রাজশাহীতে সেপ্টেম্বর মাসে ১৭ নারী শিশু বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হয়েছে বলে জানিয়েছে উন্নয়ন সংস্থা লেডিস অর্গানাইজেশন ফর সোসাল ওয়েলফেয়ার (লফস)। শুক্রবার রাতে সংস্থাটির প্রোগ্রাম অফিসার চম্পা খাতুন এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানান।
লফস এর প্রতিবেদনে জানা যায়, যৌতুক ও পরকিয়ার কারণে অধিকাংশ নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। অনেক ক্ষেত্রে বিদেশি কিছু টিভি সিরিয়াল পরকিয়াকে উৎসাহিত করছে। এছাড়া পারিবারিক কলহ, অর্থনৈতিক ও প্রেম ঘটিত কারণে হত্যা-আত্মহত্যা ও অমানবিক নির্যাতনের মতো ঘটনা ঘটছে।
লফসের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, বাঘা উপজেলার আড়ানি পৌরসভার নুরনগর গ্রামের নজরুল ইসলামের ২য় স্ত্রী পাপিয়া বেগম (৩২) নিজ বাড়িতে তীরের সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা, বিয়ের দাবিতে তানোর উপজেলার চান্দুড়িয়া গ্রামের জুয়েল রানার বাসায় এসে অসুস্থ হয়ে পড়ে কলেজ ছাত্রী, পুঠিয়া পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে চাকরি ও বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিক বার ধর্ষণ করার অভিযোগ এক নারীর, পবা উপজেলায় যৌতুক দিতে না পারায় ৪ বছরের মেয়ের সামনেই স্ত্রী সোনিয়া খাতুনকে (২২) শ্বাসরোধ করে হত্যা করে স্বামী, নগরীতে রিয়া খাতুনকে (২১) শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ, নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানাধীন রায়পাড়া বালুরঘাট সংলগ্ন এলাকায় প্রেমিক সহ ৩জন মিলে প্রেমিকাকে (২২) ধর্ষণের চেষ্টা, বাগমারা উপজেলার সংরক্ষিত নারী আসনের এক প্রার্থী গণ ধর্ষণের শিকার।
এছাড়াও নগরীতে রিতা বেগম (৩৫) নামে এক গৃহবধূ নিজ শয়ন কক্ষে সিলিং ফ্যানের সাথে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা, মোহনপুর উপজেলার পোল্লাকুড়ি গ্রামের শিলা প্রামানিক (৩০) নামে এক নার্সকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যার চেষ্টা, পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর ইউনিয়নের রঘুরামপুর গ্রামে এক গৃহবধ কু প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা, গোদাগাড়ীতে কিশোর গ্যাং-য়ের সদস্যরা এস.এস.সি পরীক্ষার্থী এক যুবককে তুলে নিয়ে যেয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়ে নির্যাতন, গোদাগাড়ী উপজেলায় সামিউল আলম (১৬) নামে এক স্কুল ছাত্র নির্যাতনের শিকার, দুর্গাপুরে কলেজ ছাত্রের ধর্ষণের শিকার হয় এক স্কুল ছাত্রী, গোদাগাড়ীতে এক স্কুল শিক্ষক রফিকুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগ, পুঠিয়ায় এস.এস.সি পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার সময় মোহনা খাতুন নামে এক ছাত্রী কে অপহরণের চেষ্টা করা হয় বলে লফসের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
নারী নির্যাতনের বিষয়ে লফস-এর নির্বাহী পরিচালক শাহানাজ পারভীন বলেন, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যের বাইরেও অনেক ঘটনা ঘটে যা প্রকাশিত হয় না বা কোন তথ্য জানা যায় না এমন বাস্তবতায় রাজশাহীতে নারী ও শিশু নির্যাতনের প্রকাশিত তথ্য দিন দিন হতাশাজনক হচ্ছে। রাজশাহী অঞ্চলে নারী- শিশু নির্যাতনসহ সার্বিক ঘটনাগুলোর সুষ্ঠ তদন্ত ও দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন ।
তিনি বলেন, অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা না গেলে ক্রমশই অপরাধীরা উৎসাহিত হবে এবং অপরাধের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। লফস সকল নারী-শিশু নির্যাতন ঘটনাগুলোর সুষ্ঠ তদন্ত স্বাপেক্ষে অপরাধীর কঠোর শাস্তির দাবী জানান।
উন্নয়ন সংস্থা লেডিস অর্গানাইজেশন ফর সোসাল ওয়েলফেয়ার (লফস) রাজশাহী জেলায় দীর্ঘদিন যাবৎ নারী ও শিশুর উন্নয়নে কাজ করছে। মানবাধিকার সংগঠন হিসেবে লফস সংস্থার ডকুমেন্টেশন সেল থেকে রাজশাহীর প্রচারিত দৈনিক পত্রিকার সংবাদের ভিত্তিতে নিয়মিত নারী ও শিশু নির্যাতনের পরিস্থিতি প্রকাশ করে। লফস মনে করে অত্র অঞ্চলে নারী ও শিশু নির্যাতন পরিস্থিতি বিভিন্ন মাত্রায় অবনতি ঘটছে। যা মোটেও শুভ লক্ষণ নয়।