× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সমীকরণ মিলছে না

কাজী নাসরীন

০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯:২৯ এএম

নিত্যপণ্যের বাজারে যেন আগুন লেগেছে। অন্যদিকে শুধু বাজারে নয়, প্রায় সব ক্ষেত্রেই বেড়েছে জীবনযাত্রার ব্যয়। সীমিত অর্থে পুরো মাসের হিসাব মেলাতে তাই গলদঘর্ম মধ্যবিত্ত। করোনাকালে অনেকের চাকরি গেছে আবার কারও কমে গেছে আয়। নানা অভ্যাস যেমন ছাড়তে হচ্ছে, কমিয়ে আনতে হয়েছে সঞ্চয়ের বরাদ্দ। পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে কীভাবে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য বিধান করবেন, সংসার চালাতে যেভাবে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সমীকরণ মেলাবেন তা এখন ভেবে দেখার বিষয়। গেল দুই বছরে জীবনধারায় এসেছে নানা পরিবর্তন। বাড়িভাড়া, মাসিক বাজার, নিত্যপণ্য, সন্তানের পড়াশোনা, বিনোদনসহ নানা খাতের ব্যয় কীভাবে কমিয়ে আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা যায়, সেই নিয়ে ভাবতে হচ্ছে নতুন করে। মাসের শুরুতেই হিসাব করে নিন, কোন কোন খাতে আপনার কত টাকা দরকার হবে। প্রতি মাসে এসব খাতে যে পরিমাণ খরচ আগে হতো, এবার সেখান থেকে প্রতি ভাগে কিছুটা কম বরাদ্দ করুন। এভাবে শুরুতেই একটা খসড়া করে নিন। এ ছাড়া কিছু বিষয়ে নতুন করে অভ্যাস তৈরির দরকার পড়তে পারে।

শিশুবান্ধব পরিকল্পনা
আমরা সাধারণ মানুষ বাজারদরের ঊর্ধ্বগতিকে তো আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না, কিন্তু যতটুকু উপার্জন, সেটুকু দিয়ে যাতে পরিবারের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সুখী থাকতে পারি, সেই চেষ্টাটুকু তো করতে হবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নিতে অবশ্যই চাই সঠিক পরিকল্পনা। আর সবার আগে চাই মনের জোর। সুখ-শান্তি কিন্তু অর্থ দিয়ে কেনা যায় না। প্রয়োজনের তালিকায় কিছু কাটছাঁট করতে হলেও যেন পরিবারের কারও মধ্যে হীনম্মন্যতা ভর করতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। ব্যয় সংকোচন কিন্তু অনেক দিক থেকেই পরিবারের জন্য ইতিবাচক। শিশুর হয়তো অনেক আবদার, এখন না হয় তাতে কিছুটা রাশ টানুন। তাতে যেকোনো পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়ার শিক্ষাটাও শিশু এখান থেকেই পাবে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি হয়তো টিউটর রেখে বা কোনো কোচিংয়ে আপনার সন্তানকে পড়ান। এ ক্ষেত্রে পারিবারিক পরিমণ্ডলেই পড়াশোনায় শিশুকে সহযোগিতা করা যেতে পারে। পরিস্থিতি বুঝলে শিশুও হয়তো সব ধরনের আবদার করবে না।

পুষ্টিমানের বিকল্প খাবার গ্রহণ 
কাছাকাছি ধরনের পুষ্টিমানের বিকল্প খাবার গ্রহণ করার অভ্যাস করতে পারেন। অর্থাৎ একই ধরনের পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ ভিন্ন খাবার গ্রহণের অভ্যাস করতে পারেন। আমিষ জাতীয় খাবার শরীর গঠনের জন্য জরুরি। মাছ-মাংসের বিকল্প হতে পারে ডিম কিংবা ডাল। বিভিন্ন রকম ডালের সংমিশ্রণ আমিষের দারুণ এক উৎস। সবজি খিচুড়ি কিংবা হালিম দিয়ে পূরণ হতে পারে এক বেলার আমিষের চাহিদা। নানা ধরনের শস্যবীজ দিয়ে সালাদ করতে পারেন। যেদিন মাছ বা মাংস রান্না হবে, সেদিন যেন পরিবারের বাড়ন্ত শিশু-কিশোর এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের পাতে তা ওঠে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। সপ্তাহের একটা দিন নিরামিষ দিবস হিসেবে পালন করতে পারেন। ওই দিন তিন বেলার খাবারের মেনুতেই রাখতে পারেন নিরামিশ। খাবারে তেল-মসলা কম রাখলেই সেটা শরীরের জন্য ভালো

বদলে ফেলুন খাদ্যাভ্যাস
নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছ খাদ্যপণ্যের দাম। তবু এর মাঝেই নিশ্চিত করতে হবে পরিবারের পুষ্টি। খাবারের পুষ্টিমান বজায় থাকার পাশাপাশি স্বাদেও আসতে পারে ভিন্নতা। ডুবো তেলে ভাজা খাবার সুস্বাদু হলেও স্বাস্থ্যকর নয়। খাদ্যতালিকায় যোগ করতে পারেন পানিতে কিংবা বাষ্পে সেদ্ধ (স্টিম কুকিং) খাবার। এই প্রচন্ড গরমে ভাজাপোড়া খাওয়ার প্রবণতা কমানো উচিত স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনা করেই। অতিরিক্ত শর্করাও বর্জন করা ভালো। বেশি বেশি তেলমসলা খাওয়া কমাতে পারলে খরচ কমে আসবে। আগে হয়তো যে পরিবারে মাসে পাঁচ লিটার তেল বা পাঁচ কেজি পেঁয়াজ লাগত, সেটা কমিয়ে তিন কেজি করলেন। এতেও খরচ কমে আসবে। দেশি ফল ও সবজির মধ্যে যা সহজলভ্য ও দামে সাশ্রয়ী, তা থেকে পূরণ করতে চেষ্টা করুন রোজকার ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা।

উৎসব-আয়োজনে কাটছাঁট
বাংলা নববর্ষ ঈদ পার্বণে হাড়ি ভরা পোলাও-রোস্ট ছাড়াও তো আনন্দ উদ্যাপন হতে পারে! প্রতিবছর বৈশাখ বা ঈদ পার্বণে কেনাকাটায় যে বাজেট থাকে, এখন পরিস্খিতি বিবেচনায় সেটা কমিয়ে আনুন। যাদের জন্য না কিনলেই নয়, যেটুকু না করলেই নয় তার তালিকা করুন। উৎসবে অন্দরসজ্জায় পরিবর্তন আনেন অনেকেই। অন্দরসজ্জার নতুন অনুষঙ্গ না কিনেও কিন্তু বাড়িতে থাকা উপকরণ দিয়ে ভিন্নভাবে ঘর সাজাতে পারেন।

বিনোদনের বেলায়..
পরিবার নিয়ে অনেকেই বছরে দু–একবার নিয়ম করে দূরে কোথাও ঘুরতে যান। অনেকে নিয়মিত বাইরে খেতে যান। কিন্তু এতেই যে কেবল আনন্দ, তা তো নয়। বাড়িতেও নিজেরা আড্ডা দিতে পারেন, সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত থাকতে পারেন। অন্দরে গাছপালা কিংবা পোষা প্রাণী থাকলেও মন প্রফুল্ল থাকে। প্রিয়জনদে কে নিয়ে আনন্দ,-আড্ডা, সখের বাগান নিয়ে ব্যস্ত থাকাও আনন্দময় সময় কাটতে পারে। এতে অনেক খরচ, তা-কিন্তু নয়।

বাহুল্য বর্জন
আগে হয়তো শখের জিনিস দেখলেই কিনে ফেলতেন। সেই অভ্যাসে এখন লাগাম টানুন। প্রয়োজনের অনেক জিনিসও একেবারে আবশ্যক না হলে এখন বিকল্প দিয়ে চালিয়ে নিন। বড় ভাই-বোনদের পুরোনো বই বা পোশাক ছোটরা ব্যবহার করতেই পারে। এতে ভাগাভাগি করার মানসিকতাও গড়ে উঠবে। সৌন্দর্যচর্চাকেন্দ্রে যাওয়ায় অভ্যস্ত হয়ে উঠলে, সেসব সেবার কিছু বাড়িতেই নিজে নিজে নিতে পারেন। অনেক বাড়িতেই ঘটা করে জন্মদিন বা বিশেষ দিবস পালনের চল রয়েছে। এখন অনেকের পক্ষেই সেই অভ্যাস ধরে রাখা কঠিন। লোকে কী ভাববে ভেবে নিজের ওপর চাপ নেওয়া ঠিক হবে না। তবে পরিবারের মাঝে যদি এমন বোধ গড়ে ওঠে যে আয়োজন করে বিশেষ দিবস বা অবসর যাপন করার চাইতে অসহায় প্রাণের জন্য সামান্য কিছু করাটা অনেক বেশি মানবিক, তাহলে হয়তো সহজেই অনেক বাহুল্য বর্জন করা সম্ভব হবে। ছুটির দিনটাতে একটি অসহায় পরিবার বা একজন অসহায় মানুষের সঙ্গে আপনার পরিবারের খাবারের একটি অংশ ভাগ করে নিতে পারেন। আর পরিবার থেকেই এসব শিক্ষা পাবে নতুন প্রজন্ম।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.