× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

"পাখি শিল্পে বিকশিত হোক বাংলাদেশ"

রণশি মান্নান

২৩ আগস্ট ২০২২, ১০:৪৭ এএম । আপডেটঃ ২৫ আগস্ট ২০২২, ১০:৩৪ এএম

শস্য শ্যামল সবুজ সোনার বাংলার রূপ লাবণ্যের আরেকটি অলংকার হলো কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত ভোর বেলার পাখিরা। পাখির শব্দ কানে না এলে বুঝার উপায় নেই যে সকাল হয়েছে কি না। ঘুম ভাঙ্গানো নানা জাত প্রজাতের পাখির বসতি রয়েছে জীবনানন্দের রূপসি বাংলায়। পাখি প্রেমী কিছু মানুষ সখ্য গড়ে তুলেছে পাখির সাথে। গরু,ছাগল হাঁস মুরগি,কুকুর বিড়াল এবং কি সখের বশে অনেকেই হিংস্র প্রাণী বাঘ,ভালুক,সাপ,সিংহকে পোষ মানিয়ে লালন পালন করছে।  কেউ সখে আবার কেউ বাণিজ্য করতে নানা জাতের পশুপাখি পালন করে। বর্তমান সময়ে দুপায়ের এই পাখি পালন করে অনেক বেকার যুবক/যুবতি এবং কি ছোট্ট ছোট্ট কিছু পরিবার বেশ স্বচ্ছলভাবে জীবন যাপন করছে। আসলে মানুষের পক্ষে পশু পাখি লালন পালন করা অতি সহজ কাজ নয়। র্ধৈয্য ও অদম্য পরিশ্রম,পাশাপাশি পাখির প্রতি গভীর ভালবাসা যত্নবান হওয়া আবশ্যক। এমনই এক পাখি প্রেমির গল্প রয়েছে আজকের আয়োজনে।

ঢাকার মিরপুরের স্থায়ী বাসিন্দা হাসান রাজ। যার ছোট্ট বেলা থেকে শখ পাখি পালন করা। বাসা থেকে এই কাজে কেউ বাধা দেয়নি। সবাই স্বপ্ন দেখে বড় হয়ে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার কিন্তু হাসানের স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে একদিন একটি পাখির খামার করার। পাখির সাথে সখ্যতা করতে তার ভাল লাগে। লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে ২/৪ জোড়া বিদেশি পাখি লালন পালন করা শুরু করে। সম্ভবত ২০০৭/৮ সালে সর্বপ্রথম পাখি পালনের ভুত মাথায় চেপে বসে। হাসান রাজ এক জোড়া বাজরিগার পাখি দিয়ে শুরু করেন পাখি পালন। এভাবেই প্রাইমারি,মাধ্যমিক কেটে গেল পাখির রাজা হাসান রাজের। এরি মধ্যে জোড়া জোড়ায় ৭/৮ জোড়া পাখি হয়ে গেছে। বাসার ছাদেই ধীরে ধীরে গড়ে তুলেন অল্প পরিসরে পাখির ছোট্ট খামার। প্রায় ১৬ জোড়া পাখি নিয়ে এক বন্ধুর সাথে পার্টনার হিসেবে বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবসা শুরু করেন। মিরপুর বাংলা কলেজের ছাত্র হাছান রাজ লেখাপড়ার পাশাপাশি পাখির সাথে দারুণ প্রেমে মজে গেলেন। পাখি কেনাবেচা করে মাসে মোটামুটি ভালই আয় হতে থাকে তার। যা দিয়ে হাসান তার ব্যাক্তিগত খরচা মিটাতো। পারিবারিক ভাবে কেউ বাধা দেয়নি কারণ হাসান খারাপ কিছু করছে না। যে বয়সে স্কুল কলেজে পড়ুয়া ছেলেরা দুষ্টুমি করে আজে বাজে আড্ডায় সময় নষ্ট করে সে বয়সে হাসান পাখি নিয়ে সময় পার করে। বিষয়টি পজেটিভ ভেবেই বাসায় কোন বির্তক হয়নি। সহযোগিতা পেয়েছেন দারুন ভাবে। তাই বেশ কিছুদিন পর পাটর্নার ছেড়ে একাই একটি শো-রুম দিয়ে পুরোদমে ব্যবসা শুরু করেন।

 ২০১৩ সালে পুরান ঢাকায় নিমতলীতে একটি ছোট শো-রুম খুলেন নাম তার ”এ্যাংরি র্বাডস বিডি পেট সপ্’’। অল্প দিনেই বেশ জমে উঠে বিডি পেট সপের ব্যবসা। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাখি প্রেমিকদের ভিড় পড়ে থাকে সারাক্ষণ। পাখি প্রেমিরা পাখি না কিনতে পারলেও একটু দাঁড়িয়ে থেকে প্রাণ ভরে দেখে যায় পাখির রাজা হাসানের রং বেরংঙের বিদেশী পাখিদের। সুন্দর যে কোন জিনিস চোখে পড়লে মনটাও যেন সুন্দর হয়ে যায়। ধীরে ধীরে হাসানের পাখি সপ্রে খবর ছড়িয়ে পড়ে শহর থেকে শহরে। কয়েক বছর পর ব্যবসার প্রসার ঘটাতে ঢাকা শহরের কাটাবন সিগন্যাল মোড়ে খাইরুন্নেচ্ছা ভবনের নিচতলায় মনিহারি সাঁেজ সজ্জিঁত দৃষ্টি নন্দন ” এ্যাংরি র্বাড বিডি পেট সর্প’’  নতুন ভাবে একটি শো-রুম চালু করেছেন। সকাল বিকাল রাত অবদি পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষের পদচারণায় মুখরিত থাকে সারাক্ষণ। তার শো-রুমে রয়েছে সব বিদেশী পাখির সমাহার যেমন,ইলেকট্টাস, কাকাতুয়া,মেরিল্যান্ড,কাকটেল,গ্রে প্যারট,অ্যামাজান,লরি,রাজেনা,ম্যাকাওসহ বিভিন্ন জাতের কনুর ল্যার্বাডও সব ধরনের পাখির ব্চ্চাা এবং আরো অনেক নামীদামী পাখি। 

সংবাদ সারাবেলার একান্ত সাক্ষাৎকারে পাখি প্রেমী হাসান রাজ বললেন অন্য পেশায় না যেয়ে পাখি শিল্পে আসার কারণ হলো এই পাখি পালন মুলত আমার সখের কাজ,পাখিদের মুখে আদর করে খাবার তুলে দেয়া,কথা বলা আমার ছোট্ট থেকেই ভালো লাগে। লেখাপড়া শেষ করে প্রাণ আর এফ এল কোম্পানীতে বেশ কিছুদিন চাকুরি করেছেন। সেখানে মন টিকেনি। চাকুরি ছেড়ে দিয়ে ভালোভাবে পাখির পালনে মনোযোগ হলেন। হাসান রাজের মতে পাখি পালনের মাঝে এক ধরনের ভালবাসা প্রেম কাজ করে। যা মানুষকে ভালো মানুষ হতে প্রেরণা দেয়। মনে সব সময় হাসি আনন্দ থাকে। যুবক/যুবতি বা কিশোরগণ বাসায় অযথা সময় অপচয় না করে পাখি পালনে ব্যস্ত সময় পার করতে পারলে অন্য আজে বাজে আড্ডা থেকে তারা সরে আসবে। আলোর পথে থাকবে। পাখির কিচির মিচির শব্দে মনে আসবে সৌখিনতা। পাখি বান্ধব হাসান মনে প্রাণে বিশ^াস করেন,আমাদের দেশের ছেলে/মেয়েরা অযথায় সময় নষ্ট না করে বাড়ির বাড়ান্দায়,ছাদে ৩/৪ জোড়া পাখি পালন করে অনায়াসে নিজের হাত খরচা এবংকি পরিবারের হালকা পাতলা চাহিদা মিটাতে পারবে। যারা র্হাটের রোগী তাদের জন্য বেশ উপকারি পাখি লালন পালন। তাছাড়া মাদকতাশক্ত নেশাকারীকে এই পাখি পালনে প্রেরণা দিলে এবং পাখির সাথে আদর ভালবাসার সেবা দিতে অভ্যাস করালে সে সফল হবে এবং ধীরেধীরে মাদক থেকে ফিরে আসবে। রাজ তার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে আরো বলেন, লেখাপড়া,চাকুরি বা অন্য কোন ব্যবসা করেও এই পাখির ছোট্ট খামারী ব্যবসা করা যায়। সকাল বিকাল রাত পাখির সাথে সময় পার করে,মনে একটা আনন্দ সুখ অনুভব করেন তিনি। যা সে অন্য কোন কাজে কোনভাবে কোনদিন পায়নি। পাখি প্রেমিক হাসান তার ভবিষৎ পরিকল্পনার কথা বলেন তার নিজস্ব ভুমিতে”এগ্রির্বাড র্ফাম’’ নামে একটি বড় খামার গড়ে তুলেছেন। অনেক প্রজাতির পাখি রয়েছে এই খামারে। এটাকে ঘিরেই তার পাখি শিল্পে ব্যাপক প্রসার বৃদ্ধি করার স্বপ্ন। এদেশের প্রত্যতেকটি ঘরে পাখি পালনের প্রেরণা উৎসাহ দেয়া তার প্রসংশনীয় উদ্যোগ। তার শো-রুমে আর খামার মিলে রয়েছে ১০/১২ জন কর্মচারী। পাখি শিল্পে তার ভুমিকা প্রসংশনীয়।  

সরকারি কোন অনুদান বা সহযোগিতা ছাড়াই নিজস্ব উদ্যোগে পাখির প্রতি ভালোবাসা থেকে আজ এতদূর আসতে পেরেছেন। তবে সরকারের কাছে তার দাবী এই সৌখিন শিল্পটি বাঁচাতে বাংলাদেশ র্বাড এসোসিয়েসন নামে সংগঠনটিকে তাজা করা পাশাপাশি বিদেশ থেকে পাখি ইমর্পোট ভ্যাট ট্যাস্ক বা শুল্ক কমাতে হবে। পাখির উন্নত খাবার উৎপাদনের নিজস্ব ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। পাশাপাশি পাখির জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ভেটেনারী হসপিটাল চালু করা গেলে পাখি পালনে সবাই উৎসাহ পাবে বলে তিনি বিশ^াস করেন। অন্যান্য ব্যবসার মত এই পাখির ব্যবসাতেও খুব কম সুদে সরকারী ঋণের ব্যবস্থা করা। হাসান রাজের মতে” মানুষ যদি পশুপাখিকে সেবা করে ভালোবাসে তাহলে পশুপাখিও মানুষকে ভালোবাসবে। এতে করে মানুষের মন মানসিকতা ভালো থাকবে। যা অসুস্থ সমাজকে সুস্থতায় ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে। হাসঁ মুরগি,গরু ছাগল,কবুতরের পাশাপাশি এই পাখি শিল্পেও রয়েছে বিশাল সম্ভবনা। কারণ আমাদের দেশের প্রকৃতি আবহাওয়া সব ধরণের পাখির বসবাসের উপযোগী। আসুন সবাই মিলে পাখি প্রেমিক হাসান রাজের মত পাখিদের বাচাঁতে এগিয়ে আসি এবং ”’পাখি শিল্পে মখুরিত করি বাংলাদেশ’’এই শ্লোগান মনে প্রাণে পোষণ করি। তবেই বাচঁবে পাখি,কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ।



Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.