রোপা আমনের ক্ষেতে বিপজ্জনক পর্যায়ে বেড়েছে বানরের উপদ্রব। এরই মধ্যে কয়েক হেক্টর জমির আমন ধানের শিষ কেটে খেয়ে ফেলেছে বানর।কয়েক দিন পর পাকা ধান উঠবে ঘরে। ধান রক্ষায় দিশে হারা কৃষক দিনভর ক্ষেতে দিচ্ছে পাহাড়া। বানরে ধানের শিষ খাওয়ার ঘটনা ঘটেছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের দরগারচাল ও পোষাইদ গ্রামে।
সরেজমিনে গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রকৃতির প্রতিকুলতা উৎসে কয়েক দিন পরই ঘরে উঠবে পাকা ধান। এখন ধানে শিষ এসেছে। ধানের শিষ খেয়ে ফেলছে বানরে। ঘন বনাঞ্চলের ভেতর ক্ষেতের ধান খাইতে আসে বানরের দল। ধান গাছ ভেঙ্গে শিষ খেয়ে ব্যাপক ক্ষতি করছে।
এলাকাবাসী আরো জানান, গত পাঁচ বছর ধরে এলাকায় বানরের উপদ্রব বেরে গেছে। খাদ্য সংকটের কারণে বানরের দল কৃষকের ফল, মূল, সবজি ক্ষেতের ধান খেয়ে থাকে। বোরো আমন দু’মৌসূমেই ধানক্ষেতে বানরের আক্রমন ঘটে থাকে। খাবার দিলেও সন্দেহ বশত বানরের দল মানুষের দেয়া খাবার খায়না।
বন্যপ্রাণী মারা দন্ডনীয় অপরাধ তাই তারা বানর মারতেও পারেনা। বানরের উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে কৃষকরা পালা করে ধান ক্ষেতে পাহাড়া দিচ্ছে। পোষাইদ ও দরগারচালা গ্রাম ঘুরে দেখাযায় বনের পাশে মাচা করে লাঠি হাতে ক্ষেত পাহাড়া দিচ্ছেন কৃষক। বানরের উৎপাতে কৃষকরা এখন দিশে হারা।
স্থানীয়রা আরো জানায়, দুটি গ্রামে তিনটি বানরের দল রয়েছে। প্রতিটি দলে আছে ৭০ থেকে ১’শটি বানর। বুলদে বাইদ (নিচু ধানের জমি),ঠুডা বাইদ,হুয়াইদ বাইদ এলাকায় এদের বিচরণ এলাকা। এদের রয়েছে নিয়ম নীতি। এক দল বানর অন্য দলের এলাকায় প্রবেশ করেনা। দুপুরে ক্ষেতে বানর কম আসলেও সকাল বিকেল দু’বেলাই বেশি আসে। বানরের দল ক্ষেতে এসে ধানের গাছ পেচিয়ে মোড়া করে বসে । তারপর একএক করে ধানের শিষ ছিড়ে খায়।কষ্টের ফসলের শিষ কেটে ফেলায় মহাবিপাকে কৃষক।
দরগাচালা গ্রামের ষাটোর্ধ কৃষক মফিজ উদ্দিন বলেন,দেড় বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। প্রায়ই বানরের দল ধান খাইতে আসে। তার এলাকার কৃষকরাও বানরের উপদ্রবে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তারা নিজেদের জমির ফসল রক্ষার্থে নিজেরাই বাঁশের লাঠি হাতে নিয়ে পাহাড়ায় থাকেন।এখনই বানরের উৎপাত থেকে ফসল রক্ষা করতে না পারলে ধানের কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন মিলবে না বলে আশঙ্কা করছেন এ কৃষক।
একই গ্রামের কৃষক আলউদ্দিন বলেন,দুই বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। বানর তাড়াতে স্ত্রীকে নিয়ে পালা করে ক্ষেত পাহারা দেন। তারপরও ধান খেয়ে ফেলেছে। তিনি আরো বলেন, দুই গ্রামের প্রত্যেক কৃষক বানর তাড়াতে ক্ষেতে পাহাড়া দিচ্ছে। লাঠি হাতে দেখলেই বানর দৌড়ে পাশের বনে লুকায়। সুযোগ পেলেই ক্ষেতে ফিরে আসে।
সহকারী বন সংরক্ষক ও শ্রীপুরের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা রানা দেব জানান, ওই এলাকায় বানরে খবর পেয়েছেন। বনে এখন আমলকি সহ কিছু বনো ফল রয়েছে। এগুলো বানরের খাবার। খাদ্য সংকট দূরকরতে বনের ভেতর ফলের গাছ রোপন করা হয়েছে। বানর রক্ষার পদক্ষেপ নেয়ার সাথে গ্রামবাসীকেও সচেতন কারা হবে।
বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক নারগিস সুলতানা জানান, বিষয়টি তার জানা ছিলনা। স্থানীয় ভাবে খোঁজ খবর নিয়ে বানর সুরক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।