× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

ফেনীতে সরকারি গুদামে ধান-চাল বিক্রিতে কৃষকের অনীহা

ফেনী প্রতিনিধি

০৬ মার্চ ২০২৩, ০৫:১৪ এএম

ফেনীতে গত সাড়ে তিন মাসে আমন মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে ধান, চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার ১০ শতাংশও পূরণ হয়নি।

৩ হাজার ৮ মেট্টিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৭ মেট্টিক টন। ২ হাজার ৭১৩ মেট্টিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও সংগ্রহ হয়েছে ৬শ ৬৯ মেট্টিক টন। 

সোনাগাজী, পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় আমন মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার এক শতাংশও পূরণ হয়নি। সোনাগাজী উপজেলায় ১ হাজার ৮০ মেট্রিক টন, পরশুরামে ৩৪৯ মেট্রিক টন  ও ফুলগাজী উপজেলায় ৩৭০মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। 

ফেনী সদর উপজেলায় ১ হাজার ৪১৫ মেট্টিক টন চাল ও ৯৪৮ মেট্টিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও সংগৃহীত হয়েছে ২৪৪.৪ মেট্টিক টন চাল, ছাগলনাইয়া উপজেলায় ৬৫৪ মেট্টিক টন চাল ও ৫৫৩ মেট্টিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও সংগৃহীত হয়েছে ১৪৯.৯ মেট্টিক টন চাল, দাগনভূঞা উপজেলায় ৬৪৪ মেট্টিক টন চাল ও ৫০৫ মেট্টিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও সংগৃহীত হয়েছে ২৭৫.৪ মেট্টিক টন চাল ও ৭ মেট্টিক টন ধান। 

প্রচার-প্রচারণার অভাবে এবং হাট-বাজারগুলোতে ধানের দাম বেশি হওয়াসহ নানা কারণে গত দুই মাসে কৃষকরা ধান সরকারি খাদ্যগুদামে বিক্রি করেননি। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরন না হওয়ায় ধান-চাল সংগ্রহের সময় আরো ৭ দিন বৃদ্ধি করে ৭ই মার্চ পর্যন্ত করা হয়েছে বলে জেলা খাদ্য অফিস সূত্রে জানায়। 

কৃষকরা কৃষি অ্যাপে রেজিষ্ট্রেশান করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার অনুমোদন সাপেক্ষে নির্ধারিত অটোরাইচ মিলে ধান ও চাল বিক্রি করতে পারবে। 

সরকারের বেঁধে দেওয়া মূল্যের চেয়ে বাজারমূল্য বেশি হওয়ায়, অধিকাংশ মিল মালিকরা চুক্তির বাইরে থাকার ফলে জেলায় ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান অনেকাংশে কমে গেছে। 

লাইসেন্স রক্ষায় কিছু চালকল মালিক খাদ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কম সংখ্যক চাল বিক্রি করলেও পূর্ন লক্ষ্যমাত্রা পূরন করতে পারেনি।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্র জানায়, জেলায় ৪ জন তালিকাভুক্ত রাইচ মিল রয়েছেন। তারা হলেন, কসকা অটোরাইচ মিল, শাপলা অটোরাইচ মিল, জাহিদ অটোরাইচ মিল ও নাসির অটোরাইচ মিল। সরকারের সংগ্রহ দর প্রতি কেজি চাল ৪২ টাকা, ধান ২৮ টাকা। 

বর্তমান বাজারে চালের দর ৪৫ টাকা থেকে ৫০ টাকা কেজি, ধান প্রতিকেজি ৩০থেকে ৩২ টাকা। এ অবস্থায় সরকারি গুদামে চাল সরবরাহ দিলে প্রতি কেজিতে ৫-৬ টাকা করে ক্ষতি হবে। তাই চলতি মৌসুমে অধিকাংশ মিলার সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়া থেকে বিরত রয়েছেন। যে কয়েকজন চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

প্রান্তিক কৃষকরা জানায়, করোনা, প্রাকৃতি দূর্যোগ ও সারাবিশ্বে দুর্ভিক্ষের আভাস পেয়ে অনেক কৃষক এবার ধান হাত ছাড়া করছে না। যারা মজুতদার তারা ধান কাটা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ধান ক্রয় শুরু করে। মিলারও একই সঙ্গে ধান মজুত করে। 

ফলে যেসব কৃষক ধান বিক্রি করেছে সেগুলো ইতিমধ্যে মজুতদারদের গুদামে গেছে। মিলারদের সঙ্গে চালের জন্য সরকারের যে চুক্তি হয়েছে সে চুক্তি অনুযায়ী মিলাররাও চাল দিতে পারছে না।

 কারণ সরকার যেখানে ৪২ টাকা কেজি চাল ধরেছে সে চাল বাজারে ৪৫-৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এখন তারা বলছে বেশি দামে ধান কিনে ৪২ টাকা কেজিতে চাল সরবরাহ সম্ভব নয়।

সরকারি ভাবে প্রতি মণ ধানের ক্রয়মূল্য ১ হাজার ১২০ টাকা ধরা হয়েছে। অথচ বাড়ি থেকে ওই ধান খাদ্যগুদামে নিতে ৩০০-৫০০টাকা গাড়ি ভাড়া লেগে যায়। কৃষকের কথা চিন্তা করে সরকারি ভাবে ধানের দাম আরও বাড়াতে হবে। তা না হলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না। 

কারণ বাজারে এখন ধানের দাম ১ হাজার ১২০টাকার বেশি। আবার অনেক বেপারী কৃষকের বাড়িতে গিয়ে ধান কিনে নেন। সেখানে কৃষকের কোন খরচ হয় না। 

এছাড়া কৃষি কার্ড নিয়ে অনলাইনে আবেদন, ব্যাংক চেকের মাধ্যমে দাম পরিশোধ, আর্দ্রতা মাপা, পরিবহন খরচসহ নানা ঝামেলার কারনে তারা খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে চান না।

সোনাগাজী চর চান্দিয়া এলাকার কৃষক মিজানুর রহমান জানান, উপজেলায় আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধানের বাজার এখন উর্ধ্বগতির দিকে যাচ্ছে। ধানের দাম আরও বাড়বে বলে মনে করে অনেক কৃষক ধান বিক্রি না করে ঘরে মওজুত করছেন।

 বিশ্বব্যাপী সংকটময় পরিস্থিতিতে কৃষিখাতে শ্রমিকের মজুরী বেড়ে যাওয়ায় তাদের অতিরিক্ত টাকা জোগান দিতে বেগ পেতে হয়েছে। সরকারের যে মূল্য, তা আরও বাড়াতে হবে, তবেই কৃষক সরকারের কাছে ধান বিক্রি করবেন।খাদ্যগুদামে নানা অজুহাতেও ধানের শ্রেনি বিন্যাস করে দাম কমানো হয়। 

ফেনী রাইচমিল মালিক সমিতির সভাপতি ও কসকা অটোরাইচ মিল মালিক সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘সরকার যে দাম নির্ধারণ করেছে তা বাজার এবং কৃষকের সঙ্গে সমন্বয় করে করা উচিত ছিল। এবার কৃষকদের উৎপাদন খরচ বিবেচনা না করেই দাম নির্ধারণ করেছে সরকার।

 তাই বাজারের দামের সঙ্গে সরকারের দামের মিল নেই। যদি দাম আরেকটু বেশি হতো; অন্তত ধানের বাজারের সঙ্গে মিল রেখে নির্ধারণ করলে আমাদের লোকসান গুনতে হতো না। 

গত কয়েক বছর ধরে আমরা চাল দিয়ে আসছি। কিন্তু এবার লোকসান দিয়ে চাল দেওয়া সম্ভব নয়। তিনি বিষয়টি খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন বলেও জানান।

শুধু মিল মালিকরা নন, সরকার নির্ধারিত দামের সঙ্গে বাজারের দাম সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে জানিয়েছেন কৃষকরাও। জেলার বাজারগুলোতে বর্তমানে যে দামে ধান বিক্রি হচ্ছে, তা সরকারি দামের চেয়েও বেশি। 

ফলে সরকারের কাছে ধান, চাল বিক্রি করতে চান না কৃষকরাও। সেইসঙ্গে ধান সংগ্রহের জন্য যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছে সেসবে যেতে চান না কৃষকরা।

ফেনী খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্র জানায়, গত বছরের ১৫ নভেম্বর থেকে এই জেলায় খাদ্যগুদামে ন্যায্যমূল্যে ধান সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়। সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে তিন শতাধিক কৃষক অনলাইনে আবেদন করেছেন। 

প্রতি কেজি ধান ২৮টাকা দরে ও প্রতি মণ ধান ১ হাজার ১২০ টাকা দরে কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করার জন্য সরকারি নির্দেশনা ছিল। প্রত্যেক কৃষক সর্বোচ্চ তিন টন ধান গুদামে বিক্রি করতে পারবেন। হাট-বাজারে ধানের দাম বেশি পাওয়ায় সরকারি গুদামে ধান বিক্রিতে কৃষকদের অনীহা।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.