বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত
দেশে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। শনিবার সকালে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে সমন্বয়, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) লোকসান কমানোসহ পাচার হওয়ার আশঙ্কা থেকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার।
এর আগে শুক্রবার রাতে সরকারের পক্ষ থেকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসে। ডিজেলের দাম লিটারে ৩৪ টাকা, অকটেনের দাম লিটারে ৪৬ টাকা আর পেট্রলের দাম লিটারে ৪৪ টাকা বাড়ানো হয়। সরকারের এ সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয় রাত ১২টা থেকেই। এখন এক লিটার ডিজেল ও কেরোসিন কিনতে ১১৪ টাকা লাগছে।
এক লিটার অকটেনের জন্য দিতে হচ্ছে ১৩৫ টাকা। আর প্রতি লিটার পেট্রলের দাম রাখা হচ্ছে ১৩০ টাকা। হুট করে এত বেশি দাম বাড়ানোর চাপ অর্থনীতি নিতে পারবে না বলে মনে করছেন জ্বালানিবিশেষজ্ঞ ম. তামিম। আর জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সে অনুযায়ী জ্বালানি তেলের মূল্য পুনর্বিবেচনা করা হবে।
জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যায় বলা হয়, এর আগে গত বছরের নভেম্বরে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল। সে সময় ডিজেল ও কেরোসিন লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছিল ৮০ টাকা। তার আগে এই দুই জ্বালানি তেলের দাম ছিল লিটারে ৬৫ টাকা। তখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার প্রবণতা থাকলেও অকটেন ও পেট্রলের দাম বাড়ায়নি সরকার। এরপর ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরুতে করোনার প্রকোপ কিছুটা কমায় বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়ে যায়।
এ বছর ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ধারাবাহিকভাবে পরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে থাকে। গত বছরের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল ডিজেলের দাম ছিল ৮৩ দশমিক ৩৫ মার্কিন ডলার। গত জুলাই মাসে যা ছিল ১৩৯ দশমিক ৪৩ মার্কিন ডলার। আর একই সময়ে অকটেনের দাম ছিল প্রতি ব্যারেল ৮৫ দশমিক ২৫ মার্কিন ডলার, গত জুলাইয়ে যা ছিল ১১৪ দশমিক ৯৬ মার্কিন ডলার। তবে গত মে ও জুন মাসের তুলনায় এ দাম কিছুটা কম।
মন্ত্রণালয় বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেল প্রতি ব্যারেল ৭৪ দশমিক শূন্য ৪ ও অকটেন ৮৪ দশমিক ৮৪ মার্কিন ডলারে নেমে এলে ডিজেল ও অকটেন প্রতি লিটার যথাক্রমে ৮০ ও ৮৯ টাকায় বিক্রি সম্ভব হতো, যা এখন প্রায় অসম্ভব। গত জুলাইয়ে ডিজেল ও অকটেনে বিপিসি প্রায় ৭৮ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে।
এর আগের দুই মাসে লোকসানের পরিমাণ ছিল শতাধিক কোটি টাকা। এ বছর ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত বিপিসি লোকসান করেছে ৮ হাজার ১৪ কোটি টাকার ওপরে লোকসান দিয়েছে। এখন প্রতি লিটার ডিজেল ১১৪ টাকায় বিক্রি হলেও বিপিসিকে ৮ দশমিক ১৩ টাকা করে প্রতি লিটারে লোকসান গুনতে হবে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়। কারণ, গত মাসের গড় হিসাবে প্রতি লিটার ডিজেলে ১২২ দশমিক ১৩ টাকা খরচ পড়বে।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে জ্বালানি তেলের দাম তুলনামূলক অনেক বেশি উল্লেখ করে মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত মাসের তথ্য অনুযায়ী ভারতের কলকাতায় ডিজেল প্রতি লিটার ৯২ দশমিক ৭৬ রুপিতে (১১৮.০৯ টাকা) বিক্রি হয়। ওই সময়ের হিসাবে কলকাতার প্রতি লিটার ডিজেলের দাম বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩৪ দশমিক শূন্য ৯ টাকা বেশি ছিল। আর পেট্রলের দম বেশি ছিল প্রতি লিটার প্রায় ৪৪ দশমিক ৪২ টাকা। এ পার্থক্যের কারণে জ্বালানি পণ্যের পাচার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই মূল্য সমন্বয়ে পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের জ্বালানি পণ্যের মূল্যের পার্থক্যজনিত পাচার রোধ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ম. তামিম বলেন, ভারতের সঙ্গে দামের পার্থক্য সব সময় ছিল। এখন পাচারের প্রশ্ন তোলা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে বিপিসির আর্থিক সক্ষমতা কমে গেছে বলেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়। এ ছাড়া ডলারের বিনিময় হারের প্রভাবেও জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশের ইতিহাসে কখনোই জ্বালানি তেলের দাম একসঙ্গে এতটা বাড়ানো হয়নি। এবার ভারতের সঙ্গে দামের পার্থক্য পুরোপুরি দূর করা হয়েছে। সব মিলিয়ে জ্বালানি তেল খাতে সরকারের ভর্তুকি একবারে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার পদক্ষেপ এটি।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh