চলতি মাস থেকেই মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী পাঠানো শুরু করবে বাংলাদেশ। ছবি: সংগৃহীত
তিন বছর বন্ধ থাকার পর অবশেষে খুলতে যাচ্ছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। চলতি মাস থেকেই আগ্রহী বাংলাদেশি কর্মীদের মালয়েশিয়ায় পাঠানো শুরু হবে। বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশ সফররত মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানানের সঙ্গে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ বৈঠক শেষে বিকেলে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়কমন্ত্রী ইমরান আহমদ।
এ সময় মন্ত্রী বলেন, ‘আমি মন্ত্রী হওয়ার পর ভেবেছিলাম মালয়েশিয়া বাজারে কর্মী পাঠাতে পারব না। হয়তো ব্যর্থ হয়েই বাড়ি ফিরতে হবে। দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রী সারাভানানের সঙ্গে আলোচনার পর আমরা গতকাল একটি সমঝোতায় এসেছি। জুনের মধ্যেই কর্মী পাঠানো শুরু করব। সিদ্ধান্ত হয়েছে তারা বন্ধ সেক্টরগুলো ওপেন করবে। বেতন ১৫শ’ রিঙ্গিত হবে। তাদের কর্মী তালিকা দেওয়া হবে, সেখান থেকে যাবে। তাদের সিলেকশন অনুযায়ী মেডিকেল হবে।’
মন্ত্রী জানান, ‘কোনো সিন্ডিকেট নয়, আমরা তাদের দেশের সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা পাঠিয়েছি। এটি পছন্দ তাদের। তারা লোক নেবে তাদের পছন্দে। এখানে ২৫/৫০ নেই। মালয়েশিয়ার মন্ত্রী আমাদের বলেছেন যে তারা জিরো কস্টে লোক নিতে চেষ্টা করবেন।’
ইমরান আহমদ আরও জানান, ‘মালয়েশিয়া পাঁচ বছরে ৫ লাখ লোক নেওয়ার কথা বলেছে। এ দফায় প্রথম বছরে পাঠানো যাবে অন্তত ২ লাখ কর্মী। তবে ধারণা করা হচ্ছে, সম্প্রতি দেশটিতে জনশক্তির যে চাহিদা, তাতে আগমী পাঁচ বছরেই আমরা ৫ লাখ লোক পাঠাতে পারব। আশা করছি, আগের যে হিসাব ১ লাখ ৬০ হাজারের কথা ছিল এবার তার চেয়ে কম হবে। যাওয়া আসার টিকিট, মালয়েশিয়ায় কোভিড-১৯ টেস্ট, কোয়ারেন্টাইন, থাকা-খাওয়া সহ বিভিন্ন খরচ নিয়োগ দাতা বহন করবে। বাংলাদেশের অংশে পাসপোর্ট, মেডিকেলসহ অন্যান্য খরচ কর্মীকে বহন করতে হবে।’
ধারণা করা হচ্ছে- বৃক্ষরোপণ, কৃষি, শিল্প উৎপাদন, সেবা খাত, খনি উত্তোলন, নির্মাণ এবং গৃহকর্ম ইত্যাদি বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশি এসব শ্রমিক নেয়া হবে।
এর আগে বাংলাদেশ সফররত মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী সারাভানানের সঙ্গে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ বৈঠক করেন এদেশের প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ। এর আগে গত ১৯ ডিসেম্বর কুয়ালালামপুরে গিয়ে দেশটির সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক এমওইউ) সই করেন তিনি।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি এক বিবৃতিতে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানান জানিয়েছিলেন, বিদেশি কর্মী নিয়োগে দেশটিতে এ পর্যন্ত ১ লাখ ১১ হাজার ৮০৭টি আবেদন জমা পড়েছে। মন্ত্রণালয় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি অনলাইনে আবেদন খোলার পর থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নিয়োগকর্তাদের কাছ থেকে এ আবেদন পেয়েছে। তার মধ্যে ৭৭ হাজার ৮৪৮টি আবেদন উৎপাদন খাতে শ্রমিকদের জন্য, বৃক্ষরোপণ খাতে ১৩ হাজার ১১৯, পরিষেবায় ১০ হাজার ৬১১ এবং নির্মাণ কাজে ৮ হাজার ৫৩০ এবং কৃষি খাতে ১ হাজার ৬৯৯ জন।
প্রাথমিক পর্যায়ে যখন আবেদনটি খোলা হয়েছিল তখন কিছু নিয়োগকর্তার অনলাইনে আবেদন করতে সমস্যা হয়েছিল। প্রথম মুভমেন্ট কন্ট্রোল অর্ডার (এমসিও) বাস্তবায়নের পর ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে বিদেশি কর্মীদের আবেদন সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উচ্চ সংখ্যক আবেদনের কারণে এটি হয়েছে। নিয়োগকর্তাদেরও বেসরকারি খাতের কর্মসংস্থান সংস্থা (এপিএস) এর মাধ্যমে আবেদন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, যা আগে শুধুমাত্র গৃহকর্মীর জন্য আবেদনের জন্য অনুমোদিত ছিল। সম্প্রতি নিয়োগকর্তা এবং অ্যাসোসিয়েশনগুলির সঙ্গে একটি বৈঠকের সময়, সমস্যাগুলো সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছিল এবং তারা এই উদ্দেশ্যে এপিএস-এর পরিষেবাগুলি ব্যবহার করেছে। তাই এপিএস নিয়োগকর্তাদের পক্ষ থেকে আবেদন করতে পারেন এই শর্তে, যে আবেদনগুলি সংশ্লিষ্ট নিয়োগকর্তাদের অনুমতি নিয়ে জমা দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন মানব সম্পদমন্ত্রী।
এর আগে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর সারাভানান আরও বলেছিলেন, দেশটি পাঁচটি (বিপজ্জনক, কঠিন) সেক্টরে শ্রমিকের সংকটের সম্মুখীন হয়েছে, যেমন, বৃক্ষরোপণ, উৎপাদন, উন্নয়ন ও কৃষি। তার আগে, সরকার ঘোষণা করেছিল, অবশ্যই বিদেশী কর্মীদের প্রবেশের জন্য স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি (এসওপি) মেনে চলতে হবে যা ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১-এ কোভিড -১৯ কোয়ার্টেট মিনিস্টার মিটিং দ্বারা অনুমোদিত হয়েছিল। গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর সমঝোতা স্মারক সইয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য খুলতে যাচ্ছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার।
প্রায় ৪০ মাস পর সোর্স কান্ট্রি (কর্মী পাঠানো দেশ) হিসেবে আবারো যুক্ত হলো বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে মালয়েশিয়া সরকারের প্রস্তুতিও শেষের দিকে। এরই মধ্যে নিয়োগদাতাদের কাছ থেকে কর্মী চাহিদার আবেদন নিচ্ছে দেশটির সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। তবে সমঝোতা স্মারক সইয়ের পরও কারিগরি বিষয়গুলোই চুড়ান্ত করতে সময় লাগায় তিন বছরের বেশি সময় ধরে মালয়েশিয়া যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা পারেনি বাংলাদেশ কর্মীদের হতাশ ছিলেন।
এ বিষয়ে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো- বিএমইটির মহাপরিচালক শহিদুল আলম এনডিসি জানিয়েছিলেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে কিভাবে ডাটা ব্যাংক হবে, এ সংক্রান্ত কার্যক্রম চলছে। দেশটির চাহিদা বিবেচনা এবং ডাটা ব্যাংকসহ অনলাইন পদ্ধতি চূড়ান্ত করার কাজও করছে বিএমইটি। আর মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে অভিবাসন ব্যয় নির্ধারণ ও দেশটির নিয়োগদাতাদের চাহিদা অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনাসহ অন্যান্য কারিগরি ও নীতি নির্ধারণী কাজ করছে মন্ত্রণালয় (প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়)। এবার সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী মালয়েশিয়ায় পাঁচ বছরে ৫ লাখ কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়ায় উড়োজাহাজ ভাড়াসহ মালয়েশিয়া অংশের যাবতীয় খরচ বহন করবেন নিয়োগদাতারা।
অন্যদিকে বাংলাদেশ অংশে পাসপোর্ট করা, কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা (মেডিকেল), কল্যাণ বোর্ড সদস্য ফিসহ আনুষঙ্গিক খরচ বহন করবেন কর্মী। সেই সাথে রয়েছে রিক্রুটিং এজেন্সির সার্ভিস চার্জ। জানা গেছে মালয়েশিয়ার নিয়োগদাতাদের কর্মী চাহিদাপত্র বা মূল ভিসা আনার ক্ষেত্রে, বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম কল্যাণ উইং-এর সত্যায়ন বাধ্যতামূলক।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh