সাধারণত রাজপরিবারের সদস্যদের জন্য ভোর ৫টায় রাজকর্মচারীদের দিকনির্দেশনা দেওয়া খুবই অস্বাভাবিক ব্যাপার। এতে কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক যেমন জন্ম নেয়, তেমনি এটিকে অসামাজিক আচরণ হিসেবেও বিবেচনা করেন ঐতিহ্যপ্রেমী ব্রিটিশরা। কিন্তু ২০১৮ সালের গ্রীষ্মে কেনসিংটন প্রাসাদের জুনিয়র কর্মচারীরা নতুন বিবাহিত ডাচেস অব সাসে´ এর কাছ থেকে ভোরবেলা আসা টেক্সট আর ইমেইলে অভ্যস্থ হয়ে পড়েছিলেন।
মেগান তার দিনের কার্যক্রম চালাতেন মার্কিন টাইমলাইনেই। কর্মীরা অভিযোগ করছেন, মেগানের সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক বৈপরত্যও বড় ধরণের সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছিলো। তারা মনে করেন, ‘আমেরিকানরা’ অনেক বেশি’ সরলপথে ভাবেন, সেরকম আচরণও করেন।
এদিকে এই সাবেক অভিনেত্রীর বন্ধুরা পিপলস ম্যাগাজিনকে বলছেন, মেগান ভালো বস হিসেবে সবসময়ই গর্ব করতেন। এমনকি তিনি একবার তার কর্মীদের বিনা পয়সায় খাবার আর আইসক্রিম সরবরাহ করেছিলেন। তবে ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো মনে করে, এভাবে কাউকে খাইয়ে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া ভব্যতার পর্যায়ে পড়েনা। বলা হচ্ছে ১৮ সালের মে মাসে বিয়ের পর অক্টোবর হতেই কর্মচারীদের কাছে বিয়ের স্মৃতি ঝাপসা হয়ে এসেছিলো। তারা মেগানকে ‘ডাচেস ডিফিকাল্ট’ ডাকতে শুরু করেছিলেন।
তারা মনে করেন, আমেরিকান স্টাইলে সোজাসাপ্টা কথা বলে ফেলা আসলে সমস্যা না। কিন্তু তার স্ভাবই ছিলো সবাইকে অকারণ পরামর্ম দিয়ে বেড়ানো। অনেক কর্মচারী তার এই আচরণকে বুলিং বা নীপিড়নও বলছেন। অনেক কমবয়সী কর্মীকে তার আচরণে কষ্ট পেয়ে লুকিয়ে ‘ব্রিটিশ ভব্যতা’ বজায় রেখে নাকি কাঁদতেও দেখা গেছে!
মাস খানেক আগে বাকিংহাম প্যালেস জানিয়েছিলো, তাদের কর্মকর্তারা কিভাবে বুলিং প্রতিরোধ করেন, সেই ব্যাপারে বিষদ রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে। তবে লন্ডনের পাতালে সেই রিপোর্ট কবরস্ত হয়ে গেছে। কারণ প্রাসাদ চায়নি, উপাধি ত্যাগ করা তাদের সদস্য জুটির ব্যাপারে আর কোনও নেতিবাচক খবর প্রকাশ্যে আসুক।
ব্রিটিশ তরুণরা রাজপরিবারে কাজ করাটা অত্যন্ত সম্মানের বলে মনে করেন। কিন্তু মেগান ‘অসভ্য’ আচরণ করে সে ধারাকে কলঙ্কিত করেছেন বলে মনে করেন অনেকেই। তিনি দেশ ছেড়েছেন, উপাধি ছেড়েছে, পরিবার ছেড়েছেন। একই কাজ করতে বাধ্য করেছেন রাজপুত্র হ্যারিকে। সেই হ্যারি এখন যুক্তরাষ্ট্রে কাজ খুঁজছেন। তার প্রিন্স বিভিন্ন জায়গায় সিভি দেবেন, সামরিক বাহিনীর বাইরে অন্য কোথাও কাজ খুঁজবেন, এটা ব্রিটিশরা কখনই ভালোভাবে নেয়নি। কট্টর ব্রিটিশরা শুরু থেকেই আমেরিকান রাজবধুর বিরোধিতা করেছে। এই মনোভাব এখন যেকোনও সময়ের চেয়ে আরও বেশি তীব্র। যদিও মেগানের বন্ধুরা এখনও মনে করেন, তিনি মোটেও নীপিড়ক নন। তিনি অনেক বেশি হাই-স্ট্যান্ডার্ড এর মানুষ। সাধারণ ব্রোকেন ফ্যামেলিতে তার জন্ম হলেও আভিজাত্য ও আভিজাত্যের শিক্ষা ব্রিটিশ রাজপরিবারের স্ট্যান্ডার্ডের অনেক উপরে!- ডেইলি মেইল অবলম্বনে