× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

রশোমন ইফেক্ট নিয়ে এত আলোচনা কেন?

২৩ এপ্রিল ২০২২, ০০:২৫ এএম । আপডেটঃ ২৩ এপ্রিল ২০২২, ০০:২৬ এএম

রশোমন সিনেমার একটি দৃশ্য

পৃথিবীতে প্রতিদিন কত ঘটনাই না ঘটে। এসব ঘটনার কোনটা যে সত্য আর কোনটা যে মিথ্যা তা নির্ণয় করা আসলেই কঠিন। কিন্তু আমরা কিছু ধারণার উপর ভিত্তি করে কোন ঘটনা সত্য না মিথ্যা তা  নির্ধারণ করে দেই।

আমরা বহুদিন যাবত যা বিশ্বাস করছি বা চোখের সামনে সচরাচর যা কিছু ঘটতে দেখছি সেগুলোকেই সত্য বলে মনে করে নি। কিন্তু নিজেকে কখনো এই প্রশ্ন করি না যে আমরা যা ভাবি বা বিশ্বাস করি, তাই কি প্রকৃত সত্য? রশোমন ইফেক্ট আমাদের মনে এই চিন্তারই সৃষ্টি করে।

 প্রকৃত সত্য বলতে যে আসলে কিছু নেই-রশোমন ইফেক্ট আমাদের সামনে এই বার্তাটাই এনেছে। আজকে মানুষ যেসব বিষয় বা ঘটনাকে চিরন্তন সত্য বলে মনে করছে, একশো বা হাজার বছর পরেও যে সেগুলো সত্য হিসেবে বিবেচিত হবে-তার কোন নিশ্চয়তা নেই। আবার প্রাচীন বা মধ্যযুগে মানুষ যা কিছু সত্য বলে মনে করত আমরা এখন  সেসবের নাম শুনলে নাক সিঁটকাই। ফলে ‘চিরন্তন সত্য’ ধারণাটিও  সময়ভেদে  পরিবর্তিত হয়।  

এককথায় বলতে রশোমন ইফেক্ট হচ্ছে এমন একটি অবস্থা যখন বিভিন্ন মানুষ একই ঘটনার উল্লেখযোগ্যভাবে ভিন্ন, কিন্তু সমানভাবে বিশ্বাসযোগ্য বিবরণ দেয়। এর মধ্যে কোনটা যে সত্য আর কোনটা যে মিথ্যা তা বের করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। 

এটি 'কুরোসাওয়া ইফেক্ট' নামেও পরিচিত। আকিরা কুরোসাওয়া নির্মিত ১৯৫০ সালের জনপ্রিয় সিনেমা রশোমনের নামানুসারে রশোমন ইফেক্টের নামকরণ করা হয়েছে। সিনেমায় একই অপরাধের ঘটনায় চারজন ভিন্ন ভিন্ন সাক্ষীর দ্বারা একটি হত্যার ঘটনাকে চারটি ভিন্ন উপায়ে বর্ণনা করা হয়েছে। একটি ঘটনা সম্পর্কে মানুষের ধারণা তাদের পৃথক ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে যথেষ্ট ভিন্ন হতে পারে, এই বিষয় বোঝানোর জন্য রশোমন শব্দটি প্রায়শই ব্যবহৃত হয়। এমনও সম্ভব যে একটি ঘটনাকে বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্নভাবে বর্ণনা করে, যেখানে তারা নিজেরাও জানে না যে তারা মিথ্যা বলছে।

বর্তমানে 'রশোমন ইফেক্ট' শব্দটি একাধিক সাক্ষীর অবিশ্বস্ততার কারণে, একক ঘটনাকে বিভিন্নভাবে বর্ণনা করা যায় বোঝানোর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। সাক্ষীদের এই অবিশ্বাস্যতা এবং বস্তুনিষ্ঠতার অভাব বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পরিস্থিতিগত পার্থক্যের ফলে হতে পারে।

জাপানি ছোটগল্পের জনক রিয়োনোসুকে আকুতাগাওয়ার, ১৯২০ সালে প্রকাশিত ছোট গল্প 'ইন দ্য গ্রোভ' থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯৫০ সালে আকিরা কুরোসাওয়া রিয়োনোসুকের আরও একটি গল্পের সাথে সমন্বয় করে তৈরি করেন 'রশোমন' সিনেমাটি।

কিয়োটোর একটি রাশোমন গেটের নিচে দাঁড়িয়ে তিনজন পুরুষ; এর মধ্যে একজন পুরোহিত, একজন কাঠুরিয়া এবং একজন কমোনার ঝড় থেকে আশ্রয় নিতে গেলে সেখান থেকে সিনেমার কাহিনী শুরু হয়। যেখানে কাঠুরিয়া এবং পুরোহিত তিন দিন আগে বনের মধ্যে কিভাবে একটি নীরব, শান্ত বাঁশের ঝোঁপে একজন সামুরাইয়ের লাশ খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল সেই কাহিনী নিয়ে আলোচনা করছিল। যেখানে একে একে, অপরাধের সাথে পরিচিত সাক্ষীরা তাদের ঘটনাগুলোর সংস্করণ বর্ণনা করে। কিন্তু যখন তারা প্রত্যেকেই তাদের প্রেক্ষিতে ঘটনা বলে, দেখা যায় যে প্রতিটি সাক্ষ্য যুক্তিযুক্ত কিন্তু ভিন্ন এবং প্রতিটি সাক্ষী নিজেদের অপরাধের সাথে জড়াচ্ছে।

সেখানে এক ডাকাতের বিরুদ্ধে একজন সামুরাইকে হত্যা এবং সামুরাইয়ের স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়। কাঠুরিয়া, পুরোহিত (যিনি হত্যার আগে সামুরাই এবং তার স্ত্রীকে দেখেছেন), সামুরাইয়ের স্ত্রী, দস্যু, এমনকি সামুরাইয়ের প্রেতাত্মাকেও বিচারে তলব করা হয়। কিন্তু তাদের প্রত্যেকের ঘটনার প্রতিটি বিবরণ ভিন্ন এবং পরস্পরবিরোধী। 

রশোমন প্রভাব সাধারণত দুটি নির্দিষ্ট অবস্থার অধীনে ঘটে। প্রথমত, আসলে কী ঘটেছিল তা যাচাই করার কোনো দৃঢ় প্রমাণ নেই, এবং দ্বিতীয়ত, ঘটনাটির একটি রায় প্রদান করার জন্য চাপ থাকে, প্রায়শই একজন কর্তৃত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দ্বারা তা প্রদান করা হয় যারা নিশ্চিত সত্য সনাক্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু রশোমন প্রভাবের ধারণাটি একটি একক, বস্তুনিষ্ঠ সত্যের ধারণাকেই দুর্বল করে দেয়।

সিনেমায় কে সবচেয়ে সঠিক বা সত্য বর্ণনা দেয় তার কোনো স্পষ্ট ইঙ্গিত থাকে না বলে, দর্শকরা তা আলাদা করতে পারে না, যার ফলে তারা কোনো নির্দিষ্ট চরিত্রকে বিশ্বাস করতে পারে না। পরিবর্তে, প্রতিটি সাক্ষ্য যখন সমানভাবে সত্য মনে হয়, তখন দর্শকরা নিজেরাই তাদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্তে পৌঁছায় কে আসল অপরাধী। আর এখানে তখন দর্শকদের সিদ্ধান্তেও বিপুল ভিন্নতা দেখা যায়।

আধুনিক সিনেমায় রাশোমন ইফেক্টের উল্লেখযোগ্য ব্যবহার ২০১৪ সালের চলচ্চিত্র 'গন গার্ল'-এ পাওয়া যায়। এই মিস্ট্রি-থ্রিলারে একজন ব্যক্তি তার স্ত্রীর নিখোঁজ হবার ক্ষেত্রে সন্দেহভাজন হিসেবে শুরুতে থাকেন। সেখানে গল্পের বর্ণনাকারীকে ধীরে ধীরে অবিশ্বস্ত মনে হতে থাকে। তিনি পুরো গল্প জুড়ে কম নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠলে দর্শকরা তখন সত্য খুঁজে বের করতে আরও বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ে।






Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.