× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

পঞ্চগড়ে সংঘর্ষে ২ মুসল্লি নিহত, দেশব্যাপী নিরাপত্তা জোরদার

হালিম মোহাম্মদ

০৩ মার্চ ২০২৩, ২২:৩০ পিএম

দেশের দিনাজপুরের পঞ্চগড়ে আহমাদিয়া জামাতের সদস্যের সঙ্গে কাদিয়ানীদের সংঘর্ষের ঘটনায় ২ জন নিহত হয়েছেন।

এ ঘটনার খবর বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ায় গতকাল শুক্রবার রাত থেকেই রাজধানীসহ সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। ওই রাতেই মুসল্লীরা সারাদেশের বিভাগীয় শহর, জেলা এবং উপজেলায় তৎপর হয়ে উঠে। এর প্রতিবাদে তারা উপজেলা জেলা এবং বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ মিছিল, সড়ক অবরোধসহ নাশকতা ঘটাতে পারে। এমন আশঙ্কা করছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে জানিয়েছেন পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহফুজুল হক। তিনি জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রথমে ৫ প্লাটুন পরে আরো ৫ প্লাটুন বাড়িয়ে ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

এদিকে সরকারী  গোয়েন্দা প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে পরিন্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে গতকাল রাত থেকেই বিভাগীয় জেলা এবং উপজেলা শহরে নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। পুলিশ সদর দফতর থেকে মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তায় ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারদের কাছে সংবাদ পৌঁছে দেয়া হয়েছে। পুলিশ সুপার তার নিয়ন্ত্রিত সকল থানার ওসি, পরিদর্শক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে করে কোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা না ঘটে, সে জন্য জেলা শহরের প্রতিটি সড়কের মোড়ে, সরকারী স্পর্শকাতর স্থাপনা, ব্যাংক বীমা এবং আদালত পাড়ায় আইন শৃংখলা বাহিনী সতর্কাবস্থায় মোতায়েন থাকবেন। সড়কের মোড়ে মোড়ে যান বাহন এবং সন্দেহভাজনদের তল্লাশীর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শহরের প্রানকেন্দ্রগুলোতে স্ট্রাইকিং ফোর্স টহলে থাকবে। পুলিশ সুপার নিজেই এ বিষয়ে মনিটরিং করে প্রতিদিন পুলিশের রেঞ্জ অফিসে রির্পোট দাখিল করবেন।  

এ বিষয়ে গত শুক্রবার গভীররাতে পুলিশ সদর দফতরের (অপারেশন্স) ডিআইজি হায়দার আলী খান সংবাদ সারাবেলাকে জানান। পঞ্চগড়ে আহমাদিয়া জামাতের সদস্যের ওপর হামলার পরিপ্রেক্ষিতে দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সারাদেশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। শুধু আহমদিয়া মুসলিম জামাত নয়, সবার নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। 

ডিআইজি হায়দার আলী আরো বলেন, যেকোনও নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিতদের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিটি সদস্য সব সময় সজাগ থাকেন। পঞ্চগড়ে যে উদ্ভূত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার জেরে অন্য জেলা এবং উপজেলা শহরগুলোতে যেন কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর সুযোগ কেউ না পায়, সে অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সজাগ থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর আগে পঞ্চগড়ে আহমদিয়া মুসলিম জামাতের ‘সালানা জলসা’কে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতার সংঘর্ষে  আরিফুর রহমান (৩০) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া সংঘর্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। গত শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পর সংঘর্ষ শুরু হয়। এ ব্যাপারে পঞ্চগড় পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাজেদুর রহমান চৌধুরী ইরান সংবাদ সারাবেলাকে জানান, সংঘর্ষে আরিফুর রহমান নামে একজন নিহত হয়েছেন। তিনি জেলা শহরের মসজিদপাড়া এলাকার ফরমান আলীর ছেলে। সংঘর্ষের সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় আরিফুর রহমানের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান তিনি। 

পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা।পঞ্চগড়ে আহমদিয়া মুসলিম জামাতকে (কাদিয়ানি) নিষিদ্ধ ও তাদের সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করার সময় পুলিশ ও মুসল্লিদের মধ্যে সংঘর্ষে দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদ্বয়ের মধ্যে একজন আরিফুর রহমান। তিনি সাধারণ লোক ও অপরজন কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের। 

সংঘর্ষের ঘটনায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ইঞ্জিনিয়ার জাহিদ হাসান (২২) নামের যুবক মারা গেছেন। তিনি নাটোরের বনপাড়ার বাসিন্দা। মহারাজপুরের বাসিন্দা। হামলাকারী তাকে ধরে নিয়ে আহমদনগড় এলাকার করতোয়া নদীর ধারে নিয়ে যান। পরে সেখানে তাকে  পিটিয়ে মারা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সালানা জলসা আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক তফসের ও সালানা জলসার মিডিয়া সেলের মাহমুদ আহম্মেদ সুমন। এবিষয়ে ন্যাশনাল বার্ষিক সালানা জলসার আহ্বায়ক আহমেদ তফসের চৌধুরী বলেন, পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের আমাদের জলসা স্থগিতের নির্দেশনা দিয়েছে। আইন ও প্রশাসনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা জলসা স্থগিত করেছি।

গত শুক্রবার জুমার নামাযের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে মুসল্লিদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। শহরে দোকানপাট ও যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন করা হয় বিজিবি ও র‌্যাব। বিকেলে কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের আহম্মদনগর মুসলিম জামাত এলাকার বাড়িগুলোতে বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা চালায়। এ সময় ২০ থেকে ২৫টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। তবে সন্ধ্যার পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের সালানা জলসা বন্ধ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। সালানা জলসা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে রাতে এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার একই দাবিতে পঞ্চগড়-তেঁতুলিয়া মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন মুসল্লিরা। প্রায় ৫ ঘণ্টা এই অবরোধ চলে। বিকেল ৩টার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সফিকুল ইসলাম এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং সমঝোতার আশ্বাস দেন। পরে মুসল্লিরা সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করেন।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.