× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

বিশ্বমন্দার আশঙ্কা ও বাংলাদেশের সতর্কতা

সৈয়দ ফারুক হোসেন

০৭ নভেম্বর ২০২২, ০১:৫০ এএম

বিশ্বমন্দার প্রভাব একেক দেশের ক্ষেত্রে একেক রকম হয়। আয়, সঞ্চয়, বিনিয়োগ, উৎপাদন, আর্থিক খাত, বাজার, কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্যে সরাসরি এর প্রভাব পড়ে। অতীতে কোনো কোনো দেশে দুর্ভিক্ষের উৎসও ছিল বিশ্বমন্দা। কাজেই সামান্য সংকেত পেলেই বিশ্বমন্দা মোকাবিলায়  সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। 

আগামী বছর (২০২৩ সালে) যে বিশ্বমন্দার আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে, তার মূল কারণ কোভিড-১৯ এর প্রভাবে দেশে দেশে অর্থনৈতিক যে বিপর্যয় নেমে এসেছিল তা থেকে পুনরুদ্ধার হতে না হতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানি তেল ও বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। মূল্য্ম্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহার বাড়াতে গিয়ে সংকট আরও বেড়েছে। 

শিল্প উৎপাদন ও ভোগ্যপণ্য ব্যবসায় পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। অন্যদিকে প্রায় সব দেশের মুদ্রার বিপরীতে বেড়েছে ডলারের দাম। আমদানি ব্যয় মেটাতে গিয়ে টান পড়েছে অনেক দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। আগে থেকে অর্থনৈতিক সমস্যায় থাকা দেশগুলোর অবস্থা আরও নাজুক হয়ে পড়েছে। সব মিলিয়ে আরেকটি বিশ্বমন্দা এড়ানো যেন কঠিন হয়ে পড়েছে। মূলত করোনাকালীন বিশ্ব অর্থনীতি এক সংকটের মুখে পড়ে। করোনা-পরবর্তী বিশেষ করে গত বছরের মাঝামাঝি থেকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের দিকে মনোযোগ দিয়েছিল বিশ্ব। ঘুরেও দাঁড়াচ্ছিল প্রায়। এরই মধ্যে হঠাৎ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বকে এক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়। ফলে এক ধরনের অনিশ্চিত সংকট পার করছে বিশ্ব। বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের ৩০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করে রাশিয়া ও ইউক্রেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও ইউক্রেনের উৎপাদিত খাদ্যশস্য ঠিকমতো রপ্তানি করতে না পারার ফলে বিশ্ব সরবরাহজনিত সংকটের মুখে পড়ে। ফলে সরবরাহ সংকটজনিত কারণে এসব দেশের উৎপাদিত খাদ্যশস্যের দাম বেড়ে যায়। এরই মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ে আমদানিনির্ভর দেশসমূহ। দ্রব্যের দাম বাড়ার ফলে তাদের আমদানি ব্যয় বেড়ে যায়। চাপে পড়ে দেশগুলোর রিজার্ভে। ফলে দেশগুলো এক ধরনের অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়েছে। এরই মধ্যে শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া হলেও আরো দেউলিয়া হওয়ার সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছে প্রায় ৯টি দেশ। অর্থাৎ বলা যায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রায় পুরো বিশ্বকে ভোগাচ্ছে। ১৯৮২ সালের মন্দারও প্রধান কারণ ছিল তেলের দাম। ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামিক বিপ্লবের সময় থেকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে থাকে। মূল্যম্ফীতির হার বেড়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, জাপানসহ উন্নত দেশগুলো ব্যাপক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করে। বিভিন্ন দেশে সুদের হার বেড়ে গিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে দেখা দেয় বিপর্যয়। বেড়ে যায় বেকারত্ব। ১৯৯১ সালের মন্দার পেছনে কারণ ছিল পারস্য উপসাগরীয় যুদ্ধের ফলে ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং তেলের দাম বেড়ে যাওয়া। ২০০৯ সালের বিশ্বমন্দার বড় কারণ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক খাতে ধ্বস।  কোভিড-১৯-এর কারণে ২০২০ সালে একের পর এক লকডাউনে স্তব্ধ হয়ে যায় স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড। বিশ্ব অর্থনীতির ওপর ধ্বংসাত্বক প্রভাব ফেলে এই অতিমারি। ফলে বিশ্বমন্দা ছিল অবধারিত। সারাবিশ্বে বর্তমানে আলোচিত শব্দ  ‘বিশ্বমন্দা’। জাতিসংঘ থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানরা বৈশ্বিক মন্দা নিয়ে সতর্ক অবস্থানে যাওয়ার কথা বলছেন।

 সম্প্রতি বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের এক জরিপে দেখা গেছে, শীর্ষস্থানীয় প্রতি ১০ জন অর্থনীতিবিদের সাতজনই মনে করছেন ২০২৩ সালে দেখা দেবে বিশ্বমন্দা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান নেড ডেভিস রিসার্চ বলছে, আগামী বছর বিশ্বমন্দা হওয়ার আশঙ্কা ৯৮ শতাংশ। আসন্ন বৈশ্বিক মন্দার কারণে আমাদের রপ্তানিতে এক ধরনের শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে পোশাক খাত নিয়ে; যা বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস। বাংলাদেশ রপ্তানি পণ্যের প্রধান বাজার ইউরোপ ও আমেরিকা। সাধারণত এসব দেশে মন্দা দেখা দিলে তার প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের রপ্তানিতে। খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে ভুগছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। ফলে তৈরি পোশাক-চামড়াপণ্যসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্যের চাহিদা কমেছে। ২১ আগস্ট গণমাধ্যমের তথ্যানুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক খুচরা বিক্রেতা ও বাংলাদেশের পোশাক পণ্যের বড় ক্রেতা ওয়ালমার্ট চলতি মাসে সারা বিশ্বের উৎপাদকদের দেওয়া শত শত কোটি ডলারের পণ্যের ক্রয়াদেশ বাতিল করেছে। মূলত মূল্যস্ফীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তারা কেনাকাটা কমিয়ে দেওয়ায় খুচরা বিক্রেতারা পণ্য ক্রয় করতে পারছে না। ফলে ক্রয়াদেশ কমিয়েছে এসব কোম্পানি। উন্নত দেশগুলোর তুলনায় অনেক উন্নয়নশীল বা স্বল্পোন্নত দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি সাধারণত বেশি হয়ে থাকে। উন্নত দেশে অর্থনীতির আকার ইতোমধ্যে অনেক বড় হওয়ার কারণেও স্বাভাবিকভাবে প্রবৃদ্ধির হার তুলনামূলক কম হয়। কাজেই বিভিন্ন দিক বিবেচনায় নিয়ে বিশ্বমন্দার বিষয়টি দেখতে হয়। এর আগে প্রতিটি মন্দার যেমন আলাদা আলাদা কারণ ছিল, তেমনি মিলও ছিল কিছু ক্ষেত্রে। ১৯৭৫ সালের মন্দার প্রধান কারণ জ্বালানি তেলের দাম। 

আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে যেসব দেশ ইসরায়েলকে সমর্থন জানিয়েছিল, সেসব দেশে জ্বালানি তেল রপ্তানি বন্ধ করে দেয় আরব দেশগুলো। ফলে জ্বালানি তেলের উৎপাদন ও সরবরাহ ভয়াবহভাবে বিঘ্নিত হয়। তেলের দাম ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় ধস নামে অনেক দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এ পর্যন্ত বিশ্বমন্দা হয়েছে পাঁচবার। ১৯৭৫, ১৯৮২, ১৯৯১, ২০০৯ এবং ২০২০ সালে। ২০০৯ সালের আগে মন্দা নিয়ে আইএমএফের ব্যাখ্যা ছিল কিছুটা ভিন্ন। সে অনুসারে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হয়েছে আরও কয়েকটি বিশ্বমন্দা।আবার একক কোনো দেশের মন্দা আর বিশ্বমন্দা এক নয়। একক দেশের ক্ষেত্রে 'টু-কোয়ার্টার্স মেট্রিক' বা দুই প্রান্তিকের হিসাব বিবেচনায় নেন অর্থনীতিবিদরা। তাঁদের মতে, পর পর দুই প্রান্তিকে জিডিপির আকার কমে গেলে সে দেশের অর্থনীতি মন্দায় পড়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ (এনবিইআর) সংজ্ঞাটি কিছুটা অনুসরণ করে। তবে সংস্থাটির মতে, এর সঙ্গে বেকারত্বসহ আরও কিছু সূচকেও মন্দার প্রতিফলন থাকতে হবে। যে কারণে অনেক সময় দেখা যায় যে, পর পর দুই প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ঋণাত্বক হলেও সংশ্নিষ্ট অন্য কিছু সূচক ইতিবাচক ধারায় থাকায় মন্দার ঘোষণা দিচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র। 

সংকট উত্তরণে  নিম্নোক্ত পরিকল্পনাসমূহ গ্রহণ করা যেতে পারে। এক. আমদানি ব্যয় হ্রাস করা, অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফর বন্ধ এবং সরকারি ব্যয় হ্রাসসহ সংকট উত্তরণে যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা দ্রুত কার্যকরে আরো জোর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দুই. দেশে বর্তমান জ্বালানি মজুদের যে সক্ষমতা তা আরো দীর্ঘায়িত করে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি নীতিমালা প্রণয়নের পাশাপাশি দেশে নিজস্ব গ্যাস আবিষ্কার, উত্তোলন ও ব্যবহারে অধিক মনোযোগী হওয়া অর্থাৎ স্থায়ীভাবে জ্বালানি উত্তোলনের ব্যবস্থা করতে হবে। তিন. আমদানিনির্ভরতা কমাতে আমাদের নিজস্ব উৎপাদন বাড়াতে হবে। চার. রপ্তানি বাড়াতে পোশাক খাতের পাশাপাশি অন্য খাতকেও গুরুত্ব দিতে হবে। অর্থাৎ রপ্তানি বহুমুখীকরণের দিকে মনোযোগ দিতে। পাঁচ. বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা ও পাচার রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। সংকট কাটাতে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন ও কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। সর্বোপরি, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মন্দা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য শঙ্কার। পোশাক রপ্তানি হ্রাস পেলে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার আয়ও হ্রাস পাবে। এদিকে আমাদের প্রবাসী আয়ও পর্যাপ্ত না। ফলে এক ধরনের শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। অর্থাৎ আয় হ্রাস পাওয়া মানে রপ্তানিশিল্পে ধস নামা। ফলে এর প্রভাব পড়বে সামগ্রিক অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে। এরই মধ্যে আমাদের অর্থনীতিতে এক ধরনের সংকটের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে প্রায় ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ। পরিবহন ভাড়াও বেড়েছে ২২ শতাংশ। বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামও। অর্থাৎ সামগ্রিক অর্থনীতির প্রতিটি খাতে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। এরই মধ্যে যদি বৈশ্বিক মন্দায় আমাদের রপ্তানি আয় কমে আসে, তা আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে; তা সহজেই বলা যায়। পাশাপাশি প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকা আমাদের দুরূহ হয়ে দাঁড়াবে। যদিও অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, মন্দার কারণে কম মূল্যের পোশাকের চাহিদা বাড়তে পারে। বাংলাদেশ এখনো কম মূল্যের পোশাক রপ্তানি করে থাকে। ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়তে পারে। এতে পোশাক খাতে রপ্তানি বাড়লেও তা স্বস্তি দিতে পারবে বলে মনে হয় না। বিশ্ব অর্থনীতি এখন এক অনিশ্চয়তার মধ্যে প্রবেশ করেছে। ভুগছে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে। বিশ্বের প্রায় দেশ অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হতে শুরু করেছে। সংকুচিত হচ্ছে বিশ্বের প্রায় দেশের অর্থনীতি। ধারণা করা হচ্ছে, বিশ্ব এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দার দিকে দাবিত হচ্ছে। সর্বোপরি নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে, বিশ্ব অর্থনীতি একটি ভয়াবহ মন্দার মুখে পড়তে যাচ্ছে। আর স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপরও। বাংলাদেশে এরই মধ্যে এর প্রভাব পড়া শুরু করছে। বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে আমাদের আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস রপ্তানি এবং প্রবাসী আয়। কোভিড মহামারি অতিক্রমের পর আমাদের রপ্তানিতে সুবাতাস বয়ে যাচ্ছে। যদিও গত তিন মাস আগের মাসগুলোর তুলনায় কমেছে। রপ্তানি আয়ের প্রধানতম খাত হচ্ছে পোশাকশিল্প। রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮২ শতাংশ-ই আসে পোশাকশিল্প থেকে।

আধুনিক অর্থব্যবস্থায় অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইউরোপে প্রথম মন্দা দেখা দেয়। আধুনিক বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী মন্দা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে। এর ব্যাপ্তি ছিল ১৯২৯ থেকে ১৯৩৯ সাল। ১৯২৯ সালে অক্টোবরে মাত্র দুই দিনে ধ্বংস হয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজার। কয়েক দিনের মধ্যে শিল্প কলকারখানায় উৎপাদনে ধ্বস নামে। মাত্র এক বছরের মাথায় বেকার হয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্রের এক কোটি মানুষ। এ মহামন্দার প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রের সমাজ ও জনজীবনেও মারাত্মকভাবে পড়ে। বিশ্বব্যাংক এ বিষয়ে যে আশঙ্কা করেছে সেটি বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ বৈশ্বিক এ সংস্থাটি বলছেন সম্ভাব্য এই মন্দায় মারাত্মক পরিণতি ভোগ করবে মূলত উঠতি বাজার ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতি।বাংলাদেশের সামনে কয়েকটি বিষয় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আসবে। সেগুলো হলো: রফতানি আয় কমে যেতে পারে, আমদানি করা খাদ্য পণ্যের দাম বাড়তে পারে, মন্দায় বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলে তার সঙ্গে দেশের বাজারের সমন্বয় সাধন করা ও রেমিট্যান্স কমতে পারে। 

এছাড়া বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে খাদ্য পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা। কারণ অনেক গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য পণ্য বাংলাদেশকে আমদানি করতে হয়।বৈশ্বিক মন্দা দেখা দিলে খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে সেটি প্রভাব ফেলবে। আমদানি করা পণ্যগুলোর দাম বাড়বে। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে ম্যালপাস বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি ১৯৯০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য-হ্রাস প্রচেষ্টায় সবচেয়ে বড় আঘাত হেনেছে। এই মহামারি ২০২০ সালে প্রায় ৭০ মিলিয়ন মানুষকে চরম দারিদ্রের দিকে ঠেলে দিয়েছে এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ এ পরিস্থিতি আরও খারাপ করার ঝুঁকিতে ফেলেছে। সুতরাং এখন যদি বিশ্ব মন্দা আসে, তবে এটি গড় আয়কেও হ্রাস করবে।এখন উন্নত অর্থনীতির কারণে বিশ্ব অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং পরিবেশের মুখোমুখি হচ্ছে। এর মারাত্মক প্রভাব রয়েছে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো বিপদে পড়েছে। 

গভীর উদ্বেগের বিষয় হলো যে, এই পরিস্থিতি ও প্রবণতা ২০২৩-২০২৪ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। মন্দার ‘খুব কাছাকাছি’ রয়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। কেননা বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, সুদের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ক্রমবর্ধমান ঋণের বোঝা উন্নয়নশীল বিশ্বকে জর্জরিত করছে। বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির জন্য ২০২৩ সালের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৩ শতাংশ থেকে ১ দশমিক ৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে, এটি ভয়াবহভাবে বিশ্ব মন্দার কাছাকাছি। এদিকে বিশ্বে প্রতি বছর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ১ শতাংশ ধরা হয়ে থাকলে যদি বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধির তুলনায় অনেক ধীর গতিতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়, তার মানে মানুষ পিছিয়ে পড়ছে। ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা আশঙ্কা তৈরি হয়েছে । সে কারণে ইতোমধ্যেই আগাম প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈশ্বিক অর্থনীতির এ হালের জন্য এর আগে ইউক্রেন যুদ্ধ আর পরাশক্তি দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞাকেই কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশের মানুষকে প্রতি বর্গ ইঞ্চি জমিতে শস্য আবাদের পরামর্শ দিয়েছেন যাতে করে উৎপাদন বাড়িয়ে মানুষ সঞ্চয় করতে পারে।


লেখক: রেজিস্ট্রার. বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.