× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফার্মাসিস্ট

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

০১ অক্টোবর ২০২২, ০৫:১২ এএম

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফার্মাসিস্ট বিকাশ কুসুম বিশ্বাস দীর্ঘ ১৩ বছর কর্মস্থলে যান না। ডাক্তার না হয়েও নিজ বাড়িতেই চেম্বার খুলে নিয়মিত দেখেন রোগী, দেন ব্যবস্থাপত্রও। পদে ফার্মাসিস্ট হলেও উপজেলায় বেশ পরিচিতি অর্জন করেছেন ‘ডাক্তার বিকাশ বাবু’ হিসেবে। দফায় দফায় চেষ্টা করেও তাকে কর্মস্থলে ফেরানো সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। 

সরেজমিনে উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের গজারিয়া গ্রামের বসুন্ধরা পাড়ার পুরাতন ফুলছড়ি থানা সংলগ্ন বিকাশ কুসুম বিশ্বাসের বাড়িতে গিয়ে একটি চেম্বার দেখা যায়। চেম্বারে প্রবেশ করে দেখা যায় বেশ কয়েকজন রোগী। যাদের ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন ফার্মাসিস্ট বিকাশ কুসুম বিশ্বাস। দেখছেন রোগীর পরীক্ষার রিপোর্টও। এ সময় সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চাইলে বাড়ির ভিতরে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ নিজেকে আড়ালে রাখেন তিনি।

সেখানে চিকিৎসা নিতে আসা রাবেয়া বেগম (৪৫) নামে একজন রোগী বলেন, আমার জ্বর আর প্রচণ্ড গলা ব্যথা। তাই ডাক্তার বিকাশ স্যারের কাছে আসছি। তিনি প্রথমে রক্ত পরীক্ষা করতে দিলেন। তারপর পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে প্রেসক্রিপশন করে দিয়েছেন।

তিনি তো ডাক্তার নন, তিনি একজন ফার্মাসিস্ট। তার কাছে কেন চিকিৎসা নিচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে রাবেয়া বেগম বলেন, বিষযটি আমার জানা নেই, আমরা তাকে ডাক্তার বিকাশ বাবু বলেই জানি, তিনি ১০০ টাকা করে ভিজিট নেন। 

এ সময় নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যক্তি জানান, বিকাশ তার বাড়ির চেম্বারে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নিয়মিত রোগী দেখেন। তার বেশিরভাগ রোগী চরাঞ্চলের অশিক্ষিত-অসহায় মানুষগুলো। ওই মানুষগুলোর অজ্ঞতাকে পুঁজি করে বিকাশ ডাক্তার না হয়েও তাদের কাছে ডাক্তার বাবু সেজেছেন। পাশের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে সিন্ডিকেট তৈরি করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে তাদের থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। আশপাশের বেশিরভাগ এলাকার মানুষ বিকাশ বাবুকে ডাক্তার হিসেবেই চেনেন। মূলত তিনি ডাক্তার নন, তিনি একজন সরকারি হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট। 

নিজেকে আড়ালে রাখার বেশ কিছুক্ষণ পর বাড়ির ভেতর থেকে চেম্বারে আসেন বিকাশ কুসুম বিশ্বাস। তার কাছে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রোগী দেখে টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি। তবে, অফিস সময়ে রোগী দেখে কোনো ভিজিট নেন না বলে দাবি তার। 

ফার্মাসিস্ট হয়ে রোগীর ব্যবস্থাপত্র দিতে পারেন কি না? এমন প্রশ্নের কোনো সঠিক উত্তর দিতে পারেননি তিনি। তবে কর্তৃপক্ষের আদেশেই বাড়িতে রোগীর চিকিৎসা দেওয়ার কথা জানান বিকাশ। 

বিকাশের কথার সূত্র ধরে কর্তৃপক্ষের আদেশে বাড়িতে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার বিষিয়টি অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৯ সালের ১২ জুলাই তৎকলীন গাইবান্ধার সিভিল সার্জন ডা. মো. রকিবুদ্দৌলার স্বাক্ষরিত একটি পত্রে গাইবান্ধা-৫ আসনের সংসদ সদস্যের মৌখিক আদেশে ফার্মাসিস্ট বিকাশ কুসুমকে গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের একটি রুমে বসে ওই ইউনিয়ন ও চরাঞ্চলে ডাইরিয়াসহ অন্যান্য রোগীর চিকিৎসাসেবা প্রদানের নির্দেশ প্রদান করা হয়।

কিন্তু একজন ফার্মাসিস্টকে সরাসরি চিকিৎসাসেবার আদেশ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে জানান স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। শুধু তাই নয়, এর আইনগত বৈধতাও নেই। এছাড়া তাকে গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের একটি রুমে বসে চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলা হলেও দীর্ঘ ১৩ বছরের এক দিনও তিনি ইউনিয়ন পরিষদে দায়িত্ব পালন করেননি বলে জানান ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ বাবু লাল।

বাবু লাল বলেন, আমি এই ইউনিয়ন পরিষদে ২০০৬ সাল থেকে চাকরি করি। বিকাশ বাবুকে একদিনও পরিষদে চিকিৎসা দিতে দেখিনি। 

গজারিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খোরশেদ আলী খান খুশু বলেন, আমি গত সাত মাস হলো দায়িত্ব নিয়েছি। এর মধ্যে বিকাশ বাবু একদিনও আমার পরিষদে কোনো রোগী দেখেননি।

গাইবান্ধার সিভিল সার্জন ডা. আ. ম. আখতারুজ্জামান বলেন, এমন বিষয় এর আগে আমাকে জানানো হয়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. রফিকুজ্জামান বলেন, ওই চিঠির আদেশেই আমরা তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। তবে এর মধ্যে কয়েক দফায় ফার্মসিস্ট বিকাশ কুসুমকে হাসপাতালে এসে দায়িত্ব পালনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তিনি কোনো কর্ণপাত করেননি।

গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমান বলেন, ফার্মাসিস্টদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার সুযোগ নেই। ডাক্তার না হয়েও ব্যবস্থাপত্র দেওয়া এবং দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.