আঞ্চলিক স্বার্থের কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশকে স্নায়ু যুদ্ধ ও ব্লক রাজনীতির মনোভাব প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানিয়েছে চীন।

গত বুধবার (১ জুন) নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত মাহবুবুজ্জামানের সাথে বৈঠকের সময় চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া বিষয়ক দপ্তরের মহাপরিচালক লিউ জিনসং এ কথা করেন।

ওই বৈঠকে তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের দেশগুলো নিজেদের এবং আঞ্চলিক স্বার্থের কথা মাথায় রাখবে বলে বিশ্বাস করে চীন।

এর আগে চীন প্রকাশ্যে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যেকার আঞ্চলিক জোট কোয়াডে যোগ না দিতে বাংলাদেশকে আহ্বান জানিয়েছিল। ওই আহ্বানের এক বছরের মাথায় বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতের সাথে এক বৈঠকে ফের একই কথা বললো চীন। 

এ নিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৈঠকে লিউ বলেন, দক্ষিণ এশিয় অঞ্চলের দেশগুলোর মাল্টিলেটারেলিজম (বহুপাক্ষিকতা) এবং শান্তি ও উন্নয়নের জন্য কষ্টার্জিত পরিবেশকে রক্ষা করা উচিত।

গত বছরের মে মাসে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং প্রকাশ্যে বাংলাদেশকে কোয়াডে যোগ না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, এই চার দেশের জোটের সাথে যুক্ত হওয়া বাংলাদেশের জন্য ভালো কোনো বিষয় নয়। কারণ, এটি বাংলাদেশ ও চীনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। 

সে সময় লি’র এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি আমরাই নির্ধারণ করবো। চীনের দূতের এ ধরণের মন্তব্য ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ এবং ‘আক্রমণাত্মক’। চীনের থেকে এ ধরণের আচরণ আমরা আশা করিনি ‘

চীন প্রথম থেকেই কোয়াডের বিরোধিতা করছে। দেশটি কোয়াডকে সামরিক জোট ন্যাটোর এশিয়ান সংস্করণ হিসেবে দেখছে। মাহবুবুজ্জামানের সাথে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সর্বশেষ বক্তব্যের সমালোচনাও করেন লিউ। 

ব্লিঙ্কেন সম্প্রতি দাবি করেন, চীন বিশ্বের একমাত্র দেশ যে আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক, সামরিক এবং প্রযুক্তিগত ভারসাম্যে পরিবর্তন আনতে চায়। 

গতকাল বৃহস্পতিবার (২ জুন) যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাইডেন প্রশাসনের চীন নীতি উন্মোচন করার সময় ব্লিঙ্কেন এ মন্তব্য করেন। 

সে সময় তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চীনই দীর্ঘ মেয়াদে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ। যুক্তরাষ্ট্র বিনিয়োগ ও জোট তৈরির মাধ্যমে চীনকে মোকাবিলা করবে। তবে তিনি কমিউনিস্ট দেশটির সাথে সংঘাত কিংবা নতুন স্নায়ু যুদ্ধ এড়ানোর কথাও বলেন।

এর প্রেক্ষিতে বৈঠকে লিউ বলেন, ব্লিঙ্কেনের বক্তব্য ইঙ্গিত দেয় যে, বিশ্ব, বেইজিং এবং চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুতর বিচ্যুতি হয়েছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল অকাস, কোয়াড এবং সর্বশেষ ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনোমিক ফ্রেমওয়ার্ককে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্ট্রিজম’ এবং ‘এক্সসেপশনালিজম’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। 

তিনি আরো বলেন, এ ধরণের আচরণ দেশটির নিজের জন্যেই অসম্মান বয়ে আনবে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল এখানে যে আঞ্চলিক সহযোগিতার কাঠামো রয়েছে তা ধ্বংস করে দেবে এবং দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করবে। 

বিশ্বজুড়ে ব্লকভিত্তিক দ্বন্দ্বের কোনো ভবিষ্যৎ নেই এবং এক দেশের আধিপত্যের পক্ষে কোনো সমর্থন নেই। বাংলাদেশকে সেসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে বলে আহ্বান জানান এই চীনা কর্মকর্তা।