× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

নৈরাজ্য থামেনি পরিবহনে, প্রতারণার ফাঁদ 'ওয়েবিল'

বিশেষ প্রতিনিধি

০২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৩:৪৬ এএম । আপডেটঃ ০২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:০৩ এএম

পরিবহনে থামেনি নৈরাজ্য। যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে বিভিন্ন অপকৌশলে। এ অপকৌশলের একটি হচ্ছে বাসে থাকা ওয়েবিল বা চেকিং। এটা প্রতারণার ফাঁদ বলে অভিহিত করেছেন যাত্রীরা। এদিকে বাড়তি ভাড়া রোধে কিছুদিন ভ্রাম্যমান আদালত, বিআরটিএ ও পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কর্মকর্তারা জেল জরিমানা করছেন। যদিও বলা হয়েছিল, ওয়েবিল নামে কোন কিছু থাকবে না পরিবহনে। বাস্তবতা ভিন্ন। প্রতিনিয়ত রাজধানীতে চলাচলরত গণ পরিবহনে ওয়েবিল চালু রয়েছে। এই ওয়েবিলের নামে গন পরিবহনে চলছে বাটপাড়ি। ওয়েবিল আর চেকিং এই দুইয়ের দোহাই দিয়ে চালানো হচ্ছে যাত্রীর পকেট কাটা। যার কারণে পরিবহন শ্রমিকরা এখন বীরদর্পে নির্বিঘ্নে বাড়তি ভাড়া আদায়সহ পরিবহনে নৈরাজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।    

বসুমতি পরিবহন। রাইদা, পরিস্থান, এমএম লাভলী ও অনাবিল, আলিফ, লাব্বাইক, তুরাগ, বলাকা ও স্বাধীন, প্রজাপতি, রজনীগন্ধা ও শিকড়, আকাশ আজমেরী, মনজিল, প্রভাতি ও বনশ্রী রয়েছে। এ ছাড়া আসমানী, প্রচেষ্টা, ভিক্টর, মিডলাইন, ডি লিংক, রাজধানী গুলিস্তান-গাজীপুর পরিবহন, ভিআইপি বাহন, পরিবহনে ওয়েবিল চালু রয়েছে। ওয়েবিলের দোহাই দিয়ে সবচেয়ে বেশী ভাড়া নিচ্ছে চিড়িয়াখানা থেকে মিরপুর এক নম্বর হয়ে গুলিস্তান ও কেরানীগঞ্জ চলাচলরত দিশারী পরিবহনে। প্রতিদিনই ওয়ে বিলের নামে বেশী ভাড়া নেয়ার কারণে পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে বাগতিন্ডা ও ঝগড়া লেগেই থাকে। 

কন্ডাক্টররা ১২ টাকার স্থলে পনের টাকা ২৫ টাকার স্থলে ৩৫ টাকা এবং ৪০ টাকার স্থলে ৫৫ টাকা নিচ্ছে। রাজধানীকে গন পরিবহনের ১৫ টাকার নীচে কোনও ভাড়া নেই। সর্বনিম্ম ভাড়া পনের টাকা। মোটামুটি ভাবে বাসে উঠলেই আপনাকে ১৫ টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছে। এই নৈরাজ্য চলছে রাজধানীর গনপরিবহনে।  

সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বাস ভাড়া কমানোর ঘোষণা দিলেও চট্টগ্রামে কোথাও মানা হচ্ছে না এ নির্দেশনা। দূরপাল্লা, উপজেলা কিংবা মহানগরে ন্যূনতম এক টাকাও কমায়নি কোন গণপরিবহন। জানা গেছে, তেলের দাম বাড়ার পর সমন্বয় করে বিআরটিএ যে চার্ট দেয় তার চেয়েও বেশি ভাড়া আদায় করে পরিবহন শ্রমিকরা। ভাড়া নিয়ে এসব নৈরাজ্য রোধে তদারকির ব্যবস্থা নেই কোন সংস্থার।

এদিকে জ্বালানী তেলের দাম লিটার প্রতি পাঁচ টাকা কমিয়েছে সরকার। সে হিসেবে কিলোমিটার প্রতি পাঁচ পয়সা বাস ভাড়া কমানোর ঘোষণা দেয় সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দূরপাল্লা এবং রাজধানীতে চলাচলরত কোন পরিবহনেই কোথাও মানা হয়নি এ নির্দেশনা। নূন্যতম এক টাকাও কমানো হয়নি বাস ভাড়া। বাস যাত্রীরা জানান, কমানো তো দূরের কথা এখনও ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বিআরটিএ নির্ধারিত চার্টের থেকেও বেশি।

দিশারী পরিবহনে আসা এক যাত্রী জানান, মিরপুর এক নম্বর থেকে গুলিস্থান ভাড়া ছিল ২৭ টাকা। এরপর তেলের দাম বাড়ানোর কথা বলে দু’দফায় বাড়িয়ে এখন ৩৫ টাকা নেয়া হচ্ছে। কিন্তু তেলে দাম বাড়ার পর বিআরটিএ চার্ট অনুযায়ী ভাড়া হয় ৩২ টাকা। কিন্তু তারা আদায় করে পঁয়ত্রিশ টাকা। সরকার তেলের দাম কমিয়েছে কিন্তু তারা এক টাকাও ভাড়া কমায়নি বরং ২৭ টাকার জায়গায় ৩৫ টাকা নিচ্ছে। এক কলেজ শিক্ষার্থী জানান, কমানো তো দূরের কথা শিক্ষার্থীদের কাছেও ভাড়া কম রাখে না তারা। এছাড়া সরকার তেলের যে দাম কমিয়েছে তার কোন প্রভাব পড়েনি রাজধানীতে এ বাসের স্টাফ ও চালকের দাবি, বিআরটিএ থেকে কমানোর কোন চার্ট তারা পায়নি। পেলে ভাড়া কম রাখবে।

বিআরটিএ সূত্র বলেছে, গণপরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধির পর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান শুরু করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। সে সময় কিছুটা হলেও বাড়তি ভাড়া আদায় থেকে বিরত ছিল কতিপয় বাস মালিক এবং শ্রমিকরা। তারপরও নৈরাজ্য চলছে গণপরিবহন খাতে। নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।

বিআরটিএ সূত্র জানিয়েছে, ভাড়া-নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণে ঢাকা ও চট্টগ্রামে গত ৮ অক্টোবর থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করা হয়। এতে ঢাকা মহানগরে এক হাজার ৪০৮টি বাসকে ৫৭ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি একই অপরাধ বারবার করায় ২৫টি বাস কোম্পানির রুট পারমিট বাতিলের সুপারিশ করেছে বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা।

এ ছাড়া অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, রুট পারমিট না থাকাসহ নানা অপরাধে ৫৬টি বাসকে পাঠানো হয়েছে ডাম্পিংয়ে। পাঁচজন বাসচালককে বেপরোয়া গাড়ি চালানো ও সরকারি দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ায়  জেল দেয়া হয়েছে। নৈরাজ্য ঠেকাতে ছুটির দিন শুক্রবারও রাজধানীর কলেজগেটসহ গুরুত্বপুর্ন সড়কের মোড়ে অভিযান চালানো হচ্ছে।  

বিআরটিএ পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মো. সরওয়ার আলম বলেন, গত একমাস ধরে অভিযান পরিচালনা করেছি। একই অপরাধ বারবার করায় ২৫টি বাস কোম্পানির রুট পারমিট বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বারবার নিয়ম ভাঙ্গা বাস কোম্পানিগুলোর রুট পারমিট বাতিলের সুপারিশসহ আইনগত ব্যবস্থা নিতে রিজিওন্যাল ট্রান্সপোর্ট কমিটির (আরটিসি) কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অভিযানে প্রতিদিন বিআরটিএর ৮টি থেকে ১৪টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হতো। এর মাঝেও অনিয়ম চালিয়ে যেত পরিবহন মালিকরা। এরপরও নৈরাজ্য থামছে না। 

এবিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সরকারি তালিকানুযায়ী ভাড়া দিতে চাইলে যাত্রীদের অপমান-অপদস্থ করা হচ্ছে। পরিবহনের ওয়েবিল দেদারছে চলছে । বাসে ভাড়ার তালিকা প্রদর্শন না করে আগের ওয়েবিল অনুযায়ী যাত্রীর মাথা গুনে নেওয়া হচ্ছে তিন-চার গুণ বাড়তি ভাড়া।

তিনি বলেন, আমরা সারাদেশ থেকে অভিযোগ পাচ্ছি। আমরা মরে করি বিআটিএকে জনগণের পাশে থাকা দরকার। তাছাড়া অভিযানের ফলে জনগণের কী উপকার হয়েছে বা হয়নি সেটার একটা প্রতিবেদনও করা উচিত বলে মনে করি।’

মিরপুরের বাসিন্দা ইদ্রিস আলী লাবু বলেন, অভিযানের সময় ওয়েবিল মাঝে মধ্যে বন্ধ ছিল। এখন বিআরটিএর অভিযান দেখছি না। আবার ওয়েবিল শুরু হয়েছে। একটু প্রতিবাদ করলেই কটূক্তি শুনতে হচ্ছে। মিরপুর থেকে ফার্মগেট ১৫ টাকা ভাড়া হওয়ার কথা থাকলেও ৩৫ টাকা নেওয়া হচ্ছে।

এবিষয়ে কথা বলতে চান না বিআরটিএ’র  চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, আমাদের মালিক সমিতির পক্ষ থেকে ৯টি টিম মনিটরিং করছে। কোনও পরিবহনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে পুলিশকে জানানো হচ্ছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী গণপরিবহনে হাফ ভাড়া কার্যকর করেছি।

তিনি জানান, করোনা ও ভাড়া বাড়ার পর যাত্রীর সংখ্যা তুলনামূলক ২০ থেকে ৩০ ভাগ কমে গেছে। যার কারণে তেলের দাম বাড়ার পর সরকার যে ভাড়া নির্ধারণ করে দেয় তারও কম দামে যাত্রী পরিবহন করে তারা। কেননা যাত্রীশূণ্য গাড়ি গেলে চরম লোকশানে পড়তে হয় মালিকদের। তাই কম দামে যাত্রী পরিবহন করতে হয় তাদের। আর নতুন দাম অনুযায়ী ঢাকাসহ বিভিন্ন রুটে ২০ থেকে ২৫ টাকা ভাড়া কমবে। দু’একদিনের মধ্যে সেটি সমন্বয়র কথা জানান ওই নেতা। 


Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.