× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

বিমানবন্দরে সহজেই সনাক্ত হবে আন্তর্জাতিক অপরাধী

হালিম মোহাম্মদ

১৯ মার্চ ২০২৩, ১০:০৪ এএম । আপডেটঃ ১৯ মার্চ ২০২৩, ১৩:৩৪ পিএম

আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস, অপরাধ দমন, অপরাধীদের দেশত্যাগ বা দেশে প্রবেশে সনাক্তকরন, মানব পাচার, সোনা ও মাদক চোরাচালান এবং মানি লন্ডারিংয়ের মতো গুরুতর অপরাধ প্রতিরোধে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্থাপন করা হচ্ছে অথ্যাধুনিক প্রযুক্তি অ্যাপস। এর নাম অ্যাডভান্স প্যাসেঞ্জার ইনফরমেশন সিস্টেম (এপিআইএস)।

এই নতুন এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় আন্তর্জাতিক কোনো অপরাধী দেশে প্রবেশের চেষ্টা করলে সেই তথ্য ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে তাৎক্ষণিক তথ্য পৌঁছে যাবে। আবার দেশের কোনো শীর্ষ সন্ত্রাসী কিংবা অপরাধী ঢাকা ছাড়তে চাইলেও অগ্রিম সে তথ্য জানতে পারবে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এই প্রযুক্তি চালু করছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, প্রতিবছর প্রায় ৪০ লাখের বেশি আন্তর্জাতিক যাত্রী ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। এই যাত্রীদের মধ্যে তাৎক্ষণিক অপরাধী, মানব পাচার বা মাদক চোরাকারবারি থাকলে শনাক্ত যায় না। বেশির ভাগই এ ধরনের গুরুতর অপরাধী পার পেয়ে যায়। কিন্তু  এপিআইএস অ্যাপসের মাধ্যমে এসব অপরাধী শনাক্ত করা খুবই সহজ হচ্ছে।  

বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান সংবাদ সারাবেলাকে বলেন, এপিআইএস এমন একটি প্রযুক্তি যার মাধ্যমে অন্য দেশের কোনো বিমানবন্দর থেকে আসা একটি ফ্লাইটের সব ক্রু ও যাত্রীর বায়োমেট্রিক উপাত্ত এবং ফ্লাইট সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হবে। তথ্য সংগ্রহের কাজটি উড়োজাহাজের টিকিট কাটার সময়ই স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়ে যাবে। এরপর ফ্লাইট চালুর আগেই সেই তথ্য এপিআইএসের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের হাতে চলে আসবে। এপিআইএস থেকে তথ্য ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে যাওয়ার আগেই উড়োজাহাজের সব আরোহীর তথ্য-উপাত্ত স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিশ্লেষণ করা হবে। বিশ্লেষণের জন্য এপিআইএস সিস্টেমটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অপরাধীদের তালিকার সঙ্গে উড়োজাহাজের যাত্রীদের নাম-ঠিকানা যাচাই-বাছাই করে নেবে। নাম, নামের বানান, নামের অংশবিশেষ বা নামের বানানের বৈচিত্র্যও বিবেচনায় নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে কোনো অপরাধী দেশ ছাড়তে চাইলে বোর্ডিং পাসের আগেই তার তথ্য ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেবে এপিআইএস। 

বেবিচকের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, এপিআইএস বাস্তবায়ন হলে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস, অপরাধীদের দেশত্যাগ বা দেশে প্রবেশ, মানব পাচার, মাদক চোরাচালান ও মানি লন্ডারিংয়ের মতো অপরাধ প্রতিরোধ করা সহজ হবে। এছাড়া বিমানবন্দরে আগমনকারী যাত্রীদের তথ্য আগাম হাতে পাওয়ায় সাধারণ যাত্রীরা ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসসংক্রান্ত আনুষ্ঠানিকতা দ্রুত শেষ করতে পারবেন।

বেবিচকের তথ্য অনুযায়ী, ইমিগ্রেশন পুলিশ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট বিভাগ, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, জাতীয় নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এপিআই সিস্টেমের তথ্য ব্যবহার করতে পারবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, বাংলাদেশ জাতিসংঘ ও ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) সদস্য। সংস্থা দুটির নির্দেশনা অনুযায়ী, আন্তঃদেশীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশকে এপিআইএস প্রযুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে আন্তর্জাতিকভাবে ফ্লাইট পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে জাতীয় বেসামরিক বিমান চলাচল নিরাপত্তা কমিটির সভায় এপিআইএস বাস্তবায়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। পরের বছর এ সংক্রান্ত একটি সেল এবং ২০১৮ সালে যৌথ কারিগরি উপকমিটি গঠন করা হয়। ২০১৯ সালে এপিআইএস বাস্তবায়নের জন্য দরপত্র আহ্বান করে বেবিচক। এরপর নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ২০২২ সালের ২ জানুয়ারি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। এর ধারাবাহিকতায় গত ২৮ ডিসেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান অ্যামিরেটস টেকনোলজিস সল্যুশনসের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে বেবিচক। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, অ্যামিরেটস টেকনোলজিস এপিআই পদ্ধতি স্থাপনের জন্য বহুজাতিক কোম্পানি সিটার প্রযুক্তি ও সফটওয়্যার ব্যবহার করবে।

অপরদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এপিআইএস বাস্তবায়ন ও ব্যবহারের খরচ কত হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে বেবিচক সূত্র বলছে, এটি বাস্তবায়নে ৪০ থেকে ৫০ কোটি টাকা খরচ হতে পারে। অ্যামিরেটস টেকনোলজিস এই টাকা বিনিয়োগ করবে। এর বিনিময়ে প্রতিষ্ঠানটিকে প্রতিবছর নির্দিষ্ট হারে ফি দেবে বেবিচক।  

জানা গেছে, আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রীদের এপিআইএস ব্যবহারের ফি হিসেবে সাড়ে তিন ডলার আরোপ করা হতে পারে। এই ফি যাত্রীদেরই পরিশোধ করতে হবে। বেবিচকের ধারণা অনুযায়ী, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য দুই বছর সময় লাগতে পারে। আর বেবিচকের সঙ্গে বাস্তবায়নকারী সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিষ্ঠানটির আট বছরের চুক্তি হতে পারে। এই সময়ে বছরে আন্তর্জাতিক যাত্রীর সংখ্যা হতে পারে প্রায় ৪৭ লাখ। সে অনুযায়ী, ফি হিসেবে এসব যাত্রীর কাছ থেকে প্রায় ১৪০ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হতে পারে। এর মধ্যে বেবিচকের কোষাগারে কত টাকা জমা হবে আর সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিষ্ঠানকে কত দেওয়া হবে, সেটি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, এপিআইএস বাস্তবায়নের জন্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। তারা (অ্যামিরেটস টেকনোলজিস) একটি কারিগরি প্রস্তাব দিয়েছে, সেটি যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। এখন প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে আর্থিক বিষয়ের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সেটি যাচাই-বাছাইও শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এরপরই চূড়ান্ত চুক্তি হবে। এপিআইএস বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হতে আর বেশিদিন লাগবে না।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.