× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

রংপুরের কাউনিয়ায় দেড় বছর ধরে বন্ধ সেতুর নির্মাণকাজ

ভোগান্তিতে হাজারও মানুষ

কামরুল হাসান টিটু, রংপুর

০১ অক্টোবর ২০২২, ০৮:১২ এএম

রংপুরের কাউনিয়ায় সারাই নায়রা গ্রাম এলাকায় দুই কিলোমিটার পাকা সড়কসহ একটি সেতু এবং একটি কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এবং কাজের চেয়ে বেশি বিল উত্তোলন করে প্রায় দেড় বছরে ধরে নির্মাণকাজ বন্ধ রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে করে কাচু মহেষওয়ালা মোড়-নায়রা সড়কের আট গ্রামের মানুষ এখন ভোগান্তিতে পড়েছে।

উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রভাতী প্রকল্পের আওতায় এলজিইডির অধীনে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে উপজেলার সারাই ইউনিয়নের কাচু মহিষওয়ালার মোড় বাজার থেকে নায়রা প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত দুই কিলোমিটার পাকা সড়ক এবং মানাস খালের ওপর ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু ও একটি কালভার্ট নির্মাণে প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয় ২ কোটি ৪৮ লাখ ১৫ হাজার ১৯১ টাকা। তবে টেন্ডারে এভাব বা লেজ দিয়ে ২ কোটি ২১ লাখ ৯১ হাজার ৪৬৩ টাকা ব্যয়ে ২০২০ সালের ৩ এপ্রিলে নির্মাণকাজের কার্যাদেশ পায় কে.জেড.এইচ.সি (জেভি) নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

২০২১ সালের ৩ এপ্রিলে  নির্মাণকাজ শেষ করার কথা। কিন্তু গতবছর নির্মাণকাজের নির্ধারিত সময় শেষ হলেও সড়ক ও সেতুর নির্মাণ কাজ হয়েছে ৭০ শতাংশ। তবে বাস্তবে ৬০ শংতাশের কম নির্মাণ কাজ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে প্রায় দেড় বছর ধরে নির্মাণকাজ বন্ধ থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ রাস্তা ও সেতু নিয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

সুত্র আরো জানায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গতবছর ৭০ শতাংশ নির্মাণ কাজ সমাপ্ত দেখিয়ে প্রায় ১ কোটি ৫৮ লাখ ২৯ হাজার ৬০১ টাকা বিল তুলেছেন। বাকী কাজ সমাপ্ত হলে চুক্তি অনুযায়ী ৬৩ লাখ ৬১ হাজার ৮৬২ টাকা পাবেন। কিন্তু এখন নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত রয়েছে দুই কিলোমিটার পাকা সড়কের ৩২ মিলিমিটার কাপের্টি ও সীলকোড যার ব্যয় হবে প্রায় ৫০ লাখ এবং সড়ক ও সেতুর দুই প্রান্তে মাটি ভরাট, যার ব্যয় হবে প্রায় ২১ লাখ এবং একটি কালভার্ট যার ব্যয় হবে প্রায় ১০ লাখ। এছাড়া সড়কের এক অংশ ডাবলু বিএম, সেতুর এপ্রোস, রেলিং সহ আনুসাঙ্গিক নির্মাণ কাজে ব্যয় হবে প্রায় ১০ লাখ। সুত্রের হিসাব মতে নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত রয়েছে প্রায় ৯০ লাখ থেকে ৯৫ লাখ টাকার ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক উপ-সহকারি প্রকৌশলী জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সমাপ্ত নির্মাণ কাজের চেয়ে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ বেশি টাকা বিল তুলেছেন। বেশি বিল উত্তোলন করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখেছে।  

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সেতুর পশ্চিম প্রান্তে মদামুদন, বকুলতলা, নোয়াখালীটারী, কাচু মধ্যপাড়া গ্রাম সহ একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, একটি মাধ্যমিক, দুইটি প্রাথমিক, ও একটি মাদ্রাসা ও  বাজার, সামাজিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আর পুর্ব প্রান্তে ঢুলিপাড়া, রামচন্দ্রপুর, সটিপাড়া, মাছহাড়ী গ্রাম সহ একটি মাধ্যমিক, দুইটি প্রাথমিক, ও একটি মাদ্রাসা, হাট বাজার ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিদিন হাজারো মানুষ মহেষওয়াল বাজার মোড় থেকে নায়রা সড়ক দিয়ে চলাচল করেন। সেতু ও পাকা সড়কের নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় তাঁরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

সম্প্রতি সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সারাই নায়রা গ্রামে মানাস খালের উপর দাঁড়িয়ে আছে নির্মাণাধীন অসমাপ্ত সেতু। সেতুর রেলিং ও এপ্রোস এবং দুই প্রান্তে সংযোগ সড়ক নেই। এছাড়া দুই কিলোমিটার সড়কে ইট বালু মিশ্রিত ডাবলু বিএম করা হয়েছে। এরমধ্যে ডাবলু বিএম ছাড়াই সড়কের একাংশ পড়ে আছে। নির্মাণের কোনো সাইনবোর্ড দেখা যায়নি। স্থানীয় লোকজন সেতুর দুই প্রান্তে কাঠের সাঁকো তৈরী করে চলাচল করছে। সেখানে নায়রা গ্রামের সহিদুল হক বলেন, সেতু এবং সড়ক নির্মাণের কাজ প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। প্রকৗশলী বা ঠিকাদারের লোকজন আসে না।

নায়রা এলাকার বাসিন্দা মফিজুল ইসলাম জানান, মানাস খালের উপর একটি সেতু ছিল। ঝুকিপুর্ন হওয়ায় প্রায় দুই বছর আগে সেতুটি ভেঙ্গে নতুন সেতু নির্মাণ শুরু হয়। কিন্তু সেতুটি এবং সড়কের নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত থাকায় দীর্ঘদিন ধরে আট গ্রামের মানুষকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

পল্লিচিকিৎসক ইব্রাহিম মিয়া জানান, উপজেলা সদর সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং হাটবাজারের সঙ্গে সহজ যোগাযোগের মাধ্যম হচ্ছে এই সেতুটি। সংযোগ সড়ক না থাকায় গ্রামের লোকজন যাতায়াতের জন্য বিকল্প হিসাবে সেতুর দুই প্রান্তে কাঠের সাঁকো নির্মাণ করে। তবে সেটিও খুই নড়বড়ে। সাকো পারাপার হতে গিয়ে স্কুল গামী শিশুরা এবং পথচারীরা পড়ে গিয়ে আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।

ওই গ্রামের বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি সদস্য সামছুল হক বলেন, ঠিকাদার সেতু এবং সড়কের নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত রেখে চলে যায়। দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় এলাকার মানুষদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তিনি বলেন, বিশেষ করে রোগিদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে খুবই সমস্যা পড়তে হয় স্বজনদের।
বকুলতলা গ্রামের কৃষক রমজান আলী বলেন, সেতুর নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় ধানসহ উৎপাদিত অন্য কৃষিপণ্য সহজে জেলা সদরের বিভিন্ন বাজারে নিতে না পারায় আমাদের কম দামে ফড়িয়াদের কাছে বিক্রি করতে হচ্ছে।

সারাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম বলেন, তার ইউনিয়নের সেতু ও সড়ক নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় মানুষের দুর্ভোগ ও ভোগান্তির বিষয় উপজেলার মাসিক সম্বনয় সভায় এবং প্রকৌশলীকে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে ঠিকাদার এনামুল হক জানান, প্রভাতী প্রকল্পের আওতায় ডাবলু ৭৪ নাম্বার প্যাকেজের নির্মাণ কাজ নিয়ে তিনি খুবই সমস্যায় পড়েছেন। কাজটি তিনি করছেন না, তার লাইসেন্স নিয়ে শহরের এক ঠিকাদার টেন্ডারের মাধ্যমে কাজটি পায় এবং সেই ব্যক্তি নির্মাণ কাজ শুরু করে। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতায় ওই ঠিকাদার দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখেছে। কাজ শুরু করার জন্য উপজেলা প্রকৌশলী বেশ কয়েকবার চিঠিও দিয়েছে। লাইসেন্স আমার হওয়ার কারণে নিবাহী প্রকৌশলী ও উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় থেকে আমাকে চাপ দেওয়া হয়। অবশেষে তিনি গত মাসে প্যাকেজের অসমাপ্ত নির্মাণ কাজ করতে পারবে না মর্মে নিবাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে লিখিত ভাবে আবেদন করেছেন। তবে কাজের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা উত্তোলনের বিষয় তিনি কিছুই জানেন না।

এলজিইডি উপজেলা প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান জেমী বলেন, প্রভাতী প্রকল্পের ডাবলু ৭৪ নাম্বার প্যাকেজের নির্মাণ কাজ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় ঠিকাদারের বিরদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে পত্র পাঠানো হয়েছে। তবে ঠিকাদারকে বেশি বিল প্রদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কাজের চেয়ে অতিরিক্তি বিল প্রদানের কোন অপসন নেই। কারণ উপসহকারি প্রকৌশলী মাঠ পর্যায়ে সরজমিনে তদারকি করে যে পরিমান কাজ হয়েছে সেই মোতাবেক ঠিকাদারকে বিল প্রদান করা হয়।তবে মাঠ পর্যায়ে ৭০ শতাংশ নির্মাণ কাজ হয়েছে মর্মে তিনি দাবী করেন।  

এলজিইডি রংপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল হক বলেন, প্রভাতী প্রকল্পের ডাবলু ৭৪ নাম্বার প্যাকেজের অসমাপ্ত নির্মাণ কাজ শুরু করার জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বার বার তাগিদ দেওয়ার পরও কোন সারা পাওয়া যায়নি। কার্যাদেশ বাতিলের সুপারিশ করে ঢাকা অফিসে পত্র পাঠানো হয়েছে।

প্রভাতী প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) আনিসুল ওয়াহাব খাঁন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ডাবলু ৭৪ নাম্বার প্যাকেজের নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকার ওই অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ ও ভোগান্তির বিষয়টি তিনি জানেতে পেরেছেন। গত সপ্তাহে তিনি রংপুরে গিয়েছিলেন। কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে পরিদর্শণ করতে পারেন নাই। নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় উপজেলা প্রকৌশলী ও উপসহকারি প্রকৌশলীর উদাসিনতা আছে কিনা এবং কাজের চেয়ে ঠিকাদারকে বেশি বিল প্রদান করা হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে।  

প্রকল্পের পিডি আনিসুল ওয়াহাব খাঁন বলেন, ইতিমধ্যে ডাবলু ৭৪ নাম্বার প্যাকেজের কার্যাদেশ বাতিল করার জন্য প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রিটেন্ডার করে ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে প্যাকেজের অসমাপ্ত নির্মাণ কাজ করা হবে।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.