× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

সিন্ডিকেটের থাবা লবণে, তপ্তরোদে লবণ উৎপাদনে ব্যস্ত উপকূলের চাষিরা

কক্সবাজার প্রতিনিধি

১৪ মার্চ ২০২৩, ০২:১৫ এএম

মৌসুমের শুরুতে খুশি মনে ছিলেন উপকূলের লবণ চাষীরা। হঠাৎ লবণের দরপতনে বিপাকে পড়েছেন লবণ চাষিরা। লোকসানের শঙ্কায় এখন তারা। তাদের আগের খুশি আর নেই। এদিকে দাম কমে যাওয়ার নেপথ্যে কাজ করছে সিন্ডিকেট। এমনই অভিযোগ লবণচাষীদের। বাজার দর নির্ধারণ এবং লবণ শিল্প বাঁচাতে আমদানি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন চাষিরা।

আর উৎপাদন ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রান্তিক লবণ চাষিরা। কিন্তু উৎপাদনের মাঝামাঝিতে এসে একটি দুঃসংবাদে তাদের হাসি মলিন হয়ে গেছে। পরিশোধনকারী মিল মালিকরা লবণের দাম কমিয়ে নির্ধারণ করায় এই শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত অন্তত ৫৫ হাজার চাষির মাথায় হাত পড়েছে।

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের চালিয়াতলী লবণ মাঠে চাষি আছি মিয়া দুই একর জমি বর্গা নিয়ে লবণ চাষ করে আসছিলেন। হঠাৎ করে লবণের দাম দরপতন হওয়ায় তার চোখে মুখে নেমে আসে হতাশা। একদিকে জমিনের দাম তুলতে হবে অন্যদিকে দৈনিক শ্রমিকের মজুরি দিতে হবে। রয়েছে সংসার চালানোর তাড়া পুড়েনও। তবে এটি কোন রূপ কথার গল্প নই হাঁড় কাপানো শীতের শেষ প্রান্তে এসে মাঠে সাদাসোনাখ্যাত লবণ উৎপাদন করতে উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের উত্তরনলবিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেনীর ছাত্রী তাসফিয়া আক্তার ও চালিয়াতলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী জুমা মনি নামে ওরা দুই বোন পিতা চাষির পাশে লবণ তুলতে শ্রমিকের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তারা জানালেন লবণের দাম কমে যাওয়ায় শ্রমিক দিয়ে লবণ তুলতে তাদের পিতা হিমছিম খাচ্ছে। তাই তারা লবণ তুলতে মাঠে নেমে পড়েছেন।

এই দিকে দুই সপ্তাহ আগেও মাঠ পর্যায়ে লবণের দাম ছিল মনপ্রতি সাড়ে চারশ থেকে ৫০০টাকা। কিন্তু হঠা করে লবণের দরপতন ঘটেছে। ঠেকেছে ২৭০ থেকে ২৫০ টাকায়। এতে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে মাঠ পর্যায়ে। ব্যবসায়ী ও চাষিরা হতাশাগ্রস্ত। তিন মন লবণ বিক্রি করেও দৈনিক শ্রমিকের মজুরির খরচ তুলতে না পারায় নিজের দুই স্কুল শিক্ষার্থী মেয়ে সন্তানদের লবণ মাঠে কাজ করতে নিয়ে এসেছেন প্রান্তিক লবণ চাষি আছি মিয়া। দুই একর জমি বর্গা নিয়ে চাষ করার সুখ দুঃখের কথাও জানালেন তিনি।

মহেশখালীর বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার একর জমিতে বিপুল পরিমাণ লবণ পড়ে রয়েছে। অনেকে উৎপাদিত লবণ মাটির নিচে গর্ত খুঁড়ে, কেউ আবার গুদামজাত করে রাখছেন। আবার কেউ বিক্রির জন্য লবণ স্তূপ করছেন। এই ক্ষতি পোষাতে না পেরে চাষীরা যে কোন মুহূর্তে মাঠ ছেড়ে চলে যেতে পারেন। উপকূলীয় অঞ্চলের মহেশখালীসহ উপকূলের লাখ লাখ ব্যবসায়ী, শ্রমিক, মালিক ও চাষী পড়েছেন বিপদে। বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করতে না পেরে দেশের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে এ দরপতন ঘটিয়েছেন বলে দাবি চাষীদের। কক্সবাজার ও বাঁশখালীর কিছু অংশ নিয়ে প্রায় ৫৭ হাজার ২৭০ একর জমিতে অন্তত ৫৫ হাজার লোক লবণ চাষে জড়িত। এছাড়া লবণের উপর বিভিন্ন ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করেন অন্তত ৮০ শতাংশ মানুষ। ফলে দেশি লবণ শিল্প ধ্বংস হলে বেকার হবে হাজারো মানুষ, যাদের বিকল্প পেশা নেই। 

বিসিকের তথ্যমতে, গত মৌসুমে সরকার লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ২৩ লাখ ৫৭ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। তখন উৎপাদন হয়েছিল ১৮ লাখ ৩১ হাজার ৯৩১ মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা আছে ২৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন।

উল্লেখ্য,গত বছর জমির পরিমাণ ছিল ৬৩ হাজার ২৯১ একর। বর্তমানে চাষ যোগ্য জমি হচ্ছে ৬৬ হাজার একর। 

বিসিক কক্সবাজারের লবণ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া  জানান, আমদানি না হওয়ায় লবণ চাষিরা দুই বছর ধরেই ভালো দাম পেয়ে আসছেন। বর্তমানে শতভাগ জমিতে আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করায় উৎপাদন আড়াই গুণ বৃদ্ধি পায়। লবণের গুণগত মানও বেশ ভালো। দামও ভালো পেয়ে থাকেন চাষিরা। 

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.