ও
আমার বন্ধু গো
চির সাথী পথ চলার
তোমারই জন্য গড়েছি আমি
মঞ্জিল ভালোবাসার....
কেয়ামত
থেকে কেয়ামত চলচ্চিত্রের তুমুল জনপ্রিয় এই গানটি শুনলেই সবার
প্রথমে যার কথা মাথায় আসে- তিনি আমাদের সকলের প্রিয় নায়ক সালমান শাহ। নব্বই
দশকে বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর ও মেধাবী নায়ক বলা হয় সালমান শাহকে। ঢাকাই সিনেমার
নায়কদের নিয়ে কথা বলতে গেলেই সবার আগে তার ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। ‘ক্ষণজন্মা’ এই নায়ককে ‘ঢালিউডের পোস্টার বয়’ বলা হয়। পাশাপাশি,
সেই সময়কার বাংলা ছবির ‘ফ্যাশন
আইকন’ও তিনি। জীবদ্দশায় তিনি মাত্র ২৭টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। ১৯৯৬ সালের এই দিনে
অসংখ্য ভক্তকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান এ নায়ক। আজ তার ২৬ তম মৃত্যুবার্ষিকী। দেখতে
দেখেতে ২৬ বছর পেরিয়ে গেল সালমান শাহ নেই। মৃত্যুর দুই
যুগ পরও চলচ্চিত্রের মানুষেরা আফসোস করে বলেন, ‘আজও কেউ
পূরণ করতে পারেননি সালমান শাহের শূন্যস্থান।’
বাবা-মায়ের
দেয়া নাম ‘শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন’। চলচ্চিত্রে এসে নাম নেন ‘সালমান শাহ’। ১৯৭০
সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবার নাম
কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মা নীলা চৌধুরী। সালমান শাহ ১৯৯২ সালের ১২ আগস্ট ভালোবেসে
বিয়ে করেন সামিরাকে।
১৯৯৩
সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার মাধ্যমে ঢালিউডে
পা রাখেন সালমান শাহ। প্রথম ছবির পর থেকে
সালমানের ক্যারিয়ারে একের পর এক যোগ হতে থাকে সাফল্যের পালক। প্রথম ছবিতে মৌসুমীর
সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন, পরে শাবনূরের সঙ্গে সফল জুটি গড়ে ওঠে সালমানের। এসব জুটির
একেকটি ছবি বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে আজও মাইলফলক হয়ে আছে। এ ছাড়া তার সঙ্গে অভিনয়
করেছেন শাবনাজ, শাহনাজ, লিমা, শিল্পী, শ্যামা, সোনিয়া,
বৃষ্টি, সাবরিনা, কাঞ্চি ও অন্যান্য
নায়িকারা। শেষ ছবিটি পর্যন্ত সমানতালে নিজের জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছিলেন সালমান শাহ।
বাংলা চলচ্চিত্রের সাফল্যের রাজপুত্র হিসেবেও সালমানকে অভিহিত করা হয়।
১৯৯৬
সালের ৬ সেপ্টেম্বর চলচ্চিত্র অঙ্গনে বড় শূন্যতা তৈরি করে বিদায় নেন এ নায়ক। তার
ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃত্যুর প্রায় দুই দশক পর পিবিআই নিশ্চিত করে, সালমান শাহ আত্মহত্যা করেন।
তবে মৃত্যুর এত বছর পরেও সালমান শাহর তারকাখ্যাতি সমুজ্জ্বল। তার পরবর্তীকালে যারা
চলচ্চিত্রে নায়ক হওয়ার জন্য এসেছেন প্রায় প্রত্যেকেই বলেছেন, তাদের অনুপ্রেরণার প্রধান উৎস সালমান।
যেদিন
সালমান শাহের মৃত্যু হয় সেই দিন তার মৃত্যুতে সারাদেশে শোক নেমে এসেছিল। শোক সইতে
না পেরে অনেক নারী ভক্ত আত্মহত্যার পথও বেছে নিয়েছিলেন। এরপর অনেক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেছে বাংলা
চলচ্চিত্র-শিল্প। কিন্তু আজও সালমান শাহ’র বিকল্প হয়ে ওঠতে পারেননি কেউ।