× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

তালায় কম্পোস্ট সার উৎপাদনে খুলছে সম্ভাবনার দুয়ার

তালা(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি

০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৬:৩৪ এএম

তালায় রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসেবে ও তার ক্ষতিকারক দিক বিবেচনা করে নিরাপদ খাদ্য তৈরী করতে উন্নত মানের ভার্মি কম্পোস্ট ও ট্রাইকো কম্পোস্ট সার তৈরী করে লাভবান হচ্ছেন শিবপুর গ্রামের মোড়ল আব্দুল মালেক। ইতিমধ্য তিনি উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় সল্প পুজিঁতে এই দুই প্রকারের সার বাণিজ্যিক উৎপাদন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রয় করেছেন বলে জানা গিয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাযায়, রাসায়নিক সারের বিকল্প ও দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত মাটির উৎপাদনশীলতা রক্ষায় ভার্মি কম্পোস্ট ও ট্রাইকো কম্পোস্ট সারের উৎপাদন করে জীবিকা অর্জন করছেন উপজেলার প্রায় এক হাজার ২০০ খামারি। এতে করে রাসায়নিক সারের চাহিদা হ্রাস ও প্রাকৃতিক ভাবে সারের উৎপাদনের ফলে সল্প পুজিঁতে অধিক লাভবান হওয়ার আশা দেখছেন উপজেলা কৃষি অফিস। ভার্মি কম্পোস্ট ও ট্রাইকো কম্পোস্ট সার উৎপাদন এ যেন এক নতুন সম্ভাবনার দোড়ায়।  

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,তালা উপজেলার সদর ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের মৃত.শাহাদাৎ হোসেনের ছেলে মোড়ল আব্দুল মালেক ২০১২ সালে স্থানীয় একটি এনজিও,র অফেরতযোগ্য অর্থায়নে ভার্মি কম্পোস্ট সারের উৎপাদন শুরু করেন। তিনি প্রথমে ১৮ টি নান্ডা(সিমেন্টের তৈরী বড় পাত্র),গোবর(গরুর বিষ্ঠা) ও ১৮ কেজি কেঁচো দিয়ে উৎপাদন আরম্ভ করেন। বর্তমানে মোড়ল আব্দুল মালেকর কয়েক বিঘা জমিতে ২৫০ টি নান্ডা(সিমেন্টের তৈরী বড় পাত্র) ও ৫০ হাউজ রয়েছে। এর পাশাপাশি ২০২০ সালে উপজেলা কৃষি অফিসের অর্থায়নে ট্রাইকো কম্পোস্ট সারের উৎপাদন করেন। প্রথমে তিনি ১০টা নান্ডা((সিমেন্টের তৈরী বড় পাত্র) ও কম্পোস্ট তৈরীর  ট্রাইকোডারমা ছত্রাকের অণুবীজ দিয়ে উৎপাদনের যাত্রা আরম্ভ করেন।বর্তমানে তিনি ১৫ হাইজ এর মাধ্যমে ট্রাইকো কম্পোস্ট সার উৎপাদন করছেন। 

ভার্মি কম্পোস্ট তৈরী করতে: গোবর (গরুর বিষ্ঠা) সংগ্রহ করে পরিমাপ মতন কেঁচো এক মিটার লম্বা, এক মিটার চওড়া ও এক মিটার গভীরতা বিশিষ্ট পাত্রের মধ্য ছেড়ে দিতে হয়। এবং রক্ষিত পাত্রের উপর টিনের/খডড়ের চালা দিয়ে এক মাসের বাসী গোবর ঢেলে ভরে দিতে হবে। ১ মাসের বাসী গোবর খেয়ে কেঁচো মল ত্যাগ করে এবং এর সাথে কেঁচোর দেহ থেকে রাসায়নিক পদার্থ বের হয়ে সংমিশ্রণের মাধ্যমে সার তৈরী হয়। এ সার সব ধরণের ফসল ক্ষেতে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু সার তৈরি হওয়ার পর চৌবাচ্চা বা পাত্র থেকে সতর্কতার সাথে কম্পোস্ট তুলে চালুনি দিয়ে চালতে হয় এবং সার আলাদা করে কেঁচো গুলো পুনরায় কম্পোস্ট তৈরির কাজে ব্যবহার করতে হবে।

কেঁচো সার বাজারের চাহিদা অনুযায়ী/ নিজস্ব ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট সাইজের প্যাকেট/বস্তায় ভর্তি করে বাজার জাত করা যায়। 

ট্রাইকো কম্পোস্ট সার তৈরী: ট্রাইকো কম্পোস্ট হলো একটি বিশেষ জৈবসার যার মূল উপাদান ট্রাইকোডার্মা নামক এক ধরনের উপকারী ছত্রাক। গোবর, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা, সবজির উচ্ছিষ্টাংশ, কচুরিপানা, কাঠের গুঁড়া, ভুট্টা ভাঙা, চিটাগুড়, নিমপাতা, মেহগনি ফল এবং ট্রাইকোডার্মা ছত্রাকের অণুজীব (৩ী১০৭ ঈ.ঋ.ট) নির্দিষ্ট অনুপাতে একত্র মিশিয়ে তা বিশেষ উপায়ে হাউজে জাগ দিয়ে ৪০-৪৫ দিন রেখে পচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে কম্পোস্ট তৈরি করা হয় তাই ট্রাইকো কম্পোস্ট।

এই দুইটি সার রাসায়নিক সারের বিপরীতে ব্যবাহার করার ফলে, জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে সহ নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন সহায়ক এর পাশাপাশি কম্পোস্ট ব্যবহারে ফসলের অপুষ্টি দূর হয়, ফসলের গুণগতমান ভালো হওয়া এবং উদ্ভিদের রোগবালাই এর উপদ্রব কমায় বা দমনে সহয়তা করে ফলে পরিপূর্ণ, পুষ্ট ও সতেজ ফসল পাওয়া যায়। একথায় ভার্মি কম্পোস্ট সার ও ট্রাইকো কম্পোস্ট সার জমিতে বুনন করলে মাটির উর্বরতা ও কৃষকের আর্থিক সাশ্রয় হয় এবং মাটিতে অবাঞ্ছিত অজৈব পদার্থকে উদ্ভিদের খাদ্যে পরিণত করতে সহায়তা করে। 

খামারী মোড়ল আব্দুল মালেক বলেন, স্থানীয় এনজিও ও উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় আমার এই ভার্মি কম্পোস্ট সার ও ট্রাইকো কম্পোস্ট সার উৎপাদনের ফলে নিজেরদের সচ্ছলতার পাশাপাশি এলাকার অনেক বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সৃষ্ঠি হয়ছে। এই সার উৎপাদন করার লভ্যাংশ দিয়ে চুই ঝালের চাষ আরম্ভ করেছি।

বর্তমানে এই খামারে ৫ লক্ষ টাকা পুজিঁর উপরে প্রতি মাসে ভার্মি কম্পোস্ট সার ১২-১৮ টন ও ট্রাইকো কম্পোস্ট ৬-৮ টন উৎপাদন করছে। প্রতিকেজি ভার্মি কম্পোস্ট ১০ টাকা কেজি দরে ও  ট্রাইকো কম্পোস্ট ১২-২০ টাকা কেজি দরে বিক্রয় করছি। এই দুটি সার পরিবেশ বান্ধব ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে সহায়ক হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় উপজেলার অনেকে সার উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছেন। এক কথায় সার উৎপাদনের ফলে আর্থিক ভাবে এক সম্ভাবনার দুয়ায় উন্মেচন হওয়ার উপক্রম হয়েছে।  

আব্দুল মালেক আরও বলেন,দুই প্রকার সার এলাকার চাহিদা মিটিয়ে অনত্র বিক্রয় করতে সক্ষম হয়েছি।কিন্তু বাজারজাত করার সঠিক প্রক্রিয়া না থাকায় অনেক সময় বিড়ম্বনার স্বীকার হতে হয়। তাই সরকার যদি সার গুলো বাজারজাত করার সঠিক ব্যবস্থা করেন তাহলে খামারীরা উপকৃত হতাম। 

এই বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হাজিরা খাতুন জানান, দেশে খাদ্য স্বয়ং সম্পুর্ণতা অর্জন করলেও নিরাপদ খাদ্যর ঘাটতি রয়েছে অনেকটা।যত্রতত্র ভাবে রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে নানান জটিলতায় ভুগতেছি।এরই উদ্দেশ্যে ভার্মি কম্পোস্ট ও ট্রাইকো কম্পোস্ট ব্যবহার করে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করার চেষ্টা করছি।তারই ধারাবাহিকতায় এনএটিপি প্রকল্পের আওতায় শিবপুর গ্রামের মোড়ল মালেক একটি চাহিদা পত্র দাখিল করেন। তার চাহিদা পত্রের পঞ্চাশ ভাগ টাকা প্রকল্প হতে প্রদান করা হয় ট্রাইকো কম্পোস্ট উৎপাদন করার জন্য। এছাড়া এই প্রকল্প প্রদানের আগ হতে মালেক সাহেব ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন করে আসছিলেন।তার দেখা দেখে উপজেলা প্রায় ২শত খামারি ইতিমধ্য ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন শুরু করেছেন।যেহেতু মোড়ল আব্দুল মালেক সাহেব অনেক বছর যাবত এই সার উৎপাদন করছেন তাই তার সফলতা লাভ করা স্বাভাবিক। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে মোড়ল মালেক সহ সকল খামারিদের এই সার উৎপাদনে সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান করে আসছেন।  


Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.