দুদিনের সফরে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ভাসানচরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করছেন ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।
শুক্রবার (৩ জুন) বিকেলে ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে তার। গতকাল বৃহস্পতিবার (২ জুন) দুপুর ২টার দিকে নৌবাহিনীর জাহাজে ভাসানচরে পৌঁছান চীনা রাষ্ট্রদূত।
সফরকালে তিনি রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ভাসানচরে তাদের সুযোগ-সুবিধা ও জীবনযাত্রার মানসহ নানা বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন এবং ভাসানচরের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (উপ-সচিব) মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, চীনের রাষ্ট্রদূত রোহিঙ্গাদের অবস্থান পর্যবেক্ষণে ভাসানচরে এসেই বৃহস্পতিবার বিকেলে রোহিঙ্গাদের ফুটবল টুর্নামেন্ট উপভোগ করেন। শুক্রবার (৩ জুন) ভাসানচরের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বিকেলে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করবেন তিনি।
এর আগে গত ২৪ মে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি ভাসানচর পরিদর্শন করেন। ওই সময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দলও তার সঙ্গে ছিলেন।
ধর্ষণ, হত্যা, অগ্নিসংযোগসহ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত নির্যাতন-নিপীড়নের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে নতুন করে সাড়ে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা সাগর ও সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল কক্সবাজার জেলায় আশ্রয় নেয়। এর আগে বিভিন্ন সময়ে আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের পাহাড়ি এলাকায় আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছিল। সব মিলিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশে এগারো লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার বাস।
তবে সমুদ্রঘেঁষা কক্সবাজারের ওপর থেকে রোহিঙ্গাদের চাপ সামলাতে সরকার এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য নোয়াখালীর ভাসানচরে পুনর্বাসন কেন্দ্র গড়ে তোলে। এরপরই শুরু হয় রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর প্রক্রিয়া।
এ পর্যন্ত ১৩ ধাপে কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে পৌঁছেছে ২৯ হাজার ১১৬ জন রোহিঙ্গা। এছাড়া গত বছর মে মাসে সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করা ৩০৬ রোহিঙ্গাকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে ভাসানচরে পাঠানো হয়।
জানা গেছে, নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের জন্য সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে তিন হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এবং বৈশ্বিকভাবে চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে মিয়ানমার সরকার বিভিন্ন সময়ে প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।