× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

ঢাবি শিক্ষক ড. মিজানের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ

এখনও তদন্ত শুরু করেনি প্রশাসন

শাহনাজ পরভীন এলিস

০৫ জুন ২০২২, ০৩:০০ এএম । আপডেটঃ ০৫ জুন ২০২২, ০৪:১৩ এএম

ড. মো. মিজানুর রহমান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এবিএম শহিদুল ইসলামের সঙ্গে একই বিভাগের আরেক শিক্ষক ড. মো. মিজানুর রহমানের অসদাচরণের ঘটনা এখনও তদন্ত করেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেজ স্টাডিজ অনুষদের ডিন (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল মঈন সংবাদ সারাবেলাকে জানিয়েছেন, ‘ঘটনাটি খুবই অনাকাক্সিক্ষত ও দুঃখজনক। আমরা অভিযোগ পেয়েছি। গত ১২ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই অনুষদের জার্নাল কমিটির সভার ওই দিনের ঘটনার প্রেক্ষাপট তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ওই ঘটনায় গত ১৬ মে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এবিএম শহিদুল ইসলাম। শাহবাগ থানায় করা ওই জিডির নাম্বার ৮৬৪। এছাড়া এ ঘটনার পর বিভাগের একাডেমিক কমিটির জরুরি সভায় অধ্যাপক মিজানের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দেন অধ্যাপক ড. এবিএম শহিদুল ইসলাম। শাহবাগ থানায় করা জিডি এবং বিভাগের একাডেমিক কমিটির সদস্যদের কাছে দেওয়া অভিযোগে চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম দাবি করেন, ‘গত ১২ মে জার্নাল কমিটির ওই সভায় অধ্যাপক মিজান আমাকে অকথ্য ও কু-রুচিপূর্ণ ভাষায় গালাগাল করে মারতে আসেন। এ সময় আমি তাকে রুম থেকে চলে যেতে বলি। তারপরও মিটিংয়ের মধ্যেই আমাকে মারার জন্য কয়েকবার তিনি তেড়ে আসেন। একপর্যায়ে জার্নালের সম্পাদক অধ্যাপক ড. হরিপদ ভট্টাচার্য এবং অধ্যাপক ড. সমীর কুমার শীল তাকে থামানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তারপরও ড. মিজান আরও দু’বার আমার দিকে হাত বাড়িয়ে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করতে থাকেন। এতে আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যাই এবং অসুস্থ হয়ে পড়ি।’ এরপর ব্যক্তিগত নিরাপত্তার স্বার্থে শুভাকাক্সক্ষীদের পরামর্শে থানায় অধ্যাপক মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি করতে বাধ্য হই।

ড. মো. মিজানুর রহমান

অভিযোগের ব্যাপারে অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এবিএম শহিদুল আমারও শিক্ষক, গুরুজন। আমি তাকে শ্রদ্ধা করি। ঘটনার দিন মার্কেটিং বিভাগের জার্নাল কমিটির ওই সভায় একটি রিপোর্টের ব্যাপারে স্যারের সাথে আমার মতবিরোধ হয়। এ নিয়ে কিছুটা উত্তপ্ত তর্কবিতর্ক হতে থাকলে একপর্যায়ে তিনি আমাকে রুম থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। আর কিছু বলতে চাই না। বরং এ ঘটনার পর পরই আমি তার কাছে দু:খ প্রকাশ করেছি। একাডেমিক কমিটির জরুরি সভায় আমাকে দিয়ে তার কাছে ক্ষমা চাওয়ানো হয়েছে। বিষয়টি তো সেখানেই মিটে যেত পারত। বিন্তু তিনি তা করেননি। থানায় আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন।’ এসব কথা বলার পর অধ্যাপক মিজান, এ ঘটনায় রিপোর্ট লেখার ক্ষেত্রে ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে সভায় উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী অপর তিন শিক্ষক- অধ্যাপক ড. হরপিদ ভট্টাচার্য, অধ্যাপক ড. সমীর কুমার শীল ও অধ্যাপক ড. ইসমাইল হোসনে সাথে কথা বলার অনুরোধ জানান তিনি।

পরে ঘটনার বিস্তারিত জানতে তাদের সাথেও কথা হয়। গত ১২ মের সভায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা জার্নাল কমিটির সম্পাদক অধ্যাপক ড. হরিপদ ভট্টাচার্য বলেন, ‘সিনিয়র এক শিক্ষকের সাথে জুনিয়রের এ ধরনের উত্তপ্ত বাক্য বিনিমিয় খুবই অশোভন, দুঃখজনক। ঘটনা চলাকালে কথাবার্তার একপর্যায়ে ড. মিজান অধ্যাপক শহিদুলের ওপর কয়েকবার তেড়ে গেছেন ঠিকই, কিন্তু মারামারি হয়নি। মিজার খুব এগ্রেরসিভ ছিলেন কিন্তু আমাদের কথায় পরে মাফও চেয়েছেন। তাই এ ঘটনায় অধ্যাপক শহিদুল থানায় জিডি না করলেও পারতেন।’ 

ঘটনাস্থলে থাকা কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. সমীর কুমার শীল বলেন, ‘তারা দু’জনই আমার শিক্ষক। এ ধরনের ঘটনা মোটেই কাম্য নয়। তবে ঘটনার পর ড. মিজান তো বিভাগীয় সভায় প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছেন, তারপরও অধ্যাপক শহিদুল স্যার কেন গণমাধ্যকর্মীদের কাছে গেলেন, থানায় জডিও করলেন- এসব অপ্রীতিকর।’

ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে কমিটির আরেক সদস্য অধ্যাপক ড. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘তারা দু’জনই আমার কাছে শ্রদ্ধাভাজন, সিনিয়র। তবে অনাকাক্সিক্ষত এসব ঘটনায় গণমাধ্যমে লেখালেখি হওয়ায় বাড়ছে সমালোচনা। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যলয়ের শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে।’ ঘটনা তদন্ত করে দ্রুত সুরাহার দাবি করেন তিনি।

এদিকে মার্কেটিং বিভাগের জার্নালে যে শিক্ষকের রিপোর্ট অনুমোদন না হওয়া নিয়ে এমন ঘটনা ঘটল  তিনি হলেন একই বিভাগের প্রভাষক রুকসার জাবীন। এ বিষয়ে সংবাদ সারাবেলার পক্ষ থেকে টেলিফোনে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই দুই শিক্ষকের ব্যাপারে জানতে চাইলে ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক নওশীন রহমান জানান, ‘ছেলে ওই বিভাগে পড়াশোনা করায় অধ্যাপক ড. শহিদুল এবং অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমানের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো। অধ্যাপক মিজানের মধ্যে হঠাৎ রেগে যাওয়ার একটা ব্যাপার আছে। তবে অধ্যাপক শহিদুল ধীরস্থির প্রকৃতির। নারী সহকর্মীদের সঙ্গে তাদের কারো কোন সমস্যা আমি দেখিনি।’ 

অধ্যাপক ড. এবিএম শহিদুল ইসলাম, চেয়ারম্যান, মার্কেটিং বিভাগ

অভিযুক্ত শিক্ষক ড. মিজান একাডেমিক কমিটির সভায় প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসন উপাচার্য বরাবর কেন অভিযোগ দিলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ড. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিভাগীয় জার্নাল কমিটির ড. মিজানের ওইদিনের অসৌজন্যমূলক ও ন্যক্কারজনক ঘটনায় আমি খুবই মর্মাহত। তারপরও সাথে সাথেই উপাচার্যের কাছে অভিযোগ বা আইনের আশ্রয় নেইনি। এ ব্যাপারে প্রথমে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ হিসেবে সরাসরি উপাচার্য মহোদয়কে মৌখিকভাবে জানাই। তারপর বিভাগের সিনিয়র শিক্ষকদের পরামর্শে গত ১৭ মে একাডেমিক কমিটির জরুরি সভা আহ্বান করি। কারণ আমি মনে করেছি বিভাগীয় চেয়ারম্যানের সাথে এ  ধরনের অসদাচরণের পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগের সহকর্মীদের সর্বপ্রথম জানানো আমার নৈতিক দায়িত্ব। তাই একাডেমিক সভা ডেকে সবাইকে জানানোর ব্যবস্থা করি। সভায় আমি দু’টি প্রস্তাব তুলে ধরি। তা হলো- ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর বিষয়টি প্রেরণ করা এবং তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমানকে বিভাগের সকল একাডেমিক কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া। সেই সভায় অসৌজন্যমূলক আচরণের জন্য অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমানকে আমার কাছে নি:শর্ত ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়। কিন্তু ড. মিজানুরের ঔদ্ধত্যপূর্ণ এমন অসদাচারণকে আমি কিছুতেই মেনে নিতে পরিনি। তাই ক্ষমা করতে অপারগতা প্রকাশ করি।’

অধ্যাপক এবিএম শহিদুল আরও অভিযোগ করেন, ‘ড. মিজানের এ ধরনের অপরাধ এই প্রথমবার এমন নয়। এর আগেও তিনি আমার সাথে এবং বিভাগীয় প্রাক্তন সিনিয়র শিক্ষক অধ্যাপক ড. ফজলুল হক শাহ্, অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবুল কালাম আজাদ এবং অধ্যাপক ড. সায়েদুল হক খানের সাথে করেছেন; আবার ক্ষমাও চেয়েছেন। কাজেই বারবার সিনিয়র শিক্ষকের সাথে অসদাচরণ করা আর ক্ষমা চাওয়া তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কাজেই এবার আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার আমি সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই। তাই গত ১৮ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে চিঠি দেই। কিন্তু এ ঘটনায় এখনো কোন তদন্ত কমিটি করা হয়নি এবং তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে না। বরং অভিযোগ উঠেছে- তাকে বিশ্বদ্যিালয়ের একাডেমিক পরীক্ষার প্রশ্নপ্রত্র তৈরি ও সংশোধনের কাজে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ ধরনের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজে যুক্ত করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন অনুষদের শিক্ষকরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহফুজুল হক জানান, তার জানা মতে অফিসিয়ালি ড. মিজানকে পরীক্ষার প্রশ্নপ্রত্র তৈরি ও সংশোধনের কাজে যুক্ত করা হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এর আগে অধ্যাপক সৈয়দ আবুল কালাম আজাদ স্যার চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় অধ্যাপক মিজান মার্কেটিং বিভাগে রাতের বেলায় আগুন ধরিয়ে দেয়ার ঘটনায় অনুষদ থেকে তার বিরুদ্ধে একটি তদন্ত কমিটিও তদন্ত গঠন করা হয়। এছাড়া অধ্যাপক ড. এমাজ উদ্দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থাকাকালীন কোচিং সেন্টারে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন দেওয়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে ভর্তি সংক্রান্ত কাজ থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল। পরে নানা তদবির করে তখনও পার পেয়ে যান। এরকম আরও নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক ড. মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে। 

বিশ্ববিদ্যালয় মার্কেটিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী, বর্তমানে কলেজ শিক্ষক আব্দুল হাকিম বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই দু:খজনক। এমন ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি। দুজনই আমার শিক্ষক। শহিদ স্যারের মতো মানুষের সাথে এমন ঘটনার দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বিভাগের আরেক শিক্ষক বলেন, ‘ঘটনা জানার পর ড. মিজানের অতীতের রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে আমি প্রশ্ন রাখছি। অন্যথায় নিজ শিক্ষাগুরুর সঙ্গে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক আচরণ তিনি করতে পারতেন না। এর আগেও কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষকের সঙ্গে তিনি একই রকম অশোভন আচরণ করেছেন। সেসব ঘটনার পর যদি ড. মিজানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতো তাহলে অধ্যাপক শহিদুল স্যারের সাথে এমনটি ঘটতো না। আশাকরি এবার উপাচার্য মহোদয় সঠিক বিচার করবেন।’

মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ওই বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এবিএম শহিদুল ইসলামের করা সাধারণ ডায়েরির তদন্ত কর্মকর্তা হলেন শাহবাগ থানার এস আই হারুন অর রশীদ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল শনিবার এস আই হারুন সংবাদ সারাবেলাকে জানান, ‘অভিযোগটি থানায় গ্রহণ করা হয়েছে। এরপর ঘটনায় অভিযোগকারীসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.