পিরোজপুর জেলা বিএনপির সদ্য ঘোষিত ৪১ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটিতে কৃষক দল নেতা গাজী সালাহউদ্দিন হত্যা মামলার প্রধান আসামিকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে। গত রোববার দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কমিটি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ রিয়াজ উদ্দিন রানা ও সদস্য সচিব গাজী ওয়াহিদুজ্জামান লাভলু গাজী জেলা কৃষক দলের সাবেক সভাপতি গাজী সালাহউদ্দিন হত্যা মামলা আসামি। হত্যা মামলার আসামিদের জেলা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ায় জ্যেষ্ঠ নেতারা ও নিহতের পরিবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
নিহত গাজী সালাহউদ্দিনের ভাই গাজী গিয়াসউদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ কেমন দল ? বিএনপির রাজনীতি করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে আমার ভাই খুন হল। আর খুনিদের দলের বড় পদ দিয়ে পুরস্কৃত করা হলো। আমরা কার কাছে এ কষ্টের কথা বলব। শুধু আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম, এ দল যেন আর কোন দিন আর ক্ষমতায় না আসে।
দলী সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ এপ্রিল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর পিরোজপুর জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে দিয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেন। আলমগীর হোসেনকে আহবায়ক, গাজী ওয়াহিদুজ্জামান সদস্য সচিব ও আবুল কালাম আকনকে সদস্য করা হয়। গত রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জেলা বিএনপির ৪১ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। ওই কমিটিতে একমাত্র যুগ্ম আহবায়ক করা হয়েছে কৃষক দলের জেলা সভাপতি গাজী সালাহউদ্দিন হত্যা মামলা প্রধান আসামি শেখ রিয়াজ উদ্দিন রানাকে। পূর্বে ঘোষিত সদস্য সচিব গাজী ওয়াহিদুজ্জামান ওই হত্যা মামলার ২ নম্বর আসামি। ২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর কৃষক দলের জেলা শাখার তৎকালীন সভাপতি গাজী সালাহউদ্দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মরা যান। ৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে পিরোজপুর শহরের গোপাল কৃষ্ণ টাউন ক্লাবের সামনে শেখ রিয়াজ উদ্দিনের নেতৃত্বে গাজী সালাহউদ্দিনের ওপর হামলা করা হয়। গাজী সালাহউদ্দিনের মৃত্যুর পর তাঁর ভাই গাজী গিয়াসউদ্দিন বাদী হয়ে শেখ রিয়াজ উদ্দিনকে প্রধান আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলাটি আদালতে বিচারাধিন রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিটির তিন জন সদস্য বলেন, সম্প্রতি দলীয় কর্মসূচিগুলোতে শেখ রিয়াজ উদ্দিনকে অংশ নিতে দেখা যায়নি। দলের ত্যাগী নেতা গাজী সালাহউদ্দিন হত্যায় প্রত্যক্ষ জড়িত এবং দলীয় কর্মকান্ডে নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিকে জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক করায় আমরা বিস্মিত ও ব্যথিত। দলীয় কর্মসূচিতে সক্রিয় দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বাদ দিয়ে বিলুপ্ত কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদককে জেলা কমিটির একমাত্র যুগ্মআহ্বায়কের পদ দেওয়ায় আমরা অবাক হয়েছি।
তবে অভিযোগ প্রসঙ্গে শেখ রিয়াজ উদ্দিন ও গাজী ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, রাজনৈতিক কারণে তাদের হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছিল।
সদ্য ঘোষিত কমিটির সদস্য ও বিলুপ্ত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুল ইসলাম বলেন, আহ্বায়ক কমিটিতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা মানা হয়নি। কমিটিতে অন্তত ১০ জন রয়েছেন যাঁরা ঢাকায় থাকেন। অঙ্গসংগঠনের পাঁচ জনকে রাখা হয়েছে। কিন্তু কমিটিতে এদের রাখার নির্দেশনা ছিল না। ঢাকায় ব্যবসা করা ব্যক্তিদের দিয়ে তো পিরোজপুরে আন্দোলন সংগ্রাম হবে না।
জেলা বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমি কমিটি নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চাই না । যে অবস্থা চলছে তাতে রাজনীতি ছেড়ে দিতে হবে।
পিরোজপুর জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার এম সরোয়ার হোসেন বলেন, যোগ্য ও অভিজ্ঞ লোকদের পদ না দিয়ে টাকার বিনিময়ে কিছু চাটুকার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আমি মনে করি। বরিশাল বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক দলের তিন জনের মধ্যে দুই নেতার বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে পদ বানিজ্যর অভিযোগ উঠেছে।
পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন বলেন, কমিটি দেওয়ার এখতিয়ার কেন্দ্রের । এখানে আমাদের কিছু করার নেই।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh