× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য রাজনীতির সিংহপুরুষ রফিক উদ্দিনের ৯৭তম জন্মবার্ষিকী

ময়মনসিংহ ব্যুরো

২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০৩:৩২ এএম

বৃহত্তর ময়মনসিংহের রাজনীতির সিংহপুরুষ, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে ময়মনসিংহে গঠিত সংগ্রাম কামটির সম্পাদক ও মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতে ময়মনসিংহ অঞ্চলের বেসামরিক কমান্ডার, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর খুব কাছের মানুষ মো. রফিক উদ্দিন ভূঁইয়ার ৯৭তম জন্মবার্ষিকী আজ ২৫ জানুয়ারি।

সদা হাস্যোজ্জল,সৎ, নির্লোভ, প্রচারবিমুখ,সাদাসিধে এ রাজনীতিবিদ ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মুশুল্লি ইউনিয়নের মেরেঙ্গা গ্রামে ২৫ জানুয়ারি ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে (শিক্ষা সনদ অনুযায়ী) আর পারিবারিক সূত্রে পাওয়া ৭ আগস্ট ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। 

১৯৯৬ সালের ২৩ মার্চ ময়মনসিংহের নিজ বাসভবনে বার্ধক্যজনিত কারণে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এ ক্ষণজন্মা রাজনীতিবিদ। নান্দাইল উপজেলার মুশুল্লি ইউনিয়নের মেরেঙ্গা গ্রামের বড়বাড়ি হিসেবে স্থানীয়ভাবে পরিচিত এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের বিশিষ্ট সমাজসেবক মো. ওয়াফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া এবং মোছা. ফিরুজা খাতুনের দ্বিতীয় সন্তান।

তিনি নান্দাইল উপজেলার মুশুল্লি ইউনিয়নের নবীয়াবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে, মুশুলী উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে নান্দাইল চন্ডীপাশা উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হন। এ সময় তিনি নান্দাইল পাছপাড়া গ্রামের হাসিম উদ্দিন চেয়ারম্যানের বাড়িতে লজিং থাকতেন। কয়েকমাস পর তিনি চন্ডীপাশা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রত্যায়নপত্র নিয়ে কিশোরগঞ্জ আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হন। তিনি কিশোরগঞ্জ জেলার পুরান থানা ইসলামিয়া বডিংয়ের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। হঠাৎ কি মনে করে তিনি চলে যান কলকাতায়। পরে কলকাতা সিটি কলেজ থেকে ১৯৪৬ সালে ম্যাট্রিক পাস করার পর কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন। ছোটকাল থেকেই তিনি ভালো বিতার্কিক ছিলেন। একজন ভালো বিতার্কিক হিসেবে সেময় তরুণ মো. রফিক উদ্দিন ভূঁইয়ার সাথে কলকাতায় বেকার হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিচয় হয়। এভাবেই মো. রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া একসময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুব কাছের মানুষ হয়ে যান।

পরে আবারো তিনি নিজ এলাকায় ফিরে এসে ১৯৪৭ সালের শেষ দিকে ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজে ভর্তি হয়ে খুব তাড়াতাড়িই ছাত্ররাজনীতির সম্মুখসারিতে চলে আসেন। ১৯৪৮ সালে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৪৮ সালে কার্জন হলে জিন্নাহ কর্তৃক উর্দুকে তৎকালীন পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার সময় সেখানে তিনি উপস্থিত থেকে অন্যদের সাথে তিনিও দৃঢ়তার সাথে কঠোর ও কঠিন প্রতিবাদ করেছিলেন।

পরবর্তীতে ওই পেক্ষাপটে ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজের অধ্যাপক সৈয়দ বদরুদ্দিন হোসাইনকে সভাপতি ও নান্দাইলের মো. রফিক উদ্দিন ভূঁইয়াকে সম্পাদক করে বৃহত্তর ময়মনসিংহ রাষ্ট্রভাষা ‘সংগ্রাম কমিটি’ গঠন করা হয়। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে গ্রেফতার হয়ে তিনি দীর্ঘ আড়াই বছর রাজবন্দী থাকার বিষয়টি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থের ২২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে।

তিনি ১৯৫৬ সনে ময়মনসিংহ জেলাবোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ সনে ফিল্ড মার্শাল আইয়ূব খানের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে কারারুদ্ধ হন কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় মা ফিরুজা খাতুনের মৃত্যু হলে তার মুক্তি না দেয়ায় মায়ের জানাজার নামাজে শরিক হতে পারেননি। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা কর্মসূচির পক্ষে জনমত গঠনের লক্ষ্যে সমগ্র পূর্বপাকিস্তান সফর করে বীর সেনানীর ভূমিকা পালন করেন।

১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনসহ সকল আন্দোলনে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা ছিল। এসময় তিনি আবারো গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন। তিনি ১৯৫৪ সাল থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৭৩ সালে সভাপতি নির্বাচিত হন। সর্বোপরি তিনি ১৯৭১সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে ১১নং সেক্টরের আঞ্চলিক কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে যুদ্ধ বিধ্বস্ত তার নির্বাচনী এলাকার নান্দাইল উপজেলা সদরে শহীদ স্মৃতি আদর্শ কলেজ প্রতিষ্ঠাসহ শিক্ষা, কৃষি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি সাধন করে নান্দাইলকে আলাদা পরিচিতি এনে দেন।

তিনি ১৯৭৩ ও ১৯৭৬ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে ময়মনসিংহের গভর্ণর নিযুক্ত হন।ইতিহাসের কলঙ্ককনক অধ্যায় ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর কতিপয় বিশ্বাসঘাতক উচ্চাভিলাষীর হাতে নির্মমভাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের সদস্যরা নিহত হলে অবৈধভাবে ক্ষমতায় যাওয়া খন্দকার মোস্তাক আহম্মদ তাঁকে মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব করলে তিনি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করায় কারাবন্দী হতে হয় তাঁকে। পরবর্তীতে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের আমলেও ‘হয় মন্ত্রী, নয়তো জেল’ এমন প্রস্তাব তিনি প্রত্যাখ্যান করায় আবারো কারাবন্দী হতে হয় তাঁকে। এমনকি পরবর্তী সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের আমলেও তাঁকে মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব করা হলে তিনি ঘৃণাভরে তা প্রত্যাখ্যান করায় তাঁকে কারাবন্দী করা হয়। ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে পরবর্তীতে সামরিক শাসনসহ বিভিন্ন সময়ে আন্দোলনের প্রতিবাদী কণ্ঠ মো. রফিক উদ্দিন ভূঁইয়ার চেয়ে বেশি সময় বিনা অপরাধে কারাগারে থাকতে হয়েছে এমন নেতা ময়মনসিংহ অঞ্চলে খুঁজে পাওয়া যায় না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও তাঁর দল আওয়ামী লীগের প্রতি ভালোবাসার জন্যে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত তিনি নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। ফলে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য ও কাছের মানুষ মো. রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সর্বশেষ কেন্দ্রীয় ওয়ার্কিং কমিটির অন্যতম সদস্য নির্বাচিত হন।

জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর মো. রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া ১৯৯৬ সালের ২৩ মার্চ বার্ধক্যজনিত কারণে ময়মনসিংহের নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার নামানুসারে ময়মনসিংহের স্টেডিয়ামের নাম রাখা হয়েছে ‘রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়াম’।

২০২০ সালে ২১ ফেব্রয়ারি নান্দাইল উপজেলা প্রশাসন মো. রফিক উদ্দিন ভূঁইয়াকে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার জন্য প্রথম বারের মতো স্মারক সম্মাননা (মরণোত্তর) প্রদান করেন।

রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন,১৯৫৮ সালে আইযুব খানের দুঃশাসন,৬ দফা, ’৬৯-এর গণআন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন আন্দোলনে বার বার জেল খেটে জাতির জনকের স্নেহধন্য হিসেবে নাম লেখানো এ বীরের অসামান্য অবদান ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। প্রচারবিমুখ এ রাজনীতিক বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে বীরের ভূমিকা পালন করলেও এতোদিন পরও দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় খেতাব ‘স্বাধীনতা পদক’ বা ‘একুশে পদক’ না পাওয়ায় ময়মনসিংহ অঞ্চলের মানুষের মনে কষ্ট থেকেই যাচ্ছে।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.