পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেওয়া নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। রাজ্যের বিশিষ্ট সাহিত্যেকদের কথা মাথায় রেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই সম্মান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। মূলত তাঁর 'কবিতা বিতান' কাব্যগ্রন্থের কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এই ঘোষণার পর পশ্চিমবঙ্গে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ইতিমধ্যেই মমতাকে সম্মান জানানোর প্রতিবাদ করে ২০১৯ সালে পাওয়া অন্নদাশঙ্কর স্মারক সম্মান ফিরিয়ে দিয়েছেন লেখিকা এবং গবেষক রত্না রশিদ বন্দ্যোপাধ্যায়। বিতর্কের এখানেই শেষ নয়। সাহিত্য একাডেমির বাংলা উপদেষ্টা পরিষদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন লেখক এবং সম্পাদক অনাদিরঞ্জন বিশ্বাস। তাঁর স্পষ্ট বিবৃতি, যেভাবে বাংলা কবিতাকে অসম্মান করা হয়েছে, তাতে রীতিমত বিরক্ত তিনি। মঙ্গলবার বিকেলে রত্না এবং অনাদি, দু’জনেই এই পুরস্কার প্রাপ্তির প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
রত্না রশিদ বন্দ্যোপাধ্যায় বা অনাদি, দু’জনের কেউই নিজেদের এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবেন না বলেই জানিয়েছেন। রত্নার কথায়, সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসব বলে তো আর প্রতিবাদ জানাইনি।
অন্য দিকে অনাদি বলছেন, প্রতিবাদ তো প্রতিবাদই। এমন ধরনের অন্যায়ের প্রতিবাদ অতীতে করে এসেছি। এখনও করছি। ভবিষ্যতেও করব।
মমতা বন্দোপাধ্যায়ের এ পুরস্কার প্রাপিÍতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি লিখেছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় অ্যাকাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন? ওর হাম্বা হাম্বা কবিতাটি ওই বইয়ে আছে তো? কোনো দেশের শিল্পী-সাহিত্যিকরা যখন চাটুকার হন, তখন সে দেশের ভবিষ্যত বলতে আর কিছু থাকে না।
অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র মমতার লেখা দুটি কবিতা ব্যঙ্গভরে পাঠ করার ভিডিও ফেসবুকে দেন। মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় সে ডিডিও।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সম্মান প্রাপ্তিতে টুইটারে ব্যাঙ্গের বান ছুঁড়েন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। তিনি লিখেছেন, জাল পিএইচডি, অনুপ্রেরণার ডিলিট, চাতুকারিতার রিট্রিভার্সিপ, বাকি থেকে গেল নোবেল, গতি যেরকম তাতে চান্স আছে বোধহয়। মাননীয় কতরঙ্গ দেখি দুনিয়ায়।
পুরস্কার নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একহাত নেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। সোশ্যাল মিডিয়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা দুটি কবিতার ছবি পোস্ট করে তিনি রীতিমত সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিম চট্টোপাধ্য়ায় আজ আমাদের মধ্যে উপস্থিত থাকলে লিখতেন তিনি সাহিত্য সমাজ, তুমি চেতনা হারায়াইছ? মুখ্যমন্ত্রীকে পুরস্কার দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে চিনি গোটা বিষয়টিকে চাটুকারিতার সঙ্গে তুলনা করেছেন।
মমতার এ পুরস্কার প্রাপ্তি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে উঠেছে আলোচনার ঝড়। বেশিরভাগ ব্যবহারকারী এ কাজের জন্য একাডেমির তীব্র সমালোচনা করেছেন।