× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

পানি থাকলেই যেন সুখ থাকে জেলেদের ঘরে

আবুল হাসনাত অপু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

১৮ আগস্ট ২০২২, ০৯:২৫ এএম

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় চারদিকে শুধু পানি থৈ থৈ করছে। নদী খাল বিল জলাশয়ে পানি থাকায় ব্যাস্ত সময় পাড় করছে প্রান্তিক জেলেরা। প্রতিদিনের সময় কাটছে মাছ ধরা, বিক্রি ও জাল মেরামত নিয়ে। পানির মৌসুম যেন অভাব-অনটনকে পিছনে ফেলে জেলেদের ঘরে আনে আনন্দের সুবাতাস। 

বৃহস্পতিবার সকালে আখাউড়া উপজেলার ভবানিপুর, টেংরাপাড়া, দূর্গাপুর, আমোদাবাদ, ধরখারসহ বেশ কয়েকটি জেলে পল্লীতে দেখা যায় এমন চিত্র। প্রায় দু’শতাধিক জেলে নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে জাল দিয়ে শিকার করছে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। আর সেই মাছগুলোর মধ্যে রয়েছে টেংরা, শিং, পুটি, সরপুঁটি, বইচা, পাঙ্গাস, চিতলসহ দেশীয় প্রজাতির নানা জাতের মাছ। ভাগ্য যদি সায় দেয় কখনোবা নদীতে থাকা কার্প, কাতলা মাছও জেলেদের জালে ধরা দেয়। 

জেলেদের সূত্র জানা যায়, নদী ও খাল বিলে পানি থাকে ৪ মাস। আর এই ৪ মাসে আখাউড়া উপজেলার এই নদীর পাড়ের জেলেরা মাছ বিক্রি করে প্রতিদিন গড়ে ২-৩ হাজার টাকা আয় করে। যেটি মাসের হিসেবে গিয়ে দাঁড়ায় ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। তবে যারা নদীতে ঘের দিয়ে মাছ শিকার করে তাদের প্রতিদিনের আয় ৫-৬ হাজার টাকার। যেটি এক মাসের আয় হিসেবে উঠে আসে দেড় লক্ষ টাকা। কিন্তু নদীতে বাঁশ জাল কাপড় দিয়ে ঘের দেয়ার কারণে নদী এখন মাছ শূন্য হয়ে পড়ছে। ঘেরের ভিতরেই আটকে পড়ে সকল মাছ। কেউবা আবার ঘেরের ভিতর মাছকে আকর্ষন করাতে দিয়ে থাকে খাবার। এতে দেশি জাতের মাছের স্বাদ নষ্ট হয়ে গিয়ে চাষ করা মাছের স্বাদে পরিণত হয়। 

আখাউড়া উপজেলার বনগজ গ্রামের বাজারে দেখা যায়, বাজারের পশ্চিম পাশে তিতাস নদী। আর সেই নদী থেকে জেলেরা মাছ ধরে বাজারের পাড়ে এসে নৌকা ভিড়াচ্ছে। পরে নৌকা থেকে মাছ তুলে বোল বা ঝুরিতে তুলে দেশিয় জাতের মাছ গুলো বিক্রি করছে। প্রতিটি বোলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মিশিয়ে ২০০-৩০০ টাকায় বিক্রি করছে জেলেরা। আর সেই বাহারি মাছগুলো নিতে ক্রেতার ইচ্ছের যেন কমতি নেই। ক্রেতা বিক্রেতাদের দর-দামে যেন বনগজ গ্রামের বাজারটি মুখরিত।  

ক্রেতা মোহাম্মদ আলী বলেন, দেশিয় জাতের মাছ খেতে বেশ মজা। এই মাছের প্রতি সকলেরই আকর্ষণ আছে। আমি ৭০০ টাকা দিয়ে পুঁটি ও ট্যাংরা মাছ কিনেছি। তবে পূর্বের তুলনায় এখন দেশি জাতের মাছগুলোর দাম চড়া। 

বৃদ্ধ ক্রেতা মোহন লাল জানান, মেয়ের জামাই আসবে ঢাকা থেকে। সে আবার দেশি জাতের মাছ খুব পছন্দ করে। তাই সরপুঁটি ট্যাংরা চিংড়ি চিতল ও কাতলা মাছে মিশ্রিত একটি ঝুরি কিনে নিলাম ২ হাজার টাকায়। 

আখাউড়া উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলার ১০২.১১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনে মোট গ্রাম রয়েছে ১৩০টি। এরমধ্যে ছোট বড় পুকুরসহ মৎস্য প্রকল্প (প্রজেক্ট) রয়েছে ১ হাজার ৬৩২টি, বিল রয়েছে ১৩টি ও নদী রয়েছে ৩টি। তাছাড়া কমার্শিয়াল পুকুর রয়েছে ১টি। এ উপজেলার মধ্যে কাদমা বিল, বোয়াইল্লা বিল, কুড়ি বাজার বিল অতি প্রাচীণ বিল হিসাবে পরিচিত। ওইসব বিলসহ পুকুর খাল বিল নদী নালা ও জলাশয়ে বর্তমানে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

জেলে মাখন দাস বলেন, গত ৩০ বছর ধরে তিনি মাছ বিক্রির পেশার সাথে জড়িত রছেন। বর্ষাকালের নতুন পানি আসায় গত প্রায় ১ মাস যাবত তিনি জাল দিয়ে মাছ ধরছেন। চারদিকে পানি থাকায় সকাল বিকাল জাল দিয়ে দেশীয় জাতের মাছ ধরে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছেন। এ কাজে তার দুই ছেলে সহযোগিতা করছেন। জাল দিয়ে মাছ ধরে তার দৈনিক ২ হাজার টাকার উপর মাছ বিক্রি হয় বলে জানান তিনি।

জেলে কার্তিক দাস বলেন, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৪-৫ লক্ষ টাকার মাছ ধরছেন। ওই সময় তার পরিবারে কোন অভাব অনটন থাকে না। পানি চলে গেলে তার পরিবারকে অনেকটাই বিপাকে পড়তে হয়। পানি থাকলেই যেন ঘরে সুখ থাকে।  

স্বপন দাস বলেন, টাকার অভাবে অন্য কোন পেশায় যাওয়া যায়নি। এক প্রকার বাধ্য হয়ে বাপ দাদার পেশাকে আঁকড়ে ধরে আছি। কিন্তু পানির অভাবে দীর্ঘ দিন ধরে মাছ ধরতে না পারায় খুবই কষ্টে দিন পার করেছি। এখন সেই কষ্ট আর নেই। দৈনিক জাল নিয়ে বের হলে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকার মাছ বিক্রি করা যায় বলে জানান তিনি।

প্রদীপ দাস বলেন, রাতে জাল দিয়ে মাছ ধরে সকালে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হয়। বাজারে সকালে মাছের ভালো চাহিদা রয়েছে। অনেক সময় লোকজন মাছ নৌকা থেকেই কিনে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, জাল দিয়ে মাছ ধরতে ৪ জন শ্রমিক লাগে। তাদের মজুরি দিয়ে দৈনিক ১২শ থেকে ১৫শ টাকা আয় হয়। তিনি জানান, বাপ দাদাকে দেখে তিনি মাছ শিকার কাজে জড়িয়ে পড়েছেন। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে মাছ ধরা এখন তার নেশা ও পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জলাশয়ে পানি থাকলে নিজের মতো করে জাল দিয়ে মাছ ধরছেন। আর না থাকলে চাষকৃত পুকুর প্রজেক্টে চুক্তিতে মাছ ধরে দিচ্ছেন। মাছ ধরা ও বিক্রি নিয়ে সব সময় ব্যস্ত থাকতে হয় বলে জানান।

আখাউড়া উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, এ উপজেলায় ১৪৩০ জন নিবন্ধিত মৎস্যজীবী রয়েছেন। এই মৎস্যজীবীদের মাঝে সরকারি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া, বড় নেট জাল ছাড়া নদী খাল জলাশয় থেকে ছোট নেট ও চট জাল দিয়ে পোনা মাছ না ধরতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি মোবাইল কোর্টও অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, পোনা মাছ সংরক্ষণ করা গেলে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এ জন্য সকলের সচেতন হওয়া প্রয়োজন।


Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.