× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মেলেনি প্রসব সুবিধা, প্রসূতি-নবজাতকের মৃত্যু

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

৩০ মে ২০২২, ০৯:২২ এএম

রবিবার (২৯ মে) সকালে প্রসব বেদনা ওঠে প্রসূতি রেবার (২২)। দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া প্রয়োজন হলেও সে উপায় নেই। বাড়ি থেকে সবচেয়ে নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতেও নৌকায় নদী পার হতে হবে। এরপর আবার যেতে হবে আরও পৌনে এক ঘণ্টার পথ। কিন্তু ওই ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গর্ভবতী  মায়েদের প্রসব সুবিধা বন্ধ। অথচ কেন্দ্রটিতে রয়েছে সব ধরনের উপকরণ। ফলে রেবাকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে শহরের একটি ক্লিনিকে নেওয়া হয়। ততক্ষণে প্রসব বেদনায় প্রায় নিস্তেজ হয়ে পড়েছেন তিনি। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক প্রসবের ব্যবস্থা করতে না পারায় তাকে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার পথেই প্রাণ হারান রেবা। নিজের সঙ্গে নিয়ে যান অনাগত সন্তানকেও।  

কুড়িগ্রাম সদরের ঘোগাদহ ইউনিয়নের দুধকুমার নদ বেষ্টিত প্রথম আলোর চর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন রেবা। ওই গ্রামের শাহিনুরের স্ত্রী তিনি। স্ত্রী আর অনাগত সন্তানের মৃত্যুতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন শাহিনুর।

শুধু রেবা নন। প্রসব নিয়ে জটিলতায় ঘোগাদহের অনেক গর্ভবতী নারী প্রাণ হারিয়েছেন। অথচ হাতের কাছেই ঘোগাদহ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। সেখানে স্বাভাবিক ডেলিভারির সব সুবিধাও রয়েছে। তবে শুধু জনবলের অভাবে সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন অনেক প্রসূতি ও নবজাতক।

রেবার দুলাভাই মমিনুল বলেন, নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসবের ব্যবস্থা থাকলে রেবাকে প্রাণ হারাতে হতো না। দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে শহরে যেতে যেতে শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয়ে প্রাণ হারায় সে।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে কেন্দ্রে নরমাল ডেলিভারির সব সুবিধার কথা মাথায় রেখে ওটি রুম, পোস্ট অপারেটিভ রুম, জেনারেটরসহ প্রয়োজনীয় সব সরঞ্জাম দেওয়া হয়। কিন্তু জনবলের অভাবে স্থানীয় নারীরা এর কোনও সুবিধা পাচ্ছেন না।

কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার ডা. রাজিউন হক বলেন, ‘নরমাল ডেলিভারির সব সরঞ্জাম থাকলেও জনবল নেই। এই কেন্দ্রে তিন জন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র একজন। তাকে সহায়তার জন্য কোনও আয়াও নেই। ফলে আমরা সেবা দিতে পারছি না।’

ঘোগাদহের সামাজিক সংগঠন ছায়ার সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম বলেন, ‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে এই সময়ে এসেও প্রসব জটিলতায় নারীদের মৃত্যু হচ্ছে। অথচ সরকার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নরমাল ডেলিভারির সব সুবিধা করে দিয়েছে।’

এই সমাজকর্মী আরও বলেন, ‘জেলার গ্রামাঞ্চলের নারীদের মধ্যে নরমাল ডেলিভারির প্রবণতা বেশি। তারা অনর্থক অস্ত্রোপচারে সন্তান জন্ম দিতে চান না। তবে অপ্রশিক্ষিত ধাত্রী দিয়ে প্রসব করাতে গিয়ে অনেক সময় মায়ের মৃত্যুর পাশাপাশি আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে নবজাতক অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই আমাদের চাওয়া, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিয়ে নরমাল ডেলিভারি সুবিধা চালু করা হোক। এতে অনেক গর্ভবতী মা ও নবজাতকের প্রাণ বাঁচবে।’

সিভিল সার্জন ডা. মো. মঞ্জুর-এ-মুর্শেদ বলেন, ‘স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বিভিন্ন পদগুলো পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের।’ এ বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

জনবল সংকটের কথা স্বীকার করে জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের উপপরিচালক মীর রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পদ শূন্য থাকলেও জনবল সংকটের কারণে সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অন্তত একজন আয়া দেওয়া যায় কি না- বিষয়টি দেখবো।’


Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.