× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

কালীগঞ্জের ২৫০শ বছরের বিনিরাইয়ের মাছের মেলা

সবুজ মিয়া, কালীগঞ্জ (গাজীপুর)

১৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০১:০১ এএম

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বক্তারপুর, জাঙ্গালিয়া, মোক্তারপুর ও জামালপুর ইউনিয়নের চারমোহনায় বিনিরাইল গ্রামে বসে মাছের মেলা। তবে মেলার বেশির ভাগ অংশই জামালপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বিনিরাইল গ্রামে। আর সে কারণেই এটাকে বিনিরাইলের মাছের মেলা বলা হয়। অনেকে আবার জামাই মেলাও বলে থাকে। 

মূলত পৌষ সংক্রান্তিতে আড়াইশ বছরের বেশি সময় ধরে পৌঘ মাসের শেষ দিনে বসে পুরনো এই মাছের মেলাটি। আর এই মাছ মেলাকে ঘিরে ভিড় জমায় দূর-দূরান্ত থেকে মাছ কিনতে আসা আগত মেয়ে জামাই ও উৎসুক দর্শনার্থীরা। উৎসবমূখর হয়ে উঠে মেলার পরিবেশ। সারা দিনব্যাপী বড় বড় মাছের দাম নিয়ে চলে নিয়ে চলে হাক ডাক। 

মূলত এটা জামাই মেলা। কিন্তু সবাই এটাকে বলে মাছের মেলা। উপজেলার বিনিরাইল গ্রামের মাছের মেলাকে ঘিরে আশে পাশের কয়েক জেলায় মানুষের সমাগমে এই দিনটিকে ঘিরেই এখানে মেলায় দিনভর চলে আনন্দ-উৎসব। আর এ দিনটির জন্য পুরো বছর জুড়ে অপেক্ষায় থাকেন স্থানীয়রা। 

এক টিকেটে দুই ছবি! বলাটা খুব বেশি অযৌক্তিক হবে না, এই মেলায় আছে একের ভেতর দুই। এক কথায় রথ দেখা আর কলা বেচা। কারণ এটা মাছের মেলা হলেও, এখানে চলে এলাকার জামাইদের বড় মাছ কেনার প্রতিযোগীতা। বিনিরাইল এবং এর আশপাশের গ্রামে যারা বিয়ে করেছেন, সে সমস্ত জামাইরা হচ্ছে ওই মেলার মূল ক্রেতা ও দর্শণার্থী। তবে এই মেলাকে ঘিরে এলাকার শ্বশুর-জামাইদের মধ্যেও চলে নীরব প্রতিযোগীতা। আর এই প্রতিযোগীতাটি হচ্ছে কোন জামাই সবচেয়ে বড় মাছটি ক্রয় করে শ্বশুরবাড়ীতে নিয়ে যেতে পারে। আবার শ্বশুররাও চান সবচেয়ে বড় মাছটি ক্রয় করে জামাইকে আপ্যায়ন করতে। বিনিরাইলের মাছের মেলা যেন শ্বশুর-জামাইয়ের বড় মাছ কেনার প্রতিযোগীতার মাঠ।

জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে লোকজন তো আসছেনই, এর বাইরেও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও অনেকে এসেছেন ঐতিহ্যবাহী ২৫০ বছরের পুরনো উপজেলার সর্ববৃহৎ এই মাছের মেলায়। গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকে অনেক মানুষ কেবল এই মেলা উপলক্ষেই কালীগঞ্জে এসেছেন। এবারের মেলায় প্রায় ২ শতাধিক মাছ ব্যবসায়ী বাহারি মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। মেলায় মাছ ছাড়াও আসবাবপত্র, খেলনা, মিষ্টি ইত্যাদির পসরাও সাজিয়ে বসেছে দোকানী। মাছের মেলায় সামুদ্রিক চিতল, বাঘাড়, আইড়, বোয়াল, কালী বাউশ, পাবদা, গুলসা, গলদা চিংড়ি, বাইম, ইলিশ, কাইকলা, রূপচাঁদা মাছের পাশাপাশি স্থান পেয়েছে নানা রকমের দেশী মাছও।

উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের জামাই বি-বাড়ীয়া জেলার নবীনগর এলাকার বাসিন্দা মিঠু সূত্রধর পলাশ বলেন, ঐতিহ্যবাহী দুই শতাধীক মাছের মেলাটি আমার দেখার খুব ইচ্ছা ছিল। শ্বশুরবাড়ী থেকে দাওয়াত পেয়ে চলে এসেছি। মেলা ঘুরে দেখবো এবং কিছু মাছ কিনে নিয়ে যাবো।   

বিনিরাইলের মাছের মেলা নিয়ে কথা হয় মেলা সংলগ্ন বক্তারপুর ইউনিয়নের বাটিড়া গ্রামের বাসিন্দা ভাওয়াল আশরাফুলের সাথে।  তিনি বলেন, পৌষ সংক্রান্তিতে, অর্থাৎ মাঘ মাসের প্রথম দিনে বিনিরাইলের এই মাছের মেলায় দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসে। এটি স্থানীভাবে জামাই মেলা বা মাছ মেলা নামে পরিচিত। শৈশব থেকেই এই মেলায় আসি। এখন কর্মব্যস্ত হলেও প্রতি বছর হৃদয়ের টানে, মাটির টানে মেলায় আসি। 

কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা থেকে মেলায় আসা মাছ ব্যবসায়ী পঞ্চাশোর্ধ প্রনয় কুমার দাস জানান, তিনি প্রায় ২৫ বছর ধরে এই মেলায় দোকান করেন। ইতিহাস ঐতিহ্যের কারণে বিনিরাইলে কেনার চেয়ে দেখতে আসা মানুষের ভীড় এখন বেশী। তাছাড়া স্থানীয় মানুষের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি হওয়াতে প্রতি বছর এ মেলায় চলে আসি। তবে বেচা-কেনাকে মূখ্য মনে করি না। 

নরসিংদী থেকে মাছর নিয়ে আসা চল্লিশোর্ধ নয়ন কুমার দাস বলেন, বিনিরাইলের মাছের মেলায় প্রচুর দেশি রুই, কাতল, বোয়াল, আইড়, বাঘাইর, চিতল, কালবাউশ ও রিটা মাছের সমাগম হয়েছে। এছাড়া কার্প জাতীয় নানা মাছের আমদানি হয়েছে। এক কেজি থেকে শুরু করে বিশ কেজি পর্যন্ত এসব মাছ বিক্রি হচ্ছে। 

বিনিরাইলের মাছের মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি ও ইউপি সদস্য কিশোর আকন্দ জানান, এই মেলাটি প্রথম অনুষ্ঠিত হতো খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে এটি অগ্রহায়ণের ধান কাটা শেষে পৌষ-সংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসবে আয়োজন করা হতো। প্রায় ২৫০ বছর যাবৎ মেলাটি আয়োজন হয়ে আসছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ মেলাটি একটি সর্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে বলেও জানান তিনি।

জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. খাইরুল আলম জানান, ব্রিটিশ শাসনামল থেকে বিনিরাইলের মাছের মেলা এখন ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। এ মেলা কালীগঞ্জের সবচেয়ে বড় মাছের মেলা হিসেবে স্বীকৃত। ঐতিহ্যেবাহী এই মেলায় প্রায় ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকার মাছ ক্রয় বিক্রয় হয়।  


Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.