× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

নাগরিক জলজট

উম্মে হানি

০৫ নভেম্বর ২০২২, ০৯:৫৪ এএম

ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ আবারো আমাদের বেশ কিছু জিনিস চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তো বটেই, আমাদের নাগরিক  জীবনেও আমরা নানা প্রভাব দেখলাম। আমাদের নাগরিক জীবন নানান জটিলতার মধ্য দিয়ে যায়, তার উপর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হচ্ছে জলাবদ্ধতা। বৃষ্টি হলেই ঢাকায় জলাবদ্ধতা অবধারিত যেন। জলাবদ্ধতার কারণে ঢাকাবাসীকে পড়তে হয় ভোগান্তিতে। সবসময় চোখে না পড়লেও সামান্য বৃষ্টি কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগই আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আমাদের শহরের অব্যবস্থাপনা।

ঢাকা শহরে সামান্য বৃষ্টিতেই চোখে পরে কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমরপানি। জলাবদ্ধতা নিয়ে বিস্তর আলাপ আলোচনা করা হলেও সেখানে কাদা- ছোড়াছুড়িই  চলে বেশি। ঢাকায়  জলাবদ্ধতা নিয়ে বার বার প্রশ্ন তোলা হয়, কয়েকদিন উন্নয়নকাজ চলে, কিন্তু ঠিকই  সামান্য বৃষ্টিতে শহরবাসী সেই উন্নয়ন কাজের কি ফল থাকে, তা যেন চোখেই দেখতে পায়। এসব নিয়ে প্রশ্ন করলে এক প্রশাসন আরেক প্রশাসনকে দুষেন আর খান্ত হন। কিন্তু এই দুইয়ের মাঝে  জলাবদ্ধতার পানিতে হাবুডুবু খায় ওই আমাদের মতো সাধারণ নগরবাসী।

বিশেষজ্ঞরা ঢাকার জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হিসেবে পানি সঞ্চালন ব্যবস্থার ত্রুটিকে দায়ী করেন। এছাড়া  রাজধানীর খাল এবং নালাগুলো নানাভাবে দখলদারের হাতে, ফলে অবৈধভাবে দখল হওয়া এসব খাল ও নালা হয়ে যায় ভরাট। আবার রাজধানীর যেসকল নালায় পানি নিঃসরণ হয়, সেসকল নালাগুলো যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না সিটি কর্পোরেশন থেকে। ফলে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন সম্ভব হয় না। ঢাকায় পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রধান ১৬টি খালের কথা জানা যায়, যার অর্ধেকই এখন দখলদারের কবলে। 

২০২১ সালের এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ২০০১ সাল থেকে ঢাকা ওয়াসা জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ২০০ কোটিরও বেশি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করে। প্রকল্পের আওতায় নগরীর ২৬৫ কিলোমিটার এলাকায় ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন স্থাপন, বক্স-কালভার্ট, খালের পানি নিষ্কাশনসহ বিভিন্নভাবে জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য কাজ শুরু হয়। পাঁচ বছর মেয়াদি এই প্রকল্প তিন মেয়াদে বেড়ে ২০১০ সালে শেষ হয়। এতে এর নির্মাণ ব্যয় ১৪৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা থেকে বেড়ে ২০৩ কোটি ২৬ লাখ টাকায় দাঁড়ায়। জলাবদ্ধতা নিরসনে এত বড় মেগাপ্রজেক্ট শেষ করেও পরিত্রাণ পাওয়া যায়নি জলাবদ্ধতা থেকে। পরে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে আরো ১৮০ কোটি টাকা সরকার থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয় ২০১০ সালে। তবে প্রতি বছর এমন বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হলেও কার্যকর কোনো সুবিধা পায়নি নগরবাসী।

বারবার জলাবদ্ধতা নিরসনে একের পর এক প্রকল্প আসে। কিন্তু এরপরেও নগরবাসী এর সুবিধা পায় না। নালা পরিষ্কার করার নামে যে উন্নয়ন কাজ  চলে তাও ঠিকঠাকভাবে পরিচালনা হয় না। কারণ যেসকল নালা থেকে আবর্জনা পরিষ্কার করা হয় আবর্জনা তুলে সেগুলো আবার ওই নালার পাশেই রেখে দেয়া হয়। ফলে আবার বৃষ্টি হলে সে সকল আবর্জনা ওই নালাতে গিয়েই পড়ে। এছাড়া ঢাকার অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং অপরিকল্পিত নগরায়নও জলাবদ্ধতার জন্য দ্বায়ী। অপরিকল্পিত নগর গড়ে ওঠায় ঢাকায় পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা হয় না।

জলাবদ্ধতার  জন্য শুধুমাত্র কর্তৃপক্ষকে দায়ী করলেই হবে না, আমাদেরকেও সচেতন হতে হবে। যেখানে-সেখানে ময়লা, প্লাস্টিকের বোতল, আবর্জনা আমরাই ফেলি। আর এসব অপচনশীল আবর্জনা আমাদের ড্রেন, নালা বদ্ধ করে দেয়। আবার নালা বা ক্যানেলের গভীরতাও বিনষ্ট করে। ফলে আমরা জলাবদ্ধতার ভুগী হই। আআমদের সৃষ্ট সমস্যা তখন আমাদেরই গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। তাই আমাদের হতে হবে সচেতন। আমরা যাতে যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা না ফেলি সেদিকে আমাদের নজর রাখতে হবে।

জলাবদ্ধতা নিরশনে শুরুতেই আমাদের কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। বার বার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও কেন তার ফলাফল আমরা পাচ্ছি না তার সঠিক জবাব দিতে হবে। এছাড়া ঢাকার নালা এবং খালগুলো যাতে দখলমুক্ত থাকে, সেদিকে নজর দিতে হবে। আবার ঢাকায় অবস্থিত খালগুলোর  প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিতকরণ করতে হবে। খালগুলোর পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গভীরতা এবং এর প্রশস্ততা বৃদ্ধি করতে হবে। ড্রেনে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে যাতে বিরত থাকে নগরবাসী, সে বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়া নগরায়নের জন্য যেসকল ভবন নির্মাণ হয়, অনেক সময় সেসকল ভবনের কাঁচামাল এনে জড়ো করা হয় রাস্তার উপর। আর এর ফলে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। ভবনের কাঁচামাল যাতে রাস্তায় না রাখা হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। আবার নতুন জলাধার নির্মাণ করে জলাবদ্ধতা নিরশনের পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। 

আর এ সব কথার শেষ কথা একটাই আমরা সচেতন হলেই এই সমস্যার হাত থেকে নিস্তার পাব আমরা।


লেখক: জুনিয়র ইন্টার্ন, সংবাদ সারাবেলা

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.