× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড: এক বছরেও এখনও পরিচয় মেলেনি নয় মরদেহের

জুলহাস আহমেদ, বরগুনা

২৩ ডিসেম্বর ২০২২, ২৩:১১ পিএম

অভিযান-১০ লঞ্চের অগ্নিকাণ্ডের এক বছর পূর্ণ হলো আজ । গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর মধ্যরাতে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান ১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত হন ৪৯ জন। 
এই ঘটনার এক বছর পূর্ণ হলেও এখনও নয়টি কবরে থাকা মরদেহের পরিচয় শনাক্ত হয়নি। যাদের শনাক্ত হয়েছে তাদের স্বজনেরাও পাননি তেমন কোনো সহায়তা। পরিবারের কর্মক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে মানবেতর দিন কাটছে স্বজনদের। 

বরগুনা জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের ১৯ জনের মরদেহ ওই দিনই হস্তান্তর করা হয় স্বজনদের কাছে। শনাক্ত না হওয়া অজ্ঞাতপরিচয় ২৪ মরদেহ দাফন করা হয়েছিল বরগুনা সদর উপজেলার পোটকাখালী গণকবরে। পরে স্বজনদের মধ্যে ৪৮ জনের ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে ১৪ মরদেহের পরিচয় মেলে। তবে এখনও পরিচয় মেলেনি নয় মরদেহের। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের তালিকায় এখনও নিখোঁজের সংখ্যা ৩০ এবং সাত মরদেহের হদিস আজও মেলেনি।

বছর পেরিয়েও বরগুনা সদর উপজেলার পরীরখাল এলাকার রাজিয়া সুলতানা ও তার আট বছরের শিশু নুসরাত এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। আজও মা ও বোনের মরদেহ পাওয়ার অপেক্ষায় রাজিয়ার বড় মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসী। 

তিনি বলেন, ‘এক বছর হয়ে গেছে মায়ের মুখ দেখি না। এখন তো আর মরদেহ পাওয়ারও সম্ভাবনা নেই। মায়ের কবর বা একটা হাড্ডিও যদি পেতাম তাহলেও বাড়িতে নিয়ে এসে দাফন করতাম।’

জান্নাতুল বলেন, ‘১৪ জনের ডিএনএ ম্যাচ করেছে। কিন্তু আমাদের কপাল খারাপ, সেই ১৪ জনের মধ্যে আমার মা নেই, বোনও নেই।’

একই দুর্ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার ছোট টেংরা গ্রামের ফজিলা আক্তার পপি। 

পপির মা আমেনা বেগম বলেন, ‘বাবা-মা বেঁচে থাকতে সন্তান মারা গেলে এর থেকে কষ্টের কিছু থাকতে পারে না। আমরা কিছু চাই না, শুধু আমার মেয়ের কবরটা চাই। আমরা বেঁচে থাকতে এই আশা পূরণ হবে কি না জানি না।’

এদিকে যাদের মরদেহ শনাক্ত হয়েছে তাদের বেশিরভাগের পরিবারই উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। তেমন কোনো সহায়তাও তারা পাননি।

বরগুনা সদরের ঢলুয়া ইউনিয়নের খাজুরা গ্রামের মহিব ছিলেন পরিবারের আয়ের একমাত্র ব্যক্তি। তাকে হারিয়ে এখন অনাহারে- অর্ধাহারে থাকতে হচ্ছে পরিবারের। নিখোঁজের পর থেকে ১৮ মাসের সন্তানকে নিয়ে দিশেহারা মহিবের স্ত্রী লিপি বেগম। সরকারিভাবে কোনো সহায়তা মেলেনি তাদের।

লিপি বেগম বলেন, ‘ছোট বাচ্চা নিয়ে না খেয়ে থাকতে হয়। এমনও দিন যায় তিন বেলা তো দূরের কথা দুই বেলাও খাবার পাই না। নিখোঁজের প্রায় এক বছর পর আমার ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে আমার স্বামীর মরদেহ শনাক্ত করা হয়। যাদের কারণে আমাদের একমাত্র আয়ের লোক হারিয়ে গেছে সেই লঞ্চ কর্তৃপক্ষ আমাদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়নি। সরকারি কোনো সহায়তাও পাইনি।’

বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে নিখোঁজ ৩০ যাত্রীর মধ্যে ১৪ জন শনাক্ত হয়েছে। আমরা ওই পরিবারগুলোকে আর্থিক সহায়তার জন্য নৌ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি।’ 

লঞ্চে আগুনের ঘটনায় গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর অভিযান-১০ লঞ্চের মালিক হামজালাল শেখ ও অজ্ঞাতপরিচয়দের নামে বরগুনার মূখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে মামলা করেন আইনজীবী নাজমুল ইসলাম নাসির। এছাড়া নৌ আদালতে আলাদাভাবে মামলা করেন নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক মো. শফিকুর রহমান।

এ বিষয়ে ঝালকাঠি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম বলেন, `এ ঘটনায় দায়ের হওয়া একটি মামলা ঢাকার নৌ আদালতে চলমান রয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমি মামলাটি তদন্ত করেছি। আলামতও জব্দ করেছি।  আদালতের নির্দেশে পোড়া লঞ্চটি মালিক পক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। 
এ ঘটনায় বরগুনার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে করা এক মামলায় জামিনে রয়েছেন অভিযান-১০ এর মালিক হামজালাল শেখ।’

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.