সেতু নির্মিত হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে, সেখানের অপুর্ব দৃশ্য পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বহুল প্রচলিত হবে। পর্যটনশিল্পের বিকাশে স্থানীয়দের কর্মসংস্থান হবে বলে মনে করা হচ্ছিলো। কিন্তু শেই আশা আর আলোর মুখ দেখছে না! বলছিলাম মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ‘রাজাপুর সেতু’র কথা।
উপজেলার কুলাউড়া-পৃথিমপাশা-হাজীপুর- শরীফপুর সড়কে মনু নদের ওপর ‘রাজাপুর সেতু’ নির্মাণ কাজ বছরখানেক অগে সম্পন্ন হলেও এই সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়ক এখনো হয়নি। এর জন্যে উঁচু সেতুর দুই পাশে বাঁশের মই ব্যবহার করে লোকজন ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন।
এলাকাবাসী ও সওজ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের রাজাপুর এলাকায় মনু নদের পাড়ে একটি খেয়াঘাট ছিল। নদের বিপরীত পাশে হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রাম রয়েছে । এসব গ্রামের লোকজন রাজাপুরের খেয়াঘাট দিয়ে প্রতি দিন নৌকায় করে নদ পার হয়ে পৃথিমপাশাসহ উপজেলা সদরে বিভিন্ন কাজে আসা-যাওয়া করতেন। এতে অনেক দিন ধরে তাঁরা দুর্ভোগে ছিলেন।
এই জায়গায় একটা সেতু হবে এটি নিয়ে সবার আগ্রহ এবং স্বপ্নের কমতি ছিলোনা । এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সওজ অধিদপ্তর সেখানে মনু নদের ওপর সেতু নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের দিকে ২৩২ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার টাইপের ‘রাজাপুর সেতুর’ নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রায় ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে। উন্নয়নের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন এলাকাবাসীরা।
জানা যায়, নদীটি দ্বিখণ্ডিত করে রেখেছিল দক্ষিণ কুলাউড়া ও উত্তর কমলগঞ্জ উপজেলাকে। ১৯৯৬ সালে তৎকালীন সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ কুলাউড়া-পৃথিমপাশা-হাজীপুর-শরীফপুর সড়ক প্রশস্তকরণসহ রাজাপুর সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন। ২০০১ সালে সরকার পরিবর্তন হলে তা বন্ধ হয়ে যায়।
পরে ২০১৮ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)-এর সভায় ৯৯ কোটি ১৭ লাখ ব্যয়ে রাজাপুর সেতু প্রকল্পের অনুমোদন দেয় সরকার। ওই বছরের নভেম্বরে সেতুটির নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও করেন জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ ও বর্তমান বন ও পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এমপি ও মৌলভীবাজার-২ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল মতিন।
‘জন্মভূমি-ওয়াহিদুজ্জামান-নির্মিতি’ নামের সিলেটের যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ কাজ পায়। ২০২১ সালের জুন মাসের দিকে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়ে যায়। পরে সেতুর দুই পাশে সাড়ে সাত কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রায় ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘জামিল-ইকবাল’ নামের সিলেটের আরেকটি যৌথ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এ কাজ পায়। ২০২০ সালে কাজ শুরুর জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। চলতি বছরের (২০২২ সাল) এপ্রিল মাসের মধ্যে এ কাজ সম্পন্রের কথা ছিল। কিন্তু, ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ না হওয়ায় নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা যায়নি। যার কারনে এখন কোটি টাকার সেতুর উপর যেতে হলে শত টাকার বাশের তৈরী সিড়ির প্রয়োজন পড়ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকাবাসীর স্বপ্নের সেতুটি রাস্তা থেকে বেশ উঁচুতে রয়েছে । এটির পশ্চিম পাশে প্রায় ৩০ ফুট এবং পূর্ব পাশে প্রায় ৫০ ফুট উঁচু বাঁশের মই দিয়ে উঠানামার জন্যে ব্যবস্থা করা হয়েছে। । সব বয়সের মানুষ ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতুতে ওঠা-নামা করছেন। এতে যে কোন সময় দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আছে।
এলাকার ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের লোকজন প্রতি দিন জীবন নির্বাহের তাগিদে সেতু পার হয়ে পৃথিমপাশা ইউনিয়ন এবং উপজেলা সদরে যাতায়াত করেন। হাজারো মানুষের স্বপ্নের সেতুর নির্মান কাজ শতভাগ শেষ না হওয়ায় উন্নয়নের পথ খুলছে না। পরে পারাপারের সুবিধার্থে এলাকাবাসী সেতুর দুই পাশে মই স্থাপন করেন।
সড়ক বিভাগ মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার দায়িত্বে থাকা উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী পার্থ দৈনিক সংবাদ সারাবেলাকে জানান, ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতার কারণে সংযোগ সড়কের কাজ শুরু করা যাচ্ছেনা। এটি সম্পূর্ণভাবে শেষ করতে আরও এক থেকে দেড় বছর সময় লাগবে।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানান, ভূমি অধিগ্রহণের ফাইল মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঠানো হয়েছে। অনুমোদিত ফাইল পেলে দ্রুতই অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।