নির্মাণের ১০ বছর পার হলেও তালাবদ্ধ সত্যজিৎ রায়ের বাড়ির অতিথিশালাটি। সকল সুযোগ সুবিধা থাকা সত্ত্বেও একদিনের জন্যও ব্যাবহার হয়নি। ফলে সরকারের লাখ লাখ টাকা ব্যায়ে নির্মাণ হলেও কোন কাজেই আসছেনা। কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে অস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়িতে দূর থেকে আসা পর্যটকদের বিশ্রাম ও রাত যাপনের জন্য নির্মাণ করা অতিথিশালাটি। কিন্তু ১০ বছরেও পর্যটকেরা ব্যবহার করতে পারছেন না। এটিকে অন্য কোন কাজেও লাগানো হচ্ছেনা।
অস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ঐতিহাসিক পৈতৃক বাড়িটির দক্ষিণ দিকে রয়েছে সান বাঁধানো ঘাট, উত্তরে কয়েক একর জায়গা জুড়ে জরাজীর্ণ ভবন, ভূমি অফিস ও নির্মিত অতিথিশালা। বাড়ির ভিতরে রয়েছে কারুকার্য খচিত প্রাচীন দালান, বাগানবাড়ী, হাতীর পুকুর, খেলার মাঠ। সত্যজিৎ রায়ের পিতামহের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি এখন সরকারের রাজস্ব বিভাগের তত্তাবধানে রয়েছে।
জানা যায়, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের উদ্যোগে ২০১২ সালে ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি অতিথিশালাসহ বাড়ির সীমানা প্রাচীর ও রাস্তাঘাট সংস্কার করলেও অতিথিশালা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে ভবনটি বছরের পর বছর তালাবদ্ধ হয়ে পড়ে আছে। আসবাব ব্যবহার অনুপযোগী পড়ে আছে। অতিথিশালা লাগোয়া টিউবওয়েলের মাথা চুরি হয়ে গেছে। শৌচাগারগুলোও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে দূরদূরান্তের মানুষ বাড়িটি দেখতে এসে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত ।
এ অঞ্চলের মানুষ মনে প্রাণে এখনও ধরে রেখেছেন সেই বিশ্ববরেণ্য অস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ঐতিহাসিক পৈতৃক বাড়িটি। একদা এ বাড়িকে বলা হতো ‘পূর্ব বাংলার জোড়াসাঁকো’। প্রতি বছর বৈশাখ মাসের শেষ বুধবার এ ঐতিহাসিক বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয় বৈশাখী মেলা। প্রতিদিন বহু দর্শনার্থী, কবি সাহিত্যিক বাড়িটি পরিদর্শনে আসেন।
বর্তমানে এর বাহ্যিক অবকাঠামো খুবই নাজুক। খসে খসে পড়ছে পুরোনো ইট-পাথর-চুন দিয়ে গড়া প্রাসাদটির বিভিন্ন অংশ। কোনো কোনো অংশ তৈরি হয়েছে মরণ ফাঁদ। প্রাসাদটির দ্বিতল ভবনের ছাদ ভেঙ্গে বিশালকার গর্ত তৈরি হয়েছে। ঝুলে রয়েছে ছাদের উপর লোহার বড় বড় বিম। চারপাশে লতাপাতা আর বটবৃক্ষের আবর্তনে ঢাকা পড়েছে এর বাহ্যিক সৌন্দর্য। জরাজীর্ণ বাড়িটির পাশের দরবার গৃহটি বর্তমানে মসূয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
মসুয়া গ্রামের সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়িটি দিন দিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বহু জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। সত্যজিৎ রায় কোনদিন মসূয়া না আসলেও সবাই জানে এটি সত্যজিৎ রায়ের বাড়ি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার খানজাদা শাহরিয়ার বিন মান্নান জানান, আমি সত্যজিৎ রায়ের পৈতিৃক বাড়িটি পরিদর্শন করেছি। স্মৃতিবিজড়িত স্থানটি রক্ষা ও নির্মিত অতিথিশালাটি চালু করার বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলবো । নির্মিত অতিথিশালটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। স্বল্প খরচে অতিথিশালাটিতে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটকেরা ব্যবহার করতে পারে সেই লক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। আগামী মাসেই অতিথিশালটি জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে উদ্বোধন করা হবে।