× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

শিশুদের শরীর-মনে প্রভাব ফেলছে বায়ুদূষণ, বাড়ছে রোগবালাই

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৯ জুলাই ২০২২, ২৩:২৩ পিএম

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বায়ুদূষণ বাড়ছে বাংলাদেশে। বিশেষ করে ঢাকা শহরে এই দূষণের মাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। নীরব ঘাতক বায়ুদূষণ কেড়ে নিচ্ছে লাখো প্রাণ, অসুস্থ হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। শুধু তাই নয়, বিশেষজ্ঞদের মতে, বায়ুদূষণ একাধিক রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। ফলে কমছে দেশের মানুষের গড় আয়ু। তবে বায়ুদূষণের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে শিশুদের ওপর। অ্যাজমাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।

পরিবেশবিদরা বলছেন, ঢাকাসহ সারাদেশকে দূষণের হাত থেকে বাঁচানোর দায়িত্ব সবার। শীতকাল অপেক্ষাকৃত শুষ্ক ঋতু হওয়ায় এই সময় ধুলাবালির পরিমাণও বেড়ে যায়। এর সঙ্গে ইটভাটা ও সিমেন্ট কারখানার ধুলার মিশ্রণ ঘটলে বায়ুদূষণ বাড়ে। শীতে আর্দ্রতা কম থাকায় বাতাসে অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণার উপস্থিতিও বেড়ে যায়। এছাড়া বায়ুদূষণের ফলে চিকিৎসা ব্যয়ও বাড়ছে। ভারসাম্য হারাচ্ছে প্রকৃতি।

 বায়ুদূষণের কারণে শিশুদের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে। এছাড়া বয়স্ক যারা আছেন, গর্ভবতী মায়েরাও ঝুঁকিতে পড়ছেন। শিশুরা পৃথকভাবে যে ভালো থাকতে পারবে সেটি তো নয়। বায়ুদূষণ হলে সবাই প্রভাবিত হবে। তবে মাস্ক পরলে কিছুটা রক্ষা পেতে পারে, কিন্তু কতোক্ষণ তাদের মাস্ক পরিয়ে রাখা সম্ভব 

রাজধানীর একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে রাইসা। করোনার কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। খোলার পর উৎসাহ নিয়ে নিয়মিত ক্লাসে অংশ নিচ্ছিল সে। তবে সম্প্রতি অ্যাজমার সমস্যায় ভুগছে রাইসা। চিকিৎসকরা বলছেন, বায়ুদূষণের কারণে শ্বাসকষ্টসহ নানা জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে, রাইসাও সেই দূষণে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছে।

রাইসার মা সাবিনা চৌধুরী  বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ ছিল। এখন আবার মেয়েটা শ্বাসকষ্টে ভুগছে। এছাড়া নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, অতিরিক্ত ধুলাবালির কারণেই তার এ সমস্যা হয়েছে। তাই কিছুদিন বাসায় বিশ্রাম নিতে পরামর্শ দিয়েছেন। এমন হলে বাচ্চার পড়াশোনা কীভাবে চলবে সেটি নিয়ে আমি চিন্তিত। বায়ুদূষণ অসহনীয় হয়ে পড়েছে। আমরা বড়রাই তো অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি, ছোটরা আরও বেশি হচ্ছে।

সিদ্ধেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাহাব উদ্দিন মোল্লা  বলেন, শিশুদের ওপর বায়ুদূষণের মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। তারা তো নিজেদের প্রটেক্ট (সুরক্ষা) করতে পারে না। নিজেদের সুরক্ষার বিষয়টি তারা সেভাবে বোঝেও না। ছোট বাচ্চারা সহজেই বায়ুদূষণে আক্রান্ত হয়। তারা অনেক সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সেভাবে মেইনটেইন করতে পারে না। অনেক সময় তারা না বুঝেও অনেক কিছু করে ফেলে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের পরিবেশে কলেজে যাওয়ার পর শিশুদের সেন্স সেভাবে গ্রো (মানসিক বিকাশ) করে। কিন্তু পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত তারা পরিবেশের কিছুই বোঝে না। তাদের কাছে সবকিছুই প্রায় নতুন। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত কিছুটা বোঝে। কিন্তু তারপরও তারা সবকিছু করতে চায় না, করে না। ইদানীং দেখছি আমার সন্তান স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে চাচ্ছে না, মাস্ক, টিস্যু ব্যবহার করতে চাচ্ছে না। এখানে তো আর জোরাজুরি করে করা যাবে না। এসব কারণেই কিন্তু তারা নানাভাবে আক্রান্ত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, স্কুলে শিক্ষার্থীরা অল্প সময়ের জন্য আমাদের কাছে থাকে। আমরাই বা তাদের এমনকি পরিবেশ দিতে পারছি? কয়টি স্কুলে দুটি গাছ আছে? কয়টি স্কুল প্রাকৃতিক পরিবেশ আছে? স্কুলে যেমন একটি বাগান থাকার কথা, সেটি কি আমরা তাদের দিতে পারছি? পারছি না। একটা পুকুর থাকলে নির্মল বাতাস পেতো, আমাদের সেরকম পুকুর করার সুযোগ নেই। যদি একটি চৌবাচ্চাও থাকতো তাহলেও পরিবেশকে ভালো করতে পারা যেতো। বাসায় বসেও তারা একই সমস্যায় পড়ছে। প্রত্যেক বাসায় ছাদবাগান, খোলা জায়গা দরকার, তা তো করতে পারছি না। আমি ব্যক্তিগতভাবে বায়ুদূষণে শিশুদের প্রভাব নিয়ে শঙ্কিত, আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত।

ইপিআইসির গবেষকরা বলছেন, দূষণের কারণে গড়ে সাত বছর করে আয়ু হারাচ্ছেন বাংলাদেশিরা। ইপিআইসি প্রবর্তিত এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স বা একিউএলআই নির্ণয়ে গবেষকরা বাতাসে পিএম২.৫ (ক্ষতিকর ভাসমান কণা যা ফুসফুসের ক্ষতি করে) এর মাত্রা হিসাব করতে স্যাটেলাইট তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করেন।

গবেষকরা বলছেন, বায়ুদূষণের এই সূচকের হিসাবে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দূষণের শিকার পাঁচ দেশের চারটিই দক্ষিণ এশিয়ায়। বায়ু মানের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত রাজধানী হচ্ছে ভারতের নয়াদিল্লি। ভারতের পরই রয়েছে বাংলাদেশ।

গবেষকদের মতে, যদি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী দূষণের মাত্রা কমানো যেতো তাহলে পুরো বাংলাদেশের মানুষ আরও ৫ দশমিক ৪ বছর বেশি বাঁচতেন। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ না করার কারণে ঢাকায় বসবাসকারীদের গড় আয়ু ৭ দশমিক ৭ বছর কমেছে। বায়ুদূষণ না থাকলে গড়ে ঢাকাবাসী আরও প্রায় ৮ বছর বেশি বাঁচতেন।

এ বিষয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, বায়ুদূষণের যে প্রভাব এটি নিঃসন্দেহে একটি মারাত্মক পরিণতি। কারণ আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়ন বা যা কিছু বলি না কেন, আমাদের স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে কোনো লাভ নেই। আমাদের সন্তানরা যদি ভালো না থাকে, আমরা যদি অসুস্থ হয়ে যাই, তাহলে এতো উন্নয়ন দিয়ে কি করবো? আমরা যে পলিসি গ্রহণ করি, সেটি দেশীয় আছে এবং আন্তর্জাতিকও আছে। প্রাইভেটকারকেন্দ্রিক যে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে, সেখান থেকে কিন্তু দূষণ বেশি হচ্ছে। ইটভাটা মারাত্মক দূষণ করছে, অধিকাংশ ভাটার প্রযুক্তিগত বিষয়গুলো উন্নয়ন করা হয়নি। অনেক ধরনের ইলেকট্রনিক বর্জ্য সম্পদে রূপান্তরের প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হচ্ছে। এগুলো খুব দূষণ করছে। উৎস বন্ধ করতে না পারলে আমরা কিন্তু মারাত্মক পরিণতির দিকে যাচ্ছি।



Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.