× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

উৎকোচ দিতে না পারায় কর্মচারীকে চাকুরীচ্যুত করার অভিযোগ ইউএনও’র বিরুদ্ধে

প্রতিনিধি বদলগাছী (নওগাঁ)

০৬ আগস্ট ২০২২, ০২:২৭ এএম

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা পরিষদে দীর্ঘ ২৫ বছর যাবত কর্মরত এক মালীকে জোরপূর্বক চাকুরীচ্যুত করে ২ লক্ষ টাকা উৎকোচ দাবী করার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে। দাবীকৃত টাকা দিতে না পারায় ৭ মাস যাবত ওই কর্মচারীর বেতন ভাতাদিও বন্ধ রাখা হয়েছে। এবিষয়ে গত ৩ আগষ্ট  গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় সচিব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, মাননীয় মন্ত্রী পরিষদ সচিব মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ, মাননীয় মন্ত্রীর একান্ত সচিব ও অতিরিক্ত সচিব স্থানীয় সরকার বিভাগ ও বিভাগীয় কমিশনার রাজশাহী বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। এর আগে গত ২৮শে জুলাই নওগাঁর জেলা প্রশাসকে কছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগ করেও মেলেনি কোন প্রতিকার। চাকুরী পুনর্বহাল এবং বেতন ভাতাদি পরিশোধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এই ভুক্তভোগী।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর লিখিত অভিযোগ ও ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের (উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রকল্প-২)এর অধীনে নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলা পরিষদে এমএলএসএস পদে যোগদান করেন জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলার মালঞ্চ গ্রামের রফিকুল ইসলাম।

 ২০০৩ সালে প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে গেলে আমি আমার পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে থাকলে তৎকালীন উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং তৎকালীন ইউএনও আমার অসহায়ত্বের কথা বিবেচনা করিয়া স্থানীয় সরকার বিভাগের নিয়োগ বিধি মোতাবেক মালী পদে নিয়োগ প্রদান করেন। চাকুরীর সুবাদে উপজেলা পরিষদের কোয়ার্টারে স্বপরিবারে থাকতেন তিনি। মালীর দায়িত্বের পাশাপাশি ইউএনও’র বাড়িতে খাবার সরবরাহ এবং বাড়ির অন্যান্য কাজগুলোও তাকে দিয়েই করানো হতো। সবকিছুই ঠিকঠাকভাবেই হয়ে আসছিল। এরই মধ্যে গত বছর ১ এপ্রিল উপজেলায় নতুন ইউএনও হিসেবে যোগদান করেন আলপনা ইয়াসমিন। যোগদানের পর মালীকে বাড়তি কাজের চাপে ফেলতে শুরু করেন। টানা তিন মাস নৈশ্য প্রহরী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য করা হয় মালী রফিকুল ইসলামকে। চাপ সামলেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল সে।  তারপর তাকে দিয়ে ইউএনওর বাসায় রান্নার কাজও করানো হতো। তারপরও ভালই চলছিলো কফিকুলের জীবন। হঠাৎ সমস্যা শুরু হয় ২৭ জানুয়ারী থেকে।  রাত ৮টার দিকে মালিকে বাংলোতে ডাকেন ইউএনও। বাংলোতে মালি পৌঁছানোর পর তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং চাকুরীচ্যুত করার হুমকি প্রদান করেন ইউএনও। এক পর্যায়ে মালীর চাকুরী পুনর্বহালে ২ লক্ষ টাকা দাবী করা হয়। পাশাপাশি মালীকে কোয়ার্টার থেকে বের হয়ে না গেলে মাদক মামলায় ফাঁসানোর হুমকিও দেন ইউএনও। এরপরেও মালী কোয়ার্টার থেকে বের না হওয়ায় দীর্ঘ ৭ মাস যাবত তার বেতন ভাতাদি বন্ধ করে দেয়া হয়। এবিষয়ে প্রতিকার চেয়ে গত ২৮ জুলাই নওগাঁর জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মালী রফিকুল ইসলাম।

ভুক্তভোগী মালী রফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমান ইউএনও গত বছর যোগদানের পর থেকেই আমার সাথে প্রতিনিয়ত অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও দুর্বব্যহার শুরু করেন। কখনোই এসবের প্রতিবাদ করিনি। তারপরেও হুট করে উনি আমার বেতন দেয়া বন্ধ করে দেন। ২ লক্ষ টাকা দিয়ে চাকুরীতে আবারো যোগদান করতে বলেন। আমি গরীব মানুষ। এতো টাকা কোথা থেকে দিবো। তাই তাকে অনেক অনুরোধ করেছিলাম। তিনি আমার কোন কথা না শুনেই আমাকে কোয়ার্টার থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দিচ্ছেন। গত ৭ মাস যাবত আমার বেতন বন্ধ করে দিয়েছেন। বেতন না পেয়ে বৃদ্ধ মা, স্ত্রী, সন্তানসহ পরিবারের ৫জন সদস্য নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। নিজের কোন ভিটেমাটিও নেই। এ অবস্থায় কোয়ার্টার থেকে বের করে দিলে আমরা কোথায় যাবো।

তিনি আরো বলেন, আমার দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বড় মেয়েটি চলতি বছর এসএসসি পরিক্ষার্থী। সে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেনিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। আমার মেয়ের এসএসসি পরিক্ষা নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় রয়েছি। বর্তমানে অন্য জায়গায় আবাসস্থল নেওয়ার মতো আমার আর্থিক কোন সঙ্গতি নেই। আবাসস্থল ত্যাগ করলে তার লেখা-পড়ার চরম ক্ষতি হবে এবং তার জীবনটা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। তাই বর্তমানে আমি পরিবার পরিজন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

তাই উপায় না পেয়ে এর সুষ্ঠু বিচার চেয়ে গত ৩ আগষ্ট  গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় সচিব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, মাননীয় মন্ত্রী পরিষদ সচিব মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ, মাননীয় মন্ত্রীর একান্ত সচিব ও অতিরিক্ত সচিব স্থানীয় সরকার বিভাগ ও বিভাগীয় কমিশনার রাজশাহী বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি। এবং গত ২৮শে জুলাই ডিসি স্যারকেও একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। চাকুরী পুনর্বহাল এবং বেতন ভাতাদি পরিশোধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমিন বলেন, মালী হিসেবে এখানে কে কাজ করবে সেটা উপজেলা পরিষদের সিদ্ধান্ত। পরিষদের মাসিক সভায় সিদ্ধান্তে অন্য একজনকে মালী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে অফিসে এসে কথা বলতে বলেন তিনি।

বদলগাছী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল আলম খাঁন বলেন, মালী রফিকুল ইসলাম ভদ্র একটি ছেলে, অনেক আগে থেকে এখানে চাকুরী করেন। এখন পর্যন্ত তার খারাপ কোনও দিক আমার নজরে আসেনি। ইউএনও কোনভাবেই মালী হিসেবে রফিকুলকে রাখতে চাচ্ছেন না। ওই মালীকে বহাল রাখতে আমি নিজেই ইউএনও, ডিসি স্যার ও মাননীয় সংসদ সদস্যকেও অনেক অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু এতে কোন লাভ হয়নি। ইউএনও’র একটাই কথা “এখানে ঐ মালী থাকবে, নয় আমি থাকবো”। তাই বাধ্য হয়ে মাসিক সভায় অন্য একজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মালীর প্রাপ্য টাকাসহ সম্মানী বাবদ অন্তত ২ লক্ষ টাকা দেওয়ার দাবী জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, ইউএনও আলপনা ইয়াসমিন এখানে যোগদানের পর থেকেই বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। তিনি কারো কনো কথাই শোনেন না। নিজের খেয়াল খুশি মতো চলেন। মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে আসছেন।


Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.