মাদারীপুরে বদ্ধ ঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় আগুনে পুড়ে মারা গেছে দুই শিশু সহোদর। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় এলাকাজুড়ে বইছে শোকের মাতম। ১৫ দিন আগে মাদক মামলায় বাবা জেলহাজতে থাকলেও ঘটনার পর পাওয়া যাচ্ছে না ওই দুই শিশুর মা ও নানীকে। বিষয়টি অস্বাভাবিক বলছে ফায়ার সার্ভিস।
সোমবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সদর উপজেলার উত্তর ঝিকরহাটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এটি হত্যাকান্ড নাকি নাশকতা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার উত্তর ঝিকরহাটি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা গোলাম মাওলা মাতুব্বরের মালিকানাধীন একতলা টিনসেট ঘরে আগুনের লেলিহান শিখা দেখতে পান এলাকাবাসী। পরে ঘরের তালা ভেঙ্গে পানি ছিটিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন তারা। খবর পেয়ে ছুটে আসেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। আগুন নিয়ন্ত্রণের আগেই পুড়ে মারা যায় এক বছরের শিশু। এ সময় গুরুতর আহত তিন বছর বসয়ী অপর ভাইকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বিষয়টিকে অস্বাভাবিক মনে করে প্রাথমিকভাবে আগুনের কারণ সম্পর্কে কিছুই জানাতে পারেনি পুলিশ।
এলাকাবাসী জানায়, পারিবারিক কলহের জেরে প্রায়ই ঝগড়া ও মারামারি করতো স্বামী-স্ত্রী। দুই মাস আগে একটি মামলায় মানিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারপর থেকে জেলহাজতে রয়েছে সে। সকালে ঘরের বাহির থেকে ছিটকানি দিয়ে ঘর আটকিয়ে অন্যত্র চলে যায় মা ও নানী। এর পরপরই ঘটে এই আগুনের ঘটনা।
স্থানীয় বাসিন্দা বাদল মাতুব্বর বলেন, খুটিনাটি বিষয়টি নিয়ে স্বামী-স্ত্রী দুইজনেই মারামারি করতো। এলাকার লোকজন বেশ কয়েকবার বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছে। মানিককে পুলিশে ধরে নেওয়ার পরে কিভাবে দুই শিশুর মৃত্যু হলো, কিছুই বুঝতে পারছি না। এই ঘটনার তদন্তপূর্বক দোষীদের বিচার দাবি করছি।
মাদারীপুর জেলা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. জাহিন আরেফিন জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসা শিশুর শরীরের ৯৫ ভাগই পুড়ে গেছে। নিয়ে আসার মাঝপথেই তার মৃত্যু হয়।
মাদারীপুর ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক নুর মোহাম্মদ জানান, ছয় মাস আগে গোলাম মাওলা মাতুব্বরের ঘর ভাড়া নেন শ্রীনদী এলাকার ভ্যানচালক মানিক বৈদ্য। শাশুড়ি, স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে সেখানে থাকতেন তিনি। ঘটনার পর কাউকে পাওয়া যায়নি। প্রাথমিক পর্যায়ে বিষয়টি অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে।
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোয়ার হোসেন চৌধুরী জানান, ঘটনার পর সহোদর দুই ভাইয়ের মা ও নানী পলাতক রয়েছে। এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড নাকি স্বাভাবিক মৃত্যু তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে আগুনের আলামত হিসেবে বেশকিছু মালামাল জব্দ করা হয়েছে।