× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

কোনো সাফল্য নেই: টুকু

রাশেদ আহমেদ মিতুল

০৭ জানুয়ারি ২০২২, ০৫:১২ এএম । আপডেটঃ ০৭ জানুয়ারি ২০২২, ০৫:২৬ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার তৃতীয় বছর সম্পন্ন করে আজ (৭ জানুয়ারি) চতুর্থ বছরে পদার্পণ করেছে। গত তিন বছরে বর্তমান সরকারের সাফল্য ও ব্যর্থতা নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সংবাদ সারাবেলাকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প সম্পর্কে কথা বলেন তিনি।

সংবাদ সারাবেলা: ৭ জানুয়ারি ২০২২ সরকার চতুর্থ বছরে পদার্পণ করেছে, দেশ পরিচালনায় সরকার সফল হয়েছে কিনা ? যদি আপনার উত্তর না হয় তাহলে কেন সফল হয়নি?  

ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু: সরকার দেশ পরিচালনায় সফল হয় নাই। কেননা এই সরকার মানুষের সবচেয়ে বড় অধিকার, যে অধিকারের জন্য আমরা যুদ্ধ করেছিলাম, যে অধিকারের অঙ্গীকার সেই সময় আওয়ামী লীগ করেছিল, ভোটে জয়লাভ করেছিল, সেই অধিকার গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে নিয়েছে। তারা যে তিন  বছর পূর্ণ করলো, এটা জনগণের ম্যান্ডেটের সরকার নয়। তার একটা ফেয়ার নির্বাচন না করে মধ্যরাতে ভোট করে পরের দিন ভোট ডিক্লেয়ার করে আজকে জোর করে ক্ষমতায় আছে। গণতন্ত্রের যেসব জিনিসের প্রয়োজন তার একটাও এখন উপস্থিত নাই। সরকার একতরফাভাবে যে উন্নয়নের কথা বলছে সেই উন্নয়নের পোস্টমার্টম করলে দেখা যাবে এদেশের জন্য সরকার একটা ভয়ংকর অশনি সংকেতের দিকে যাচ্ছে।

সংবাদ সারাবেলা: সরকার কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে ?  

ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু: সরকারের প্রথম ব্যর্থতা হচ্ছে গণতন্ত্র হরণ করে নিয়েছে। মানুষের কথা বলার ক্ষমতা নাই। রাস্তায় দাঁড়িয়ে মিছিল করতে পারে না। তাদের মত প্রকাশ করতে পারে না। এটা করার পরতো আর কোন কিছু থাকে না।  

সংবাদ সারাবেলা: বাংলাদেশে বিরোধীদল সাধারণত উন্নয়ন, সাফল্যকে স্বীকৃতি দিতে চায় না। এই নীতি আপনি সমর্থন করেন কি ?

ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু: গণতান্ত্রিক পদ্ধতি থেকে যদি কোন উন্নয়ন হয় এবং সেই উন্নয়ন যদি জনগণের কাজে লাগে অবশ্যই স্বীকৃতি দেয়া প্রয়োজন।

সংবাদ সারাবেলা: ঢাকায় মেট্রোরেল প্রকল্পকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন ? 

ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু: মেট্রোরেল প্রকল্পটা আমি মনে করি যে এই প্রকল্পের চেয়ে ঢাকা যানজট থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের ঢাকায় বেশি করে উড়াল রাস্তা তৈরি করা প্রয়োজন ছিল। সেটা না করে মেট্রোরেল করার ফলে গাড়ির যে চাপ রাস্তায় আছে, সেই চাপ কমবে না। আমি মনে করি যে মেট্রোরেল করে সাধারণ মানুষের যে রাস্তায় দুর্ভোগ তা কমবে না। আর টিকিটের দাম কত হবে সেটাও একটা প্রশ্ন আছে। টিকিটের দাম অত্যাধিক বেশি হলে মানুষ বাসেই চড়বে, মানুষ মেট্রোরেলে চড়বে না।

সংবাদ সারাবেলা: গত বিএনপি সরকারের আপনি বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। বর্তমান সরকারের বিদ্যুৎ সেক্টরে অর্জন কি? 

ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু: হ্যাঁ, আমি বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ছিলাম। আমাদের সময়ে দেশের যে প্রচলিত পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুল ছিল সেই রুল মেনে এবং যাতে বিদ্যুৎ মানুষের সহনীয় পর্যায়ে থাকে সেইভাবে পরিকল্পনা করে আমরা এগিয়েছি। আমরা মাত্র পাঁচ বছর ক্ষমতায় ছিলাম। ফলে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। বিদ্যুৎটা এমন একটা জিনিস যে এটা বাণিজ্যিক আবার বাণিজ্যিক না। বাণিজ্যিক এবং সেবা। দুইটাকে ব্লেন্ড করে বিদ্যুৎ। এখন সরকার অপরিকল্পিতভাবে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়ে গেছে তার কোন ট্রান্সমিশন এবং তার কোন ডিস্ট্রিবিউশন বাড়ায়নি। 

পক্ষান্তরে অপরিকল্পিতভাবে প্রাইভেট সেক্টরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি দেওয়াতে আমাদের পকেট থেকে আমাদের রেভিনিউয়ের হাজার হাজার কোটি টাকা এই ক্যাপাসিটি পেমেন্ট করে যাচ্ছি আমরা। তাতে আমাদের জনগণের উপর চাপ বাড়ছে। সুতারাং এই অপরিকল্পিত বিদ্যুতের উন্নয়নের যে বাহবা নেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার, আমি মনে করছি আলটিমেটলি এটা জনগণের উপর বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। এখনো কিন্তু লোডশেডিং সারা দেশেই হয়। ঢাকায় হয় না কিন্তু গ্রামেগঞ্জে প্রতিটা দিনই লোডশেডিং হয়।

সংবাদ সারাবেলা: বাংলাদেশের একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নিজ অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ। শেষ পর্যন্ত নির্মাণ সম্পন্ন করছে এবং এ বছরেই সেতুটি উদ্বোধন হচ্ছে। আপনার অভিমত কি? 

ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু: আসলে নিজ অর্থায়ন কথাটার মধ্যে শুভঙ্করের ফাঁকি। প্রত্যেকটা প্রকল্পই নিজ অর্থায়নে হয়। লোন করা হয়, লোন করে শোধ করা হয়। আমাদের টাকা দিয়েই শোধ করা হয়। পদ্মা সেতু এগুলো ইন্সটিটিউশনাল লোন, কন্সেশনাল লোন বলে। সেই লোনটা পদ্মা সেতুতে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক দেয় নাই। এখন আমরা বাইরে থেকে লোন নিয়েছি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে যদি খবর নেওয়া হয় যে আমাদের লোকাল ব্যাংকগুলো থেকে কত টাকা উত্তোলন করা হয়েছে পদ্মা সেতুর নামে। সব হিসাব অস্বচ্ছ আছে। স্বচ্ছ হিসাব যে দিন হবে, গণতান্ত্রিক সরকার যেদিন আসবে সেদিন পদ্মা সেতুর এই হিসাবটা বের হবে, আমাদের নিজেদের অর্থায়ন কত?  সব প্রকল্পেই আমাদের নিজেদের অর্থায়নে হয়। এটা আমাদের মানুষের ব্যাংকের টাকা। সরকার লোন নিয়ে সেটা করেছে। সেটার হিসাব না হওয়া পর্যন্ত এই সম্পর্কে কোন মন্তব্য করা কঠিন।  তবে এখনও এই যে পদ্মা সেতুর রেট অব রিটার্ন এটার হিসাব ঠিক হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। তবে আমার মনে হয় যে রেট অব রিটার্ন যেটা হবে তাতে এই পদ্মা সেতুর উপর যে টোল লাগানো হবে সেই টোল মানুষের জন্য খুব কষ্টকর হবে। যে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে তা ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড থেকে অনেক উপরে। পার্শ্ববর্তী ভারতের আসামে যে ব্রিজ আছে একই সমান দীর্ঘ সেই ব্রিজ থেকে প্রায় ৩ গুণ ব্যয়। যেটা ভুপেন হাজারিকা ব্রিজ বলে। ওটা ব্রহ্মপুত্র নদীর ওপর দিয়ে ব্রিজ।  

সংবাদ সারাবেলা: রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সরকারের কোন সাফল্য আছে কি? 

ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু: সাফল্যতো আমি দেখি না। রাজনৈতিক সাফল্য হলো মানুষকে মারো, রাজনৈতিক সাফল্য হল গুম, খুন, হত্যা, রাজনৈতিক সাফল্য হলো আমেরিকার স্যাঙ্কশন (নিষেধাজ্ঞা) আমাদের একটা প্রতিষ্ঠানের উপর।

সংবাদ সারাবেলা: শেষবছর পূর্ণকালে সরকারের প্রতি আপনার কোন পরামর্শ বা আহ্বান আছে কি?

ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু: সরকারে প্রতি একটাই পরামর্শ, মানুষের কাছে যে ওয়াদা করেছিল মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফেরত দেবে সেটা তারা অপহরণ করে নিয়েছে। একদলীয় শাসনে রূপান্তরিত করেছে। এই  অথরেটিয়ান রেজিম থেকে বের হয়ে এসে একটা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দেশে নির্বাচন করে মানুষের অধিকার মানুষকে ফেরত দিয়ে মানুষ যদি পছন্দ করে তাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় রাখবে। আর যদি না রাখে তাদেরকে বিদায় নেওয়ার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি।

পরিচিতি: ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ১৯৫০ সালের ১০ মে সিরাজগঞ্জের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মরহুম আব্দুল্লাহ আল-মাহমুদ

ইন্ডিয়ান লেজিসলেটিভ কাউন্সিল , বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলি এবং পাকিস্তান জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতার পর আব্দুল্লাহ আল-মাহমুদ কলকাতায় পাকিস্তানে প্রথম উপ-হাইকমিশনার এবং পরবর্তী পর্যায়ে সরকারের শিল্প ও প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রী হিসেবও দায়িত্ব পালন করেন। 

ইকবাল হাসান মাহমুদ ১৯৬৭ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়াশুনার জন্য ঢাকার নটরডেম কলেজে ভর্তি হন। কলেজে পড়ার সময়ই তিনি সক্রিয়ভাবে ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনে এবং বাম ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তী পর্যায়ে ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়া পর্যন্ত তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন গ্রুপ) ও পূর্ব বাংলা ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃস্থানীয় কর্মী ছিলেন। শিক্ষাজীবন শেষে তিনি ব্যবসায় সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন এবং বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেন। 

জাতীয় রাজনীতিতে তাঁর প্রবেশ ঘটে ১৯৮৪ সালে, যখন তিনি জাতীয় পার্টির সদস্য হিসেবে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তিনি ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে (বিএনপি) যোগদান করেন। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত সময়ে ইকবাল হাসান মাহমুদ বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেনা সমর্থিত মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকারের সময় তাঁকে স্ত্রী, পুত্র, কন্যাসহ কারাবরণ করতে হয়। ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে নিজে অংশগ্রহণ করতে না পারলেও তাঁর স্ত্রী রুমানা মাহমুদ প্রত্যক্ষ ভোটে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। 

ইকবাল হাসান মাহমুদ এর ভগ্নিপতি বিশিষ্ট চক্ষু চিকিৎসক মরহুম প্রফেসর আব্দুল মতিন বাংলাদেশ সরকারের উপপ্রধানমন্ত্রী  দায়িত্ব পালন করেন। ইকবাল হাসান মাহমুদের একমাত্র ছোট ভাই মনজুর হাসান মাহমুদ সিরাজগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তিনি এক কন্যা ও এক পুত্রের জনক। তার নাতির সংখ্যা তিনজন। 

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.