× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

বিলুপ্তির পথে ক্ষেতলালের মৃৎশিল্প

ক্ষেতলাল (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি

০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০২:৩৪ এএম

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মৃৎশিল্প এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। এক সময় গ্রাম বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে আলোর ব্যবস্থা, রান্না-বান্না, খাওয়া-দাওয়া ও অতিথি আপ্যায়নসহ প্রায় সব কাজেই ব্যবহার হতো মাটির তৈরি সৌখিন তৈজসপত্র। দামে সহজলভ্য ও স্বাস্থ্যকর হওয়ায় সব পরিবারেই ব্যবহার হতো মাটির তৈরী ওইসব পাত্র।

ক্ষেতলাল উপজেলার দক্ষিণ হাটশহর গ্রামে মৃৎ শিল্প পেশায় জড়িত আছে ৬০টি পরিবার। খড়, কাঠি আর মাটির সাথে যুদ্ধ করে কুমাররা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে ঝড়, বৃষ্টি ও প্রচন্ড খরা উপেক্ষা করে এই পেশাকে ধরে রেখেছে আজও। শীতকালে খেজুরের রস সংগ্রহে মাটির হাড়ি, বাহারি চিতল, পুলি ও ভাপা পিঠাসহ হরেক জাতের পিঠা তৈরীতে খোলা দধির পাতিল, টালি, ঘট, মুটকি, থালাবাসন ও অন্ধকার দূর করার মাটির বাতিসহ বিভিন্ন রকমের জিনিস তৈরি করতো গ্রাম বাংলার কুমাররা। ওইসব মাটির জিনিসপত্র অনেকে ভ্যান যোগে আবার কেউ কেউ মাথায় নিয়ে বিক্রি করতো। আর সেই উপার্জনেই চলতো কুমারদের পরিবার। 

প্লাস্টিক, মেলামাইন, স্টিল ও সিলভারের তৈরিকৃত সামগ্রীর  ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে হারিয়ে যেতে বসেছে ওই সব মাটির তৈরি সৌখিন জিনিসপত্র। তাই কুমাররা পরিবার পরিজনের মুখে খাবার তুলে দিতে জাতিগত পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় ধাবিত হচ্ছে। গ্রামীণ এলাকায় যখন বিদ্যুতের আলো পৌঁছেনি তখন ভরসা ছিল কেবলই মাটির তৈরি বাতি। তাতে কেরাসিন তেল দিয়ে চলতো রাতের সকল কাজ। সেই হাজার বছরের ঐতিহ্য ও  গ্রাম বাংলার সংস্কৃতি এখন হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম। 

সরেজমিনে উপজেলার বড়াইল ইউপির দক্ষিণ হাটশহর গ্রামের পাল পাড়ায় গেলে রাধেশ্বর চন্দ্র পাল (৬৫) বলেন, আমার কোন সম্পদ নেই। এক ছেলে, ৩ মেয়ে। এদের মধ্যে এক মেয়ের মৃগী রোগ থাকায় স্বামীর সংসার হয়নি। বর্তমানে আমার বাড়ীতেই আছে। গরীব মানুষ বলে চিকিৎসা করতে পারিনা। সংসার চালাতে খুব কষ্ট হয়। অর্ধহারে ও অনাহারে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবনযাপন করতে হয়। আবার পুজি না থাকায় এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যাওয়া সম্ভব হয়না। 

একই গ্রামের মিলনা রানী (৩৬) ও মনোরঞ্জন পাল (৭০) এর সাথে কথা হলে তারা বলেন, এক সময় বিনামূল্যে মাটি পাওয়া যেত। এখন তা পাওয়া যায়না। গত দু’বছর পূর্বেও প্রতি গাড়ি মাটির দাম যেখানে ছিল মাত্র ৪০০ টাকা। এখন সেই মাটিই ১ হাজার ২০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। কাঁচামাল গুলো পোঁড়াতে কাঠ ও খড়ের দাম বেড়েছে কয়েকগুন। বাজারে সব কিছুর দাম বাড়লেও শুধু মাটির তৈরি জিনিসপত্রের দাম বাড়েনি। 

৬০ বছর বয়সী বিধবা কানন রানী বলেন, ১২ বছর বয়স হতে এ পেশায় জড়িত আছি। স্বামী মারা যাওয়ায় ছেলের সংসারে আছি। ছেলেদেরকে এখনো এ পেশায় সাহায্য করে আসছি। মাটি সংগ্রহ করে কোন জিনিস বানাতে খুব কষ্ট করতে হয়। একদিনে কোন কিছুই তৈরি করা যায়না, সময় নিয়ে বানাতে হয় এবং সেগুলি শুকিয়ে পোড়ানো হয়। আগের মতো এখন আর মাটির জিনিসের চাহিদাও নেই তেমন। 

সরকারি সহযোগিতা ও বাজারে মাটির তৈরী জিনিসের চাহিদা থাকলে হাজার বছরের ঐতিহ্য হিসেবে পেশাটি টিকে থাকতে পারবে। নতুবা কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাবে ওইসব সৌখিন ও স্বাস্থ্যকর মৃত শিল্প।

জয়পুরহাট জেলার উপ-ব্যবস্থাপক লিটন চন্দ্র ঘোষ বলেন, মৃৎ শিল্পের কোন অফিস জয়পুরহাটে নেই। তবে মৃৎ শিল্পের সাথে জড়িত কেউ প্রশিক্ষণ ও কারো কোন আর্থিক সহযোগিতা লাগলে বিসিক এর পক্ষ হতে করা হবে। 

এ ছাড়া তিনি বলেন, প্রতিযোগিতামুলক বাজারে মৃৎ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে মাটির তৈরি ওইসব জিনিসের নতুন নতুন ডিজাইন তৈরি করে বাজারজাত করতে হবে। তাহলে অন্যসব শিল্পের সাথে প্রতিযোগিতা করে বাজারে টিকে থাকবে।




Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.