× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

‘ঘরে চাল নাই, পোলাপান লইয়া তিনদিন না খাইয়া আছি’

বরিশাল ব্যুরো

১৪ মার্চ ২০২৩, ০৯:৪২ এএম

দুই মাসের জন্য গত ১ মার্চ থেকে নদী ঘেরা বরিশালের অভয়াশ্রমে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞার দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনও সরকারি খাদ্য সহায়তা পায়নি জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপাশা ইউনিয়নের কার্ডধারী তালিকাভূক্ত অধিকাংশ জেলে।

প্রতিদিন নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা এসব জেলে পরিবারের এখন চলছে নিরব হাহাকার। ফলে সংসারের ব্যয়ভার বহন ও ঋণের টাকা নিয়ে তারা চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। ইতোমধ্যে ওই ইউনিয়নের মৌসুমী জেলে ও অন্যান্য পেশার সাথে জড়িতদের মধ্যে জেলেদের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত চাল বিতরণ করা হলেও প্রকৃত তালিকাভূক্ত কার্ডধারী জেলেরা সরকারি সহযোগিতা থেকে বঞ্ছিত হয়েছেন।

আক্ষেপ করে জেলেরা বলেন, প্রতিদিন নদীতে মাছ ধইরা যা আয় হয়, তাই দিয়েই পরিবারের সদস্যদের মুখে আহার তুলে দেওয়া হয়। নিষেধাজ্ঞার কারণে গত দুই সপ্তাহ থেকে বেকার বসে আছি। এরমধ্যে ঘরে যা ছিলো তা খাওয়া হয়ে গেছে, গত তিনদিন থেকে ঘরে চাউল নাই, সরকারি চালও পাচ্ছি না। তাই পোলাপান লইয়া এ্যাহন অনেকটা না খাওয়ার মতো বাইচ্চা আছি। দূর্গাপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের গাফিলতির কারণে চাল পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ করেছেন প্রায় অর্ধশতাধিক কার্ডধারী জেলে। সরকারি বরাদ্দের চাল পাওয়ার দাবিতে জেলেরা সোমবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন সুরাহা পায়নি।

দূর্গাপাশা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড লক্ষীবর্ধন গ্রামের কার্ডধারী জেলে জাহাঙ্গীর খান অভিযোগ করে বলেন, সরকার আমাদের জন্য চাল বরাদ্দ দিলেও আমরা সঠিক সময় কেন চাল পাচ্ছি না? সংসার কীভাবে চলবে জানি না। মিজান হাওলাদার নামের কার্ডদারী এক জেলে বলেন, দূর্ঘাপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হানিফ তালুকদার ও ইউপি সদস্য বাচ্চু মল্লিক সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত ৪০ কেজি চাল নেওয়ার জন্য আমাদের প্রত্যেক তালিকাভূক্ত জেলের কাছে এক হাজার করে টাকা দাবি করেন। তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় আমিসহ ইউনিয়নের অর্ধশত কার্ডধারী তালিকাভূক্ত জেলেদের সরকারি বরাদ্দের চাল দেওয়া হয়নি।

একই গ্রামের বাসিন্দা ও মৎস্য অধিদপ্তরের রেজিষ্টারভূক্ত কার্ডধারী জেলে হোসেন হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যর দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় আমাদের চাল দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করা হলে আমাদের কার্ড চিরদিনের জন্য বাতিল করে দেওয়া হবে বলেও হুমকি প্রদর্শন করা হয়েছে। জেলে সবুজ খান বলেন, বছরের বারো মাসই আমরা নদীতে জাল বেয়ে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। অথচ যারা টাকা দিতে পেরেছে সেইসব মৌসুমী জেলেসহ অন্যান্য পেশার সাথে জড়িতদের চাল দেওয়া হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় চাল ব্যবসায়ীদের কাছে জেলেদের জন্য সরকারি বরাদ্দের চাল বিক্রি করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে জেলেদের দায়ের করা লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, প্রত্যেক জেলে কার্ডের বিপরতীতে ৪০ কেজি করে চাল বিতরণ করার কথা থাকলেও যেসব জেলেদের মাঝে চাল বিতরণ করা হয়েছে তার পরিমাপ করে দেখা গেছে সর্বোচ্চ ৩৫ থেকে ৩৬ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। চাল না পাওয়া কার্ডধারী জেলেরা সরকারিভাবে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল পাওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

দূর্গাপাশা ইউনিয়ন শ্রমিকলীগের সভাপতি ও ৯নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য রুবেল মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, ইউনিয়নে তালিকাভূক্ত সাতশ’ জেলে কার্ড রয়েছে। নামেমাত্র কিছু লোকের মাঝে বরাদ্দকৃত সরকারি চাল ওজনে কারচুপি করে বিতরণ করা হয়েছে। বাকি প্রায় দুইশ’ বস্তা চাল কালোবাজারে বিক্রি করার জন্য সেনেরহাট বাজারে ইউনিয়ন পরিষদের গোডাউনে মজুদ করে রাখা হয়েছে।

এক হাজার করে টাকা দাবিসহ অন্যান্য সকল অভিযোগ অস্বীকার করে দূর্গাপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হানিফ তালুকদার বলেন, একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কতিপয় ইউপি সদস্যর বিরুদ্ধে জেলেদের কাছে যাতায়াত খরচ বাবদ একশ’ করে টাকা চাওয়ার মৌখিখ অভিযোগ পেয়ে তাৎক্ষনিক তাদের (ইউপি সদস্য) কঠোরভাবে শ্বাসানো হয়েছে। আমার নাম ব্যবহার করে কোন ইউপি সদস্য টাকা চেয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সজল চন্দ্র শীল বলেন, জেলেদের লিখিত অভিযোগের তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশক্রমে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.