পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবিপ্রবি) ভৌগলিক অবস্থান পাবনাতে হলেও বিস্তুতি লাভ করবে সারা বিশ্বজুড়ে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতা ও মানোন্নয়নে গবেষণার কোনো বিকল্প নেই। নতুন জ্ঞান সৃষ্টিতে এ খাতকে সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলা হবে। যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন।
মঙ্গলবার (২৮ জুন) দুপরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কার্যালয়ে পাবনায় কর্মরত বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনা ও জনসংযোগ দপ্তরের উপ-পরিচালক ফারুক হোসেন চৌধুরীর সঞ্চালনায় অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন বলেন, উপাচার্য বলেন, আমাদের স্বপ্ন বড়, আমরা ভালো কাজ করতে চাই। ভালো কাজের আনন্দ খুবই তৃপ্তির। রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ পাবনার পরিবেশ ও প্রতিবেশের সাথে মিল রেখে নতুন বিভাগ খোলা হবে। আমরা দুইমাস আগে যোগদান করেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাণ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করতে পেরেছি। তাদের মনোবল, শক্তি ফিরিয়ে এনেছি। তাদের মধ্যে স্বপ্নের বীজ বুনতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি বলেন, নীতিগত দুর্নীতি বড় দুর্নীতি। আমরা দুর্নীতি করবো না, করতেও দেব না। সাংবাদিকরা আমাদের কাজকর্মের পর্যবেক্ষক হিসেবে বড় দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁরা আমাদের সারাক্ষণ জাগিয়ে রাখবেন যাতে আমাদের গতি কমে না যায়। আমাদের বন্ধু হিসেবে সত্যকে তুলে ধরবেন। সত্যকে সত্য কালোকে কালো বলবেন। সাংবাদিকরা সমাজের অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করে থাকেন।
উপাচার্য ড. হাফিজা খাতুন এ সময় বলেন, পাবনার সাংবাদিকতার ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের । মহান ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এখানকার সাংবাদিকরা যে গৌরবময় ভূমিকা পালন করেছেন তারই ধারাবাহিকতায় পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার কাজে আমাদের পাশে থাকবেন। সহযোগিতা করার জন্য তিনি সাংবাদিকদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আরও আধুনিক ও উন্নত করে গড়ে তোলার চেষ্টার কথা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাগত উপাচার্য বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারী সবার জন্য সব ধরণের সুযোগ সৃষ্টি করতে করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে গুণগত মান বজায় রেখে কাজ শুরু করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। আমি যখন যোগদান করি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কিছুই অগোছালো ছিল। বলতে গেলে ক্যাম্পাসের কাজ কেবল নতুন করে শুরু করেছি।
উপাচার্য হাফিজা খাতুন বলেন, ‘পর্যাপ্ত স্থান না হলে ভালো কাজ করা যায় না। শিক্ষার মান বাড়াতে হলে আমাদের অবশ্যই স্থান বাড়াতে হবে। আধুনিক ও গুণগত মানসম্পন্ন একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার জন্য ১০০ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও মন্ত্রনালয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। প্রস্তাবণা পাস হলে দেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিনত হবে।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল খান বলেন, সাংবাদিকরা সমাজ বিনির্মানের কারিগর। এই বিশ্ববিদ্যালয় আপনাদের ভালোবাসার প্রতিষ্ঠান। বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান গড়ার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। নানা পথ নানা মত থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু আমরা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাবো। আমাদের সীমাবদ্ধতা থাকলেও লক্ষ্যে পৌছানো অসম্ভব নয়। অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে আমরা দেশের সেবা করতে চাই। সকল তথ্য দিয়ে সাংবাদিকদের সাহায্য করতে চাই। যাতে আমাদের কাজের স্বচ্ছতা থাকে। জাতি জানতে পারে আমরা কী করছি।
পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান পাবনার সাংবাদিকতার ঐতিহ্য তুলে ধরে বলেন, আমরা সকল ইতিবাচক কাজে সহযোগিতা করতে চাই। পাবনার প্রতিষ্ঠান সারাবিশ্বে সুনাম অর্জন করুক এটা আমাদের প্রত্যাশা। নতুন উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের যোগদানের মধ্য দিয়ে নতুন দিনের সূর্যের উদয় হয়েছে। উপাচার্যের জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হোক এই বিশ্ববিদ্যালয় তথা পাবনা।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার বিজন কুমার ব্রহ্ম, ডেপুটি রেজিস্ট্রার হাসিবুর রহমান, নবনিযুক্ত প্রক্টর কামাল হোসেন। পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সৈকত আফরোজ আসাদ, পাবনা সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি আব্দুল মতীন খান, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি রুমি খন্দকারসহ পাবনার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ১২ এপ্রিল পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) প্রথম নারী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক হাফিজা খাতুনকে। এর আগে গত ৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্কিত উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম রোস্তম আলীর মেয়াদ শেষ হয়। ২০১৮ সালের ৭ মার্চ নিয়োগ পাওয়া রোস্তম আলীর বিরুদ্ধে শতাধিক অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অস্বচ্ছতার অভিযোগ উঠেছিল। এসব অভিযোগে তার দাযিত্ব পালনের প্রায় পুরোটা সময়ই শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনে উত্তপ্ত ছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি।