× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

করোনার চতুর্থ ঢেউ

আবারও বাড়ছে করোনা প্রকোপ

সতর্ক থাকার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

শাহনাজ পারভীন এলিস

২৮ জুন ২০২২, ১০:৪০ এএম । আপডেটঃ ২৮ জুন ২০২২, ১০:৪০ এএম

দেশে করোনা সংক্রমণ আবারও বাড়তে শুরু করলেও কমেছে মানুষের সচেতনতা। এতে বাড়ছে করোনা শনাক্তের হার, ঘটছে প্রাণহানির ঘটনাও। গতকাল সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ১০১ জন। এ সময় করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। এ নিয়ে সংক্রমণের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে ১৯ লাখ ৬৭ হাজার ২৭৪ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৯ লাখ ৬ হাজার ৮৬৭ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ১৪২ জনের। শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ২০ শতাংশ।

গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগের দিন রোববার করোনা শনাক্ত হয়েছিল ১ হাজার ৬৮০ জনের, আর মৃত্যু হয়েছিল ২ জনের। এর আগে টানা ২০ দিন মৃত্যুহীন থাকার পর ২০ জুন করোনায় একজনের মৃত্যুর কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরপর টানা চার দিন করোনায় একজন করে মৃত্যু হয়। মধ্যে এক দিন কারও মৃত্যু হয়নি। সর্বশেষ দুই দিনে তিনজন ও দুজনের প্রাণ গেল এই ভাইরাসে। এর আগে দেশে করোনা শনাক্তের হার ১০-এর ওপরে ছিল গত ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১০ দশমিক ২৪। এরপর শনাক্তের হার ধারাবাহিকভাবে কমেছিল। কিন্তু সম্প্রতি করোনার প্রকোপ আবার বাড়তে শুরু করায় বাড়ছে উদ্বেগ।

করোনা মোকাবিলার স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করায় আবারও বাড়ছে সংক্রমণ। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের ১২ জন বিচারপতি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল সোমবার সকালে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এ তথ্য জানান। এসময় প্রধান বিচারপতি জানান, এমন অবস্থায় বিচারক সংকটে কের্টের কার্যক্রম পরিচালনা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি খারাপ হলে মনে হয় আবার ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আইনজীবীদের সহযোগিতার আহ্বান জানান প্রধান বিচারপতি। সেসময় অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, আদালত পরিচালনায় সব ধরনের সহযোগিতা থাকবে।

দেশে করোনা সংক্রমণ পুনরায় বাড়তে থাকায় সব ক্ষেত্রে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা, ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ নীতি প্রয়োগসহ ছয় দফা ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সরকারের করোনাসংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই নীতির বাস্তব প্রয়োগ তেমন দেখা যাচ্ছে না। একই সাথে করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও জনসমাগম বর্জন করা- এসব বিষয়ও সাধারণ মানুষ আমলে নিচ্ছে না। ফলে ধর্মীয় প্রার্থনার স্থানেও (যেমন মসজিদ, মন্দির, গির্জা ইত্যাদি) মানা হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব।

‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ বাস্তবায়নে আইনের প্রয়োগ জরুরি মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ লকডাউন উঠে যাওয়ার পর আমাদের বড় শহরগুলোসহ গ্রামের পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। শহরে ভিড়ভাট্টা এখন আগের মতোই, খুঁজলেও অনেকের মধ্যে একজনের মুখে করোনা সচেতনতার ন্যূনতম উদাহরণ মাস্ক দেখা যায় না। অথচ মাস্ক ব্যবহার করতে সরকারি নির্দেশনা, বেসরকারি আর্তি-আবেদন কোনো কিছুরই কমতি ছিল না, নেইও। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় জনস্বার্থে আইনের প্রয়োগ বিষয়ে জারি করা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে গণবিজ্ঞপ্তিও আমলে নিচ্ছে না কেউ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্টজনেরা গণমানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে গেছেন বারবার, এখনো করছেন। কিন্তু কার্যত এইসব নির্দেশনা, সচেতনতা, সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুরোধ ও আইনের কথা— সবকিছুকেই থোড়াই কেয়ার করেছে জনসাধারণ।

তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন শুধু নির্দেশনা জারি করলেই হবে না, সংক্রামক আইন প্রয়োগ করা জরুরি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এই ৯ দফা নির্দেশনার মধ্যে অন্যতম নির্দেশনাটি হলো স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় গত ২১ জুলাই মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তা গণবিজ্ঞপ্তি ও খবর আকারেও প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু এই উদ্যোগ কেবল বিজ্ঞপ্তিতে সীমাবদ্ধ থেকেছে, কোথাও কড়াকড়ি আরোপের ঘটনা চোখে পড়েনি। মার্চে করোনায় প্রথম মৃত্যুর পর মাস্ক পরা নিয়ে যে হুড়োহুড়ি লেগে গিয়েছিল, তা বহাল ছিল পরের মাসখানেক পর্যন্ত। পরের মাসগুলোতে সারাদেশে যতটুকু মাস্ক পরার প্রবণতা দেখা গেছে, তা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায়। এখন অবশ্য সেই তৎপরতাও গেছে কমে, সুযোগে মাস্ক জিনিসটাকে যেন ভুলেই গেছে মানুষ। এমনকি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকসহ বিভিন্ন জায়গায় শুরুর দিকে মাস্ক পরার ব্যাপারে কড়াকড়ি থাকলেও বর্তমানে দেখা যায় কেউ মানছেন না সেটি। গণপরিবহনে মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতা থাকলেও প্রায় কাউকেই মাস্ক পরতে দেখা যায় না।

এদিকে করোনাভাইরাসের চতুর্থ ঢেউ মোকাবিলায় মাস্ক পরার কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ। একই সাথে তিনি সবাইকে হাত ধোয়ার অভ্যাস চর্চা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি করোনার নতুন ধরন যথাযথভাবে মোকাবিলা করতে এখনো যারা টিকা নেননি, তাদের দ্রুত টিকা নেয়ার আহ্বান জানান।

গতকাল সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) আয়োজিত ‘করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব বলেন। ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ আরও বলেন, করোনাভাইরাসের নতুন ধরন দ্রুত ও ব্যাপকভাবে ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তি প্রায় ১০ জনকে সংক্রমিত করতে পারে। তবে, সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেলেও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। করোনার চতুর্থ ঢেউ মোকাবিলায় লকডাউনের মতো পদক্ষেপের প্রয়োজন পড়বে না। তবে বেপরোয়াভাবে চলাচল বা স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করা যাবে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র এবং পরিচালক (রোগনিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম সংবাদ সারাবেলাকে বলেছেন, ‘করোনা চতুর্থ ঢেউ মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। তবে জনসাধারণকে পুনরায় স্বাস্থ্য বিধিগুলো অনুসরণ করাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। তাদের অনেকরই ধারণা টিকা নেয়া হয়েছে তাই স্বাস্থ্য বিধি মেনে কী হবে। করোনা আর কাবু করতে পারবে না। কিন্তু আমরা দেখেছি বুস্টার ডোস নেয়ার পরও কেউ কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আরেকটি বড় সমস্যা যেটা সেটা হলো- করোনার উপসর্গে ভুগলেও এখন অধিকাংশ মানুষই নমুনা পরীক্ষা করতে চান না। তাদের আনাগ্রহের কারণও হলো- টিকা নেয়া এবং করোনায় মৃত্যু ঝুঁকি হ্রাস পাওয়া।

তারপরও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চেষ্টা করছে করোনা সন্দেহভাজন সব রোগীকে নমুনা পরীক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে করোনায় মৃত্যু ভয় কমে যাওয়ায় বেশির ভাগ মানুষই নমুনা পরীক্ষায় আগ্রহী হচ্ছে না। যেমন সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ্মা সেতুর অনুষ্ঠান, হজ যাত্রী, প্রবাসে যাবেন এমন বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া করোনার নমুনা পরীক্ষা করেছেন এমন লোক কমই খুঁজে পাওয়া যাবে।’

ডা. নাজমুল ইসলাম আরও বলেন, ‘যারা ভাবছেন তার করোনার উপসর্গ বেশি শক্তিশালী নয়, তাই পরীক্ষা করার দরকার নেই- তারা ভুল ভাবছেন। কারণ পরীক্ষা না করার কারণে তিনি নিজের অজান্তেই অন্যদের মাঝে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়াচ্ছেন।’ করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে করোনার চলমান এই প্রভাব আসন্ন কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন তিনি। কারণ ঈদকে ঘিরে বাড়ি ফেরা, পশুর হাটে জনসমাগম, ঈদ জামাতকে ঘিরে এই সচেতনতার ঘাটতি আরও বেশি দেখা যায়। তবে করোনা মোকাবিলায় যারা এখনো টিকা নেননি তাদের দ্রুত টিকা নেয়া এবং মাস্ক পরাসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সবার  প্রতি পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাদেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। সেদিন ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনা সংক্রমণের চিত্রে কয়েক দফা ওঠানামা করতে দেখা গেছে। করোনা পরিস্থিতি প্রায় সাড়ে তিন মাস নিয়ন্ত্রণে থাকার পর গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। করোনার নতুন ধরন অমিক্রনের প্রভাবে দ্রুত বাড়তে থাকে রোগী শনাক্ত ও শনাক্তের হার। ২০২১ সালের ৫ ও ১০ আগস্ট দুদিন সর্বাধিক ২৬৪ জন করে মারা যান।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে নিয়মিতভাবে রোগী শনাক্ত ও শনাক্তের হার কমেছে। দেশে সংক্রমণ কমে আসায় আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়। তুলে নেওয়া হয় করোনাকালীন বিধিনিষেধ। ২৫ মার্চ থেকে ১২ জুন পর্যন্ত দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০০-এর নিচেই ছিল। এর পর থেকে তা প্রতিদিন বাড়তে থাকে।


 



 

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.