× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের খ্রিস্টধর্ম

মো. মোছাদ্দেক হাওলাদার, বরিশাল

২৪ ডিসেম্বর ২০২২, ০৬:১৭ এএম

এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ গির্জা বরিশালের অক্সফোর্ড মিশনের গির্জা। অনেকের কাছেই তা লাল গির্জা নামে পরিচিত। গতকাল শনিবার বিকেলে এই গির্জা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতেই দেখা গেল চারদিকে সাজ সাজ রব। গির্জার ভেতরে চলছে শেষ সময়ের সাজসজ্জার কাজ। ফুল আর বাহারি বেলুনের সাজ আর নানান রঙের টিস্যু কাপড়ের নকশা করা লাইটের ঝালোর। ভেতরে-বাইরে সর্বত্র আলোকসজ্জা।

শুধু অক্সফোর্ড মিশন গির্জা নয়, শুভ বড়দিন উপলক্ষে ঝলমল করছে বৃহত্তর বরিশালের শতাধিক গির্জা। উপলক্ষ খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব-বড়দিন। সেই উৎসবের মাহেন্দ্রক্ষণ উপস্থিত। ২৫ ডিসেম্বর রোববার সারা দেশে খ্রিস্টধর্মাবলম্বীরা আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে পালন করবে দিনটি।

বরিশালে খ্রিস্টধর্মের আগমন 

মিশনারিদের হাত ধরে ১৮৩০ সালে বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলে খ্রিস্ট ধর্মের আগমন ঘটেছিল। এ সময় বড় ভূমিকা ছিল বাকেরগঞ্জের তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট মি. গ্যারেটের। সে সময় বেশির ভাগ খ্রিস্টান ছিলেন ব্যাপটিস্ট চার্চের অনুসারী। অল্পসংখ্যক ছিলেন চার্চ অব ইংল্যান্ড ও রোমান ক্যাথলিক। শ্রীরামপুর মিশনের চেষ্টায় গৌরনদীর অনেক নিম্নবর্ণের হিন্দু খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন।

তবে মুসলমান মধ্যে খ্রিস্টান মিশনারিরা কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি। ১৯০১ সালে সে সময়ের বাকেরগঞ্জে খ্রিস্টান ছিল ৫ হাজার ৫৯১ জন। এরপর ১৯৪১ সালে তা ৯ হাজার ৩৫৭, ১৯৫১ সালে ১১ হাজার ২৪৫ ও ১৯৬১ সালে ১১ হাজার ৭৭৬ জন হয়।

নদীর সূত্রে বরিশালের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল ঢাকা ও কলকাতার। ১৮৯৮ সালে প্রকাশিত খোসালচন্দ্র রায় তার বাকেরগঞ্জের ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন-‘বাকেরগঞ্জের ম্যাজিস্ট্রেট মি. গেরেট সাহেবের সময়ে ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে প্রথমে এদেশে খ্রিস্টধর্ম প্রচার আরম্ভ হয়। ম্যাজিস্ট্রেট গ্যারেটের পরবর্তী সময়ে বিচারক হয়েছিলেন। তিনি ব্যাপটিস্ট ছিলেন। তার নাজির মি. পারি সক্রিয় ধর্মপ্রচারক ছিলেন। পরে তিনি যশোরে মিশনারি হিসেবে কাজ করেন। তার স্থলে বরিশালে এসেছিলেন মি. স্মিথ এবং তারপর মি. সিলভেস্টার বারেইরো। সিলভেস্টার এসেছিলেন চট্টগ্রাম থেকে এবং বরিশালে কিছুদিনে স্কুলে শিক্ষকতাও করেছেন। তিনি ব্যাপটিস্ট মিশনের কাজ করেছেন অনেক দিন, কিন্তু নৈতিক স্খলনের দায়ে তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। তখন তিনি চার্চ অব ইংল্যান্ডে যোগ দেন। এরা ব্যাপটিস্ট মিশনের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। বিশপ অব কলকাতা এদের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। কিন্তু ব্যাপটিস্টদের মতে, এরা ছিলেন বিভিন্ন চার্চ থেকে বহিষ্কৃত মানুষ।

বাকেরগঞ্জে খ্রিস্টান জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে সে সময় বেশ ভূমিকা রেখেছিলেন মি. পেজ। তিনি ছিলেন ব্যাপটিস্ট মিশনারি। বেশ কয়েক বছর তিনি বাকেরগঞ্জে অবস্থান করেন এবং অনেককে খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত করেন। এরপর মি. সেলও তার ভূমিকার জন্য স্থানীয় খ্রিস্টান সমাজে প্রশংসিত হয়েছেন।

ঐতিহাসিক লাল গির্জা 

দেশের স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন অক্সফোর্ড মিশন চার্চ বা লাল গির্জা। অক্সফোর্ড মিশন চার্চের নকশা নিয়ে ফাদার স্ট্রং ও মাদার এডিথের পরিকল্পনা বহু আগের। দু’জনের পরিকল্পনা ও ভাবনার বাস্তব রূপ দেন ইংল্যান্ড স্থপতি ফিলিপ থিকনেস। তবে লাল ইটের তৈরি বলে স্থানীয় মানুষের কাছে ‘লাল গির্জা’ নামে পরিচিত। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ গির্জা এটি। শুধু বাংলাদেশই নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম গির্জা হল এটি। যার চারিদিকে রয়েছে সবুজের সমারোহ। শতবর্ষী এ গির্জার নয়নাভিরাম সৌন্দর্য এখনও মানুষের আকর্ষণের প্রধান কেন্দ্র। 

মূলত উনবিংশ শতকের শেষের দিকে অক্সফোর্ড মিশনারি সংস্থার উদ্যোগে বরিশালে তৈরি হয় এপিফ্যানি চার্চ। পরবর্তীকালে যেটা পরিচিতি পায় অক্সফোর্ড মিশন চার্চ হিসেবে। ১৯০৭ সালে সম্পূর্ণ কাজ শেষ হয় এই গির্জার। অনেক যত্ন নিয়ে নকশা করেছিলেন ফাদার স্ট্রং এবং সিস্টার এডিথ। প্রাঙ্গণ ছেড়ে গির্জার ভেতরে ঢুকলেই বোঝা যাবে সেই যত্ন।

মোট ৪০টি খিলানের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে এই বিশাল গির্জা। মূল প্রার্থনা কক্ষটির উচ্চতা প্রায় ৫০ ফুট! লাল ইট দিয়ে পুরো স্থাপত্যটি তৈরি হলেও, ভেতরের ছাদটি কাঠের তৈরি। মার্বেলের প্রশস্ত মেঝের ওই পাড়ে রয়েছে বড় একটি ক্রশ। বেথেলহেম থেকে নাকি এটি আনা হয়েছিল।

গির্জাটি এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে, যাতে বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগেও এর স্থাপত্যশৈলী বিনষ্ট না হয়। রয়েছে চার্চের বিখ্যাত সেই ঘণ্টা। যা দিনে নিয়মিত সাত বার চার্চেই বেজে ওঠে। যা এশিয়ার সবচেয়ে বড় ঘণ্টা। 

কথিত আছে, কবি জীবনানন্দ দাশের সঙ্গে তার প্রথম প্রেমিকা মুনিয়ার দেখা মেলে এই গির্জায়। মুনিয়ার মা এই গির্জায় সেবিকার কাজ করতেন। শুধু কি তাই? বরিশালের এই পুরোনো গির্জাটির সঙ্গে জীবনানন্দের সম্পর্কও ছিল নিবিড়। ছাত্রাবস্থায় অক্সফোর্ড মিশনের ছাত্রাবাসে থাকতেন তিনি। ফলে এখানকার ফাদার ও মাদারদের সঙ্গেও ছিল তার ঘনিষ্ঠতা। এই গির্জাটি জীবনানন্দের বাড়ি থেকে সামান্য দূরেই অবস্থিত।

গির্জাটি নির্মাণের ১০০ বছরেরও বেশি সময় পর হলেও আজও এর সৌন্দর্যের কোনও পরিবর্তন ঘটেনি। এশিয়ার সবচেয়ে সুন্দর ও ব্যতিক্রমধর্মী গির্জা এটি। মূল গির্জার পাশে রয়েছে বেল টাওয়ার। বেল টাওয়ারটি গির্জার আকর্ষণীয় অংশ। দিনে সাতবার ঠিক প্রার্থনার ৫ মিনিট আগে ঘণ্টাধ্বনি বাজানো হয় এবং এত বড় ঘণ্টা এশিয়ার অন্য কোনো দেশে নেই। 

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.