× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

গোবিন্দাসী হাটে ভিড় থাকলেও কেনাবেচা তেমন নেই

ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

০৩ জুলাই ২০২২, ১০:৫৮ এএম

ঈদুল আজহা'র বাকী আর মাত্র কয়েক দিন। ঈদকে সামনে রেখে দেশের অন্যতম বৃহৎ পশুর হাট হচ্ছে টাঙ্গাইলের ভুঞাপুরে যমুনা নদীর তীরবর্তী এলাকায় গোবিন্দাসী হাটে ভিড় থাকলেও কেনাবেচা তেমন নেই। ফলে হতাশায় ভুগছেন পশু বিক্রেতা ও হাটের ইজারাদার জাহিদুল ইসলাম (খোকা)। দুই বছর করোনার পর এবার গো-খাদ্য সহ নিত্য পণ্যের দাম বেশি। পশু পালনে খরচও বেড়েছে বেশ‌। এছাড়া বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ।


এক জোড়া উন্নত জাতের দেশি গরু এনেছিলেন আব্দুল জলিল। তিনি গরু দুটির দাম ছয় লাখ টাকা হাঁকিয়েছেন। ক্রেতারা তার গরুর দাম ৫ লাখের বেশি বলেননি। এতে কাংখিত দাম না পেয়ে তিনি গরু দুটি ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন।

একইভাবে গরুর কাংখিত দাম না পেয়ে জামালপুর সরিষাবাড়ী থেকে আসা এনামুলও তার একটি গরু ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, গরুর দাম এক লাখ ৫০ হাজার টাকা চেয়েছি। কিন্তু ক্রেতারা এক লাখ ২০ হাজার বলে। এই দামে গরু বিক্রি করলে লোকসান হবে।

আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে গোবিন্দাসী হাটে এবার প্রচুর গরু উঠেছে। ক্রেতার আনাগোনাও বেশি। তবে বিক্রেতাদের কাছে গরুর দাম কাঙ্ক্ষিত নয়। এতে গরু বিক্রি না করে বিক্রেতারা হাট থেকে ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন।
 
রবিবার (৩ জুলাই) দুপুরে গোবিন্দাসী হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাটে প্রচুর গরু উঠেছে। ভারতীয় বোল্ডার গরুও আছে অনেক। দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতাও এসেছেন গরু কিনতে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে গরুর দর-কষাকষি চলছে। দামে মিললে ক্রেতারা কিনছেন, না মিললে চলে যাচ্ছেন। এদিকে হাটে প্রচণ্ড রোদ থাকায় অনেকে ক্লান্ত হয়ে হাটে থাকা গাছের নিচে বসে পড়েছেন।

হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতা ও হাট ইজারাদারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলার মধ্যে বড় পশুর হাট এই হাটটি। এই হাট জেলা শহরে অদূরে ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের বসে। এই হাটে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যাপরীরা আসেন। তবে ঈদের আগে ব্যাপারীরা এই হাট থেকে গরু কিনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী, সিলেটসহ দেশের বড় বড় শহরে নিয়ে যান। অন্য অঞ্চল থেকে ক্রেতারা আসলেও গরুতে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত দাম।

গরুর ব্যাপারী লুৎফর মিঞা বলেন, হাটে পাঁচটি উন্নত জাতের গরু বিক্রি করতে এনেছি। দাম ১ লাখ ৭০ হাজার থেকে ৪ লাখ পর্যন্ত হাঁকিয়েছি। তার মধ্যে একটি মাত্র গরু ২ লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। ক্রেতারা যে দাম বলছেন সেই দামে গরু বিক্রি করলে গরু প্রতি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা লোকসান হবে। তাই বাধ্য হয়ে অন্য চারটি গরু ফেরত নিয়ে যাচ্ছি।

নোয়াখালী থেকে এই হাটে গরু কিনতে এসেছেন ওয়াসিম ব্যাপারী। তিনি বলেন, আমি এই হাটে ৩২ থেকে ৩৫টি গরু কেনার টার্গেট নিয়েছিলাম। কিন্তু সেই টার্গেট পূরণ নাও হতে পারে। বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ১৫টি গরু কিনেছি। সর্বনিম্ন ৮০ হাজার টাকায় এবং সর্বোচ্চ ১ লাখ ৭০ হাজার টাকায় ১৫টি গরু কিনেছি।

ফেনী থেকে এসেছেন ব্যাপারী আব্দুস সাত্তার। তার প্রতিনিধি সাইদুর রহমান বলেন, আমরা ৬০টি গরু কেনার লক্ষ্য নিয়ে এসেছি। কিন্তু বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ৫০টি গরু কিনেছি। যে দামে গরু কেনার আশা করা হয়েছিল। সেই দামের চেয়ে দুই-তিন হাজার টাকা বেশিতে এসব গরু কেনা হয়েছে।

স্হানীয় ইউপি চেয়ারম্যান দুলাল হোসেন চকদার বলেন, ৮০ এর দশক থেকে উপজেলার যমুনা নদীর তীরবর্তী গোবিন্দাসী এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয় হাট। ধীরে ধীরে পরিচিতি পায় হাটটি। এ ছাড়া দেশি ও ভারতীয় গরু আসায় খুব অল্প দিনেই পাইকারদের নজর কাড়ে এই গোবিন্দাসী গরুর হাট। ৯০ দশকে এসে জমজমাট গরুর হাটে পরিণত হয় এটি। সপ্তাহের রবি ও বৃহস্পতিবার বসে হাট। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত জমজমাট বেচা-কেনা হয়।

প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. দেবনাথ বলেন, একটি পৌরসভার ও ছয়টি ইউনিয়ন মিলে ভূঞাপুর উপজেলার এখানে ছোট বড় অনেক গুলো খামারিরা গরু পালন করছে, ঈদের হাট শুরু হয়েছে। উপজেলায় কোরবানি উপলক্ষে চাহিদার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ পশু পালন হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির কারণে বাইরের ব্যবসায়ীরা আসতে না পারায় বাজারে দাম কমে গেছে। এতো বড় হাটে কেনা বেচা কম। সাধারণত ঈদের সপ্তাহখানেক আগে বেশি পশু কেনাবেচা হয়।

হাটের ইজারাদার জাহিদুল ইসলাম খোকা বলেন, হাটে প্রচুর গরুর আমদানি হয়েছে। কিন্তু বিক্রি কম। কোরবানির পশুর হাট সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য হাটে আইন শৃঙ্খলা সদস্যরা রয়েছেন। তাছাড়া জাল টাকা শনাক্তের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে কয়েকটি ব্যাংকের অফিসাররা এসেছেন। হাট সিসি ক্যামেরা দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।হাটে কোনো ক্রেতা- বিক্রেতা অসুস্থ হলে তাদের জন্য একজন চিকিৎসক আছে। এক সময় এই হাঁটে চাঁদাবাজি হতো, এখন কোন প্রকার চাঁদাবাজি নেই। কেউ যদি একদিনে গরু বিক্রি করতে না পারে হাটের মধ্যে গরু রাখার ব্যবস্থা আছে। গরুর জন্য ভেটেরিনারি ডাক্তার আছে।

এই বিষয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম বলেন, হাটে বিভিন্ন ধরণের ছিনতাই, চুরি, জাল টাকা রোধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের নিরাপত্তার লক্ষে সার্বক্ষণিক বিশেষ নজরে রাখবে পুলিশ সদস্যরা। 

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা: ইশরাত জাহান বলেন, হাটে আসা ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনের পক্ষে থেকে সকল ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.