খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার মেরুং ইউনিয়নের নুরুল কালাম ওরফে ভুট্টো নামের আওয়ামী লীগের স্থানীয় এক নেতা বড় একটি পাহাড় কাটার কাজ চলমান রেখেছেন। এরই মধ্যে উচ্চতায় পাহাড়টির ৮- ১০ ফুট কাটা শেষ হয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, এক সপ্তাহ ধরে রাতে পেলোডার দিয়ে পাহাড় কাটা হচ্ছে। বাইরের লোকজন গেলেই পেলোডার সরিয়ে ফেলা হয়। প্রতিবেদকের কাছে খামার বাড়ি করবেন জানিয়ে ২০শতক জায়গায় পাহাড় কেটেছেন বলে মুঠোফোনে সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন নুরুল কালাম ভুট্টো।
স্থানীয়রা জানান, নুরুল কালাম ভুট্টো উপজেলার মেরুং সওদাগর পাড়ার বাসিন্দা ও মেরুং ইউনিয়ন দক্ষিণ শাখা আওয়ামী লীগের সহ- সভাপতি। তিনি দিনের আলোতে পাহাড় কাটেন না, মধ্যে রাতে পেলোডার দিয়ে পাহাড়টি কাটছেন। ইতিমধ্যে পাহাড় কাটার কাজ প্রায় সম্পূর্ণ হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ছোট মেরুং- চোংড়াছড়ি সড়কের ১৬ নম্বর মসজিদ সংলগ্ন জায়গায় পাহাড় কেটে সাবাড় করে ফেলা হয়েছে। বিশাল পাহাড়টি কাটার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।আশপাশের লোকজন জানায়, পাকা সড়কের পাশের অংশটি কাটা বাকি। সেটি কাটা হবে সবার শেষে। প্রথম পর্যায়ে পাহাড়টির প্রায় ৮- ১০ ফুট উচ্চতার সমান করে কেটে ফেলা হয়েছে। এরপর দ্বিতীয়বারের মতো কাটা অংশটি আরো তিন- চার ফুট আবারও কাটা হচ্ছে। সপ্তাহখানেক ধরে পাকা সড়কের পাশে পাহাড় কাটা হলেও দেখার কেউ নেই।
পাহাড় কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে নুরুল কালাম ভুট্টো বলেন, ‘আমার মোট জায়গা প্রায় ৪ একর পুরোটাতেই ডেইরি ও পল্টি খামার রয়েছে। এর মধ্যে ২০ শতক জায়গায় পাহাড় কেটেছি। এখানে খামারের একটি ঘর তৈরি করা হবে। উঁচু নিচু হওয়ায় মাটি সমান করার জন্যই মূলত পাহাড়টি কেটেছি।’ এবিষয়ে প্রশাসনের অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মিথ্যা বলে লাভ নেই, প্রশাসনের কাউকেই জানাইনি। তাছাড়া এমন বড় পরিষরে তো পাহাড় কাঁটছি না।’
স্থানীয় বাসিন্দা মো. শামছু মিয়া (৫৫) জানান, ‘প্রায় এক সপ্তাহ থেকে পাহাড়টি কাটা হচ্ছে। তবে কখনো দিনের বেলায় কাটা হয় না, শুধু রাতে কাটা হয়। পেলোডারটিও দিনে দেখা যায় না।’ পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেই পেলোডার দিনে রাখা হয় ঘটনাস্থল থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে ছোট মেরুং দাখিল মাদরাসার পাশের একটি বাড়ির সামনে।
মেরুং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৬ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি লোকজনের মাধ্যমে শুনেছি। কয়েকদিন ধরে নির্বাচনী এলাকার বাহিরে অবস্থান করায় সরেজমিনে যাওয়া সম্ভব হয়নি। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী পাহাড় কাটা অপরাধ। পাহাড় কাটার ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক।’
উপজেলার মেরুং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদা বেগম লাকী বলেন, ‘সরেজমিনে গিয়ে দেখে যা বুঝলাম, নুরুল কালাম ভুট্টো তাঁর খামারের প্রয়োজনে ২০ শতক জায়গায় মাটি কেটেছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ আমরা বিষয়টি নিয়ে যাচাই- বাছাই করবো।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ কাশেম বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে পাহাড় কাটা বেআইনি। বিষয়টি প্রশাসন তদন্ত করে দেখবে বলে আশা করছি। আর আওয়ামী লীগ সব ধরনের বেআইনি কাজের বিরুদ্ধে।’
খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী জানান, ‘দীঘিনালায় এর আগেও কয়েকবার পাহাড় কাটার ঘটনা ঘটেছে। তখন আইনি প্রক্রিয়ায় পাহাড় কাটা বন্ধ ও মামলা করা হয়েছে। আর বর্তমান সরকার পরিবেশ সুরক্ষায় জিরো টলারেন্স নীতিতে অটল। তাই পাহাড় কাটা বন্ধ করতে এবং অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনতে প্রশাসন এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের তৎপর হওয়া দরকার। এ নিয়ে প্রয়োজনে পরিবেশ আদালতে যাওয়া হবে বলেও জানান প্রদীপ চৌধুরী।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আরাফাতুল আলম সংবাদ সারাবেলা প্রতিনিধিকে বলেন, ‘পাহাড় কাটা আইনত নিষেধ। ইতিমধ্যে ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেছি। কাউকে পাওয়া যায়নি তাই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। ঘটনাটি যাচাই- বাছাই করে দেখে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’