চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে শহীদ মেজর নজমুল হকের নামে প্রতিষ্ঠিত পাঠাগারে প্রায় এক যুগ ধরে ঝুলছে তালা। উদ্যোগের অভাবে একজন সেক্টর কমান্ডারের নামে প্রতিষ্ঠিত পাঠাগারটি শুরু থেকে আজ অবধি বন্ধ রয়েছে। শহীদ নজমুল হকের স্মৃতি বিজড়িত লোহাগাড়ার একমাত্র গণপাঠাগারটি অবহেলায় পড়ে আছে।
জানা গেছে, লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সন্তান সেক্টর কমান্ডার শহীদ মেজর নজমুল হক স্মৃতি পাঠাগারটি চালু হয় ২০১০ সালে। লোহাগাড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের অর্থায়নে ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় এ পাঠাগার।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বর্তমানে পাঠাগারের প্রবেশপথ বন্ধ। গেট ও পাঠাগারের দরজায় ঝুলছে তালা। এ পাঠাগারে প্রায় দুই থেকে আড়াই শতাধিক বইয়ের পাশাপশি চেয়ার-টেবিল ও আছে। এরমধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধুবিষয়ক, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, শিশুবিষয়ক এবং কিছু গল্পের বই। একজন তত্ত্বাবধায়ক পাঠাগারের দেখভাল করেন। দিনের অধিকাংশ সময় পাঠাগারটি বন্ধ থাকে। পাঠাগারটি বন্ধ থাকার কারণে কেউ ডুকতে চাইলেও ডুকার সুযোগ পায়না।
পাঠাগারের তত্ত্বাবধায়ক লিটন মল্লিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাঠাগার প্রতিষ্ঠার শুরুর দিকে কিছু পাঠক আসত। পরবর্তীতে কেউ মোস্তাফিজুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্র মোহাম্মদ মনছুর রশিদ সুমন জানান, লোহাগাড়ায় একজন সেক্টর কমান্ডারের নামে পাঠাগার আছে। অথচ তা আমরা অনেকেই তা জানি না। পাঠাগারে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুবিষয়ক, খ্যাতিমান বিভিন্ন লেখকদের বই, সায়েন্স ফিকশন, গল্পের বই, নিয়মিত কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা, সাপ্তাহিক ও মাসিক ম্যাগাজিন রাখলে পাঠক সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারে।
চুনতি সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আবু নাঈম আজাদ জানান, একটি সুন্দর সমাজ গঠনে পাঠাগারের ভূমিকা অপরিসীম। তাই শহীদ সেক্টর কমান্ডার নজমুল হক স্মৃতি পাঠাগারটি চালু রাখা খুবই দরকার। পাঠাগারের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে অবশ্যই পাঠক সৃষ্টি হবে। সুন্দর আগামী প্রজন্ম গড়তে পাড়ায় পাড়ায় পাঠাগারের প্রয়োজন রয়েছে।
লোহাগাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ বেঙ্গল জানান, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার মেজর নজমুল হকের স্মৃতিরক্ষায় পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি চালু হলে এলাকার নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে। কিন্তু পাঠাগারটি দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে, যা দুঃখজনক।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরীফ উল্যাহ জানান, শহীদ সেক্টর কমান্ডার মেজর নজমুল হক স্মৃতি পাঠাগারটি চালুর বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
লোহাগাড়া উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এম ইব্রাহিম কবির জানান, সম্প্রতি পাঠাগারটি পরিদর্শন করেছি। এটি চালুর করার জন্য শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, শহিদ সেক্টর কমান্ডার মেজর নজমুল হক লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নে জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে মেজর নজমুল হক ৭ নম্বর সেক্টরের (রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, দিনাজপুর ও রংপুরের আংশিক) কমান্ডার নিযুক্ত হন। তিনি ১৯৭১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের পরিকল্পনা সংক্রান্ত একটি বৈঠক শেষে শিলিগুড়ি থেকে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় শহিদ হন।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh