকজনকে টাকা দিয়ে বাকিদেরকে বছর ধরে ঘোরানো হচ্ছে। বিশেষ করে যাদের সঙ্গে কর্মকর্তাদের ভালো সম্পর্ক তারা টাকা পেয়েছে, কিন্তু আমরা পাচ্ছি না। তাদের অভিযোগ, আমাদের সকলের টাকা ব্যাংকে ঢুকে গেছে। কর্তৃপক্ষ নির্দেশ না দেওয়ায় সেই টাকাগুলো আমাদের একাউন্টে ঢুকছে না। ব্যাংকে থাকা টাকাগুলোর লাভের অংশ তারা বিগত কয়েক বছর ধরে তুলছে আর সবাই ভাগ করে খাচ্ছে। আমাদের নায্য অর্থ থেকে বঞ্চিত করছে।

পাটকলে কর্মরত অবস্থায় মৃত এক শ্রমিকের মেয়ে জানান, আমার বাবা সকালে অফিস থেকে বাসায় ফিরে বিকেলে মারা যায়। বাবার সেই পাওনা টাকা আজও আমরা পাইনি। বাবার টাকা দিয়ে আমাদের সংসার চলতো। এখন আমরা খেয়ে না খেয়ে জীবন পার করছি। প্রায় দু’বছর হয়ে গেছে তবুও বিভিন্ন মিথ্যা প্রতিশ্রæতি দিয়ে ঘোরাচ্ছে দিনের পর দিন। তিনি জানান, অনেকে টাকা পেয়ে গেছেন বলেও আমরা জানতে পেরেছি। কিন্তু আমরা পাচ্ছি না।

রাজশাহী জুটমিল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি জিল্লুর রহমান বলেন, আমরা মিল ব্যবস্থাপকের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন টাকার ব্যবস্থা হবে। কিন্তু কবে হবে তা তিনি নির্দিষ্ট করে জানাতে পারেননি। তাদের ভাষ্য, বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন অনুমোদন দিলেই সকলেই তাদের অর্থ পেয়ে যাবে। তার আগে তাদের কিছুই করার নেই।

তিনি আরও বলেন, আমরা কয়েকজন গোল্ডেন হ্যান্ডসেকে চাকরি হারানোর কারণে আমাদের অর্থ পেয়ে গেছি। তবে কর্ম হারানো বা মারা যাওয়া অন্যান্য পরিবারগুলো কীভাবে চলছে সেটা শুধু ওই পরিবারের সদস্যরাই জানেন। করোনার মধ্যে অনেকের বাড়িতে চুলা পর্যন্ত জ্বলেনি। অথচ পাওনা টাকা পড়ে আছে কর্তৃপক্ষের নিকট।

রাজশাহী জুটমিলের উপ-মহাব্যবস্থাপক ও প্রকল্প প্রধান শরিফুল কবীরকে তার মুঠোফোনে ফোন যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর তিনি কলটি কেটে দেন। এরপর একাধিক বার তার মোবাইলে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভি করেননি।

এ বিষয়ে শ্রমিক নেতা জিল্লুর রহমান বলেন, সাংবাদিকদের ফোন এলে তারা ধরতে চান না, কথাও বলেন না। আবার সাংবাদিক আসছে শুনলেই তারা সেখান থেকে কেটে পড়েন।


Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.