× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পিকে হালদারসহ ৬ জন গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৫ মে ২০২২, ০০:৩০ এএম

প্রশান্ত কুমার হালদার

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পালিয়ে থাকা বাংলাদেশ থেকে হাজার কোটি টাকা পাচারকারী প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার ও তার ভাইসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপক ছিলেন। গতকাল শনিবার তাদের ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।  ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) এ অভিযান চালায়। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুরোধে এ অভিযানে নামে তারা। গত শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ৯টি বাড়িতে তল্লাশি চালায় ভারতীয় এ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। অবশেষে গতকাল শনিবার পি কে হালদারসহ মোট ৬ জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।  

ভারতের একাধিক গণমাধ্যম জানায়, বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে পশ্চিমবঙ্গের অশোকনগরের একটি বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন পি কে হালদার। নাম পরিবর্তন করে সেখানে বসবাস করে আসছিলেন তিনি। সেই বাড়ি থেকেই তাকে গ্রেপ্তারের দাবি করেছে ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারা আরও জানিয়েছে, সেই সঙ্গে পি কে হালদার ও তার ভাইসহ মোট ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে ধারণা ছিল, পি কে হালদার কানাডায় আত্মগোপন করে আছেন। 

দুদক বলছে, হাজার কোটির বেশি টাকা আত্মসাৎ করে দেশত্যাগী পি কে হালদারের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করতেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা। তার ক্ষমতার উৎস ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর ও নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম। বিভিন্ন সময়ে আর্থিক সুবিধা ও মূল্যবান উপহার দিয়ে ওই ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের দুই কর্মকর্তাকে বশে রেখে দুর্নীতির মাধ্যমে অবাধে অর্থ লোপাট করেন তিনি।

পি কে হালদারের আরেক সহযোগী সুকুমার মৃধাও বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। পশ্চিমবঙ্গের অশোকনগরে তার বাড়ি আছে। তাদের অবৈধ লেনদেন ছড়িয়ে আছে ঢাকা, কলকাতা, হাওড়া, চেন্নাই, মুম্বাইয়ে। 

বরিশালের পিরোজপুরে বাসিন্দা পি কে হালদার। তার বাবা প্রয়াত প্রণবেন্দু হালদার পেশায় ছিলেন দর্জি। মা শিক্ষিকা। ছেলের এমন দুর্নীতির পর অশোকনগরে আরেক ছেলে প্রাণেশ হালদারের বাড়িতে চলে যান তিনি। পি কে হালদারের আয়কর আইনজীবী ছিলেন সুকুমার। তার সঙ্গে যোগসাজশে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তাকে দুদকের দুই মামলায় আসামি করা হয়। ইতোমধ্যে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।

এছাড়া ভারতের গণমাধ্যমে আরো জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গে পিকে হালদারের অঢেল সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে। অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় আলোচিত এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারের অবৈধ সম্পদের সন্ধানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অভিযান চালানো হয়েছে। এতে সন্ধান মিলেছে বিপুল পরিমাণ সম্পদের। পিকে হালদারের সহযোগী সুকুমার মৃধার কাছে এই অর্থের সন্ধান মেলে।

গত শুক্রবার দেশটির উত্তর ২৪ পরগনার কয়েকটি এলাকাতে এই অভিযান চালানো হয়। পৃথক এসব অভিযানে পি কে হালদারের সহযোগী সুকুমার মৃধা, পৃতিশ কুমার হালদার, প্রাণেশ কুমার হালদার ছাড়াও তাদের সহযোগীদের নামে থাকা বাড়ি ও সম্পত্তিতে হানা দিয়েছে ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেট (ইডি) বিভাগ।

এদিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইডি জানিয়েছে, এসব বাংলাদেশি ভুয়া পরিচয় দিয়ে ভারতে কোম্পানিও খুলেছে এবং কলকাতার অভিজাত এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সম্পত্তি কিনেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে বলা হয়েছে, বেশ কয়েকবছর আগেই অশোকনগরে কয়েক কাঠা জায়গার উপরে এই বিলাসবহুল বাগানবাড়ি তৈরি করেন সুকুমার মৃধা। যদিও তিনি বা তার পরিবারের কেউ এই বাড়িতে থাকতেন না।

ইডি কয়েকটি অভিজাত বাড়িসহ বিপুল সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছেন। বাড়িগুলো থেকে জমির দলিলসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক নথি উদ্ধার করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে পিকে হালদারের ২০ থেকে ২২টি বাড়ি আছে বলে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে।

কলকাতা থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অশোকনগর পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে সুকুমার মৃধার বিশাল বিলাসী বাড়ির সন্ধান পেয়েছে ভারতের ইডি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মৃধাকে তাঁরা মাছ ব্যবসায়ী হিসেবে চিনতেন। পিকে হালদার ও সুকুমার মৃধা অশোকনগরে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী। ইডি ধারণা করছে, এই দু’জনের দীর্ঘদিনের যোগসাজশে এনআরবির বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।

এছাড়া ভারতী পল্লী এলাকার পাশে নবজীবন পল্লীতে বিলাসবহুল বাগানবাড়ি পাওয়া গেছে পিকে হালদারের আত্মীয় প্রণব কুমার হালদারের। ঠিক তার পাশেই আরেক বিলাসবহুল বাগানবাড়ি সুকুমার মৃধার। মাছ ব্যবসায়ী পরিচয় দিলেও এলাকাবাসী সুকুমার মৃধার বিলাসী জীবন দেখে সব সময়ই সন্দেহ করত।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইডি বলেছে, প্রশান্ত কুমার হালদার শিবশংকর হালদার নামে ভারতীয় নাগরিকত্ব নেন। জালিয়াতির মাধ্যমে রেশন কার্ড, ভারতীয় ভোটার পরিচয়পত্র, আধার কার্ড, পিএএনের মতো সরকারি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে এ নাগরিকত্ব নেন তিনি। ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে তিনি ও তার সহযোগীরা ভারতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খুলেছে বলে ইডি নিশ্চিত হয়েছে। এছাড়া কলকাতার পোশসহ ভারতের বিভিন্ন এলাকায় তারা স্থাবর সম্পত্তি কিনেছে বলেও নিশ্চিত হয়েছে।

অপরদিকে ভারতে ইডির অভিযানে নজর রেখেছে দমন কমিশন (দুদক)। পশ্চিমবঙ্গে সুকুরমার মৃধার অবৈধ সম্পদের খোঁজে দেশটির সরকারি তদন্ত সংস্থার অভিযানের খবর আসার পর এ বিষয়ে নজর রাখছে দুর্নীতি প্রতিরোধকারী প্রতিষ্ঠানটি। এ বিষয়ে কমিশনের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘বিষয়টির ওপর আমরা কঠোর দৃষ্টি রাখছি, আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি।

খুরশীদ আলম খান বলেন, এই অভিযানে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ যদি পাওয়া যায় এবং ভারত সরকার তা নিশ্চিত করে, তাহলে সেসব অর্থ বাংলাদেশের আদালতের মাধ্যমে জব্দ হবে এবং তা বাংলাদেশে ফিরে আনার আইনি সুযোগ আছে। তবে দুদকের কোনো অভিযোগ বা আবেদনের প্রেক্ষিতে ইডি এ অভিযান করছে কি না তা নিশ্চিত করতে পারেননি এই কর্মকর্তা।

গ্রেফতার প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকা অর্থ আত্মসাৎ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এ পর্যন্ত মোট ৩৪টি মামলা করেছে দুদক। এগুলোর মধ্যে একটির অভিযোগপত্র আদালতে দাখিলও করেছে দুদক। সেই সঙ্গে আরও তিনটি অভিযোগপত্র কমিশনের অনুমোদনের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। মামলায় আসামিদের মধ্যে ১৩ জনকে গ্রেফতার ও রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে ১১ জন আসামি আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকি ৬৪ জনের বিদেশ যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে আদালতে।

এছাড়া এখন পর্যন্ত আলোচিত এই অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পি কে হালদারের ৮৩ সহযোগীর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা মূল্যের জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাটসহ অন্যান্য স্থাবর সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে।

অন্যদিকে পি কে হালদারের সম্পদ বাজেয়াপ্তে ভারত সরকারের সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে। ভারতে পি কে হালদারের অর্থপাচারের বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পর তা বাজেয়াপ্তে দেশটির সরকারের সহযোগিতা নেয়া হবে। গতকাল শনিবার সকালে এ কথা জানিয়েছেন দুদক আইনজীবী। 

আইনজীবি বলেন, হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে এখন পলাতক পি কে হালদার। আত্মসাৎ করা বিপুল পরিমাণ সেই অর্থ-সম্পদের হদিস মিলতে শুরু করেছে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ও দুদকের অনুরোধে ভারতে এ অভিযান চালাচ্ছে দেশটির অর্থমন্ত্রণালয়ের গোয়েন্দা ইউনিট ইনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট-ইডি।

গত শুক্রবারের অভিযানে পশ্চিমবঙ্গে যে বিপুল সম্পত্তির খোঁজ মেলে, তা পিকে হালদারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী সুকুমার মৃধা ও তার সহযোগীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। দিনভর কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনার অন্তত ১০টি স্থানে তল্লাশি চালিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। পরে উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার পোলেরহাটে দু’টি বাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় পি কে হালদারের ব্যক্তিগত আইনজীবী সুকুমার মৃধার অবৈধ সম্পত্তির খোঁজে অভিযান শুরু করে ভারতের এই সংস্থা।

জানা যায়, পছন্দের সম্পত্তি বাগিয়ে নিতে মরিয়া হয়ে উঠতো সুকুমারের বাহিনী। পশ্চিমবঙ্গের এমন ৯টি বাড়িতে অভিযান শেষে মূল ফটকে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়। দুদকের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জানান, ভারতে পি কে হালদারের অর্থপাচারের যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। দুদক আইনজীবী আরও জানান, পাচার হওয়া অর্থে ভারতে সম্পদ কেনার ঘটনা প্রমাণিত হলে দেশের আদালত নির্দেশনা নিয়ে ওই সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে ভারত সরকারের সহযোগিতা নেয়া যাবে।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.