× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

মাহিলাড়ার সরকার মঠ, শিখর মন্দির শিল্পের অপূর্ব নিদর্শন-লিসা টাওয়ারের সাথে রয়েছে মিল

০১ আগস্ট ২০২২, ০৪:০৮ এএম

গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া গ্রামে এ মঠটি অবস্থিত। মঠটির দক্ষিণ পাশে একটি সু-বিশাল দিঘি, পূর্বপাশে একটি পুকুর এবং পশ্চিম ও উত্তর পাশে পাকা সড়ক রয়েছে।

স্থানীয়ভাবে এটি সরকারের মঠ নামে পরিচিত হলেও এ মঠটি শিখর মন্দির শিল্পের এক অপূর্ব নিদর্শন। এ মঠটিতে কোন খোদিত শিলালিপি পাওয়া যায়নি। তবে সপ্তদশ শতাব্দীতে নবাব আলীবর্দি খানের আমলে সরকার রূপরাম দাশগুপ্ত এ মঠটি নির্মাণ করেছেন বলে প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।

সু-উচ্চ মঠটি ইতালির লিসা টাওয়ারের সাথে মিল রয়েছে। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে মঠটি প্রায় ২৭.৪০ মিটার উঁচু। অষ্টভুজাকারে নির্মিত এ মঠের নিচের দিকের প্রতিটি ভুজ বা বাহুর দৈঘর্য ১.৯১ মিটার। এ বাহুগুলো ভূ-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬.২ মিটার উপর পর্যন্ত একই দৈঘর্য বিশিষ্ট। এরপর মঠটি ক্রমশ সরু হয়ে উপরের দিকে উঠে গেছে। সরু অংশটি অসংখ্য ধনুক আকারের কার্ণিসের অলঙ্করণ শোভিত হয়ে শিখরে গিয়ে শেষ হয়েছে। মঠের অভ্যন্তরে বর্গাকারে নির্মিত একটি ছোট কক্ষ রয়েছে। এ কক্ষটির একমাত্র প্রবেশপথ মঠের পশ্চিম দেয়ালে রয়েছে। সেগমেন্টাল খিলানের এ প্রবেশ পথটির উপরে অবস্থিত প্যানেলটিতে বেশ কিছু জ্যামিতিক অলঙ্করণ রয়েছে। এরূপ অলঙ্করণ মঠের অন্যান্য দিকেও দেখা যায়। এ মঠটি বাংলাদেশ সরকারের একটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ব অধিদপ্তরের তত্বাবধানে রয়েছে।

মঠের ইতিহাস থেকে জানা গেছে, নবাব অলীবর্দি খানের (১৭৪০-১৭৫৬) শাসনামলে সরকার রূপ রাম দাশগুপ্ত নামের স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি এই মঠটি নির্মাণ করিয়েছিলেন। এখানে দুর্গা পূজা, নগর কীর্তন, অক্ষয় তৃতীয়ায় যজ্ঞ, রথযাত্রাসহ নানা অনুষ্ঠান হয়। প্রথমে এটি জঙ্গল আবৃত ছিল। পরবর্তীতে হরলাল গোসাম্বী এ স্থানের মাহাত্ম্য বুঝতে পারেন। তিনি ছিলেন নিগমান্দ সরস্বতীর শিষ্য। তিনি এখানে প্রথম সাধনা শুরু করেন।

স্থানীয়ভাবে প্রবাদ রয়েছে, সরকার মঠটি সামান্য কাঁথ হয়ে থাকার মাহাত্ম্য হচ্ছে-এখানে মঠ প্রতিষ্ঠাতার মায়ের সমাধী স্থল। প্রতিষ্ঠাতা মঠ স্থাপন করে দম্ভের সহিত বলেছিলেন, মা তোমার সব ঋণ শোধ করে দিলাম। বলার সাথে সাথে মঠ বেঁকে যায়। মায়ের ঋণ কোনদিনও শোধ করা সম্ভব নয়; তাই সৃষ্টিকর্তা তাকে এভাবে বুঝিয়েছেন। তবে আবার কেউ কেউ ভিন্নমত পোষন করে বলেছেন, মঠ সংলগ্ন সু-বিশাল দিঘী থাকার কারণেই সু-উচ্চ মঠটি কিছুটা কাঁথ হয়েছে।

মঠ দেখতে আসা বরিশাল অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রী রিতু দাস দিয়া জানিয়েছেন, মানুষের মুখে মঠের সৌন্দর্যের বিষয়ে জানতে পেরে বান্ধবীদের নিয়ে মঠটি দেখতে এসেছি। প্রাচীণ শিল্পের মঠটি দেখে আমরা খুবই অবিভূত হয়েছি

সরকার মঠের সামনের দুর্গা মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক রতন কুমার দাস বলেন, দেশ-বিদেশের পর্যটকরা মঠটি দেখতে এসে খুবই খুশি হচ্ছেন। কিন্তু এখানে ভাল কোন ওয়াশরুম, পর্যটকদের জন্য রেষ্ট রুম, কিংবা বসার কোন ব্যবস্থা না থাকায় দর্শনাথীরা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, মঠটি কয়েক বছরপূর্বে সংস্কার করা হয়েছে। বর্তমানে মঠের বিভিন্নস্থানের পলেস্তরা খসে পরেছে। এছাড়া মঠটির দক্ষিণ পাশের দিঘীর পাড়ে পাইলিং না থাকায় মঠটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ন হয়ে পরেছে। তিনি মঠটি সংস্কার, ওয়াশরুম, রেষ্ট রুম ও বসার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি দর্শনাথীদের সুবিধার্থে মঠ সংলগ্ন দীঘিতে একটি ঘাটলা নির্মানের দাবি করেছেন।

বাংলাদেশের মধ্যে সুন্দর ও দর্শনীয় মঠগুলোর মধ্যে অন্যতম সরকার মঠের এসব সমস্যা সমাধানের জন্য দর্শনাথীরা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহোযোগিতা কামনা করেছেন। এ ব্যাপারে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ইতোমধ্যে মঠটি পরিদর্শন করা হয়েছে। ঐতিহাসিক এ মঠের সকল সমস্যা সমাধানের জন্য প্রত্নতত্ব অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.