× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে: ফখরুল

উমর ফারুক, রাজশাহী থেকে

০৩ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:১১ এএম

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা আবারো বলছি- তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করতে হবে। অন্যথায় এ দেশে কেনো নির্বাচন হবে না। 

ওবায়দুল কাদের বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। কোন সংবিধান? যেখানে বার বার কাটাছেঁড়া করা হয়েছে নিজের প্রয়োজনে। সেই সংবিধান অনুযায়ী দেশ চলতে পারেনা। তারা এই সংবিধানের অনেক পরিবর্তন করেছে। নতুন নতুন আইন করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করেছে। যেখানে ফেসবুকে পোস্ট দিলেও উস্কানি হিসেবে আখ্যা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় এবং জামিন নেই। আমরা তো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সবার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করেছিলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগ সেটা চায় না। তাদের লক্ষ্য যেমন করে পারো বন্দুক-পিস্তল দিয়ে ক্ষমতায় থাকো। আমরা তো তাদের চাকর নই। এই দেশের মালিক জনগণ। 

শনিবার বিকেলে রাজশাহীর মাদরাসা মাঠে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

মির্জা ফখরুল বলেন, অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এরপর নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। যেই সরকার নতুন স্বপ্ন দেখাবে। এখন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা এবং নিহত সহযোদ্ধাদের রক্তের বদলা নিতে হলে আমাদেরকে জেগে উঠতে হবে। দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।

চাল, ডাল, জ্বালানি তেল, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য বৃদ্ধি, চলমান আন্দোলনে ভোলায় নূরে আলম ও আব্দুর রহিম, নারায়ণগঞ্জে শাওন, মুন্সিগঞ্জে শহিদুল ইসলাম শাওন ও যশোরে আব্দুল আলিম মোট ৫ জন হত্যার প্রতিবাদে, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের প্রতিবাদে সারাদেশে বিভাগীয় গণসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা দেয় বিএনপি। 

শনিবার সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানের বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশ শুরু হয়। 

বিএনপির রাজশাহী মহানগরীর আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা এরশাদ আলী ঈশার সভাপতিত্বে ও মামুনুর রশিদ ও শ্রী বিশ্বনাথ সরকারের পরিচালনায় গণসমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, কেন্দ্রীয় নেতা মিজানুর রহমান মিনু, মো. শাহজাহান মিয়া, আব্দুল মান্নান তালুকদার, হাবিবুর রহমান হাবিব, কর্নেল এম এ লতিফ খান, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শাহিন শওকত, ওবায়দুর রহমান চন্দন, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, নাদিম মোস্তফা, অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন, আবু সাঈদ চাঁদ, তোফাজ্জল হোসেন তপু, আবু বকর সিদ্দিক, ফজলুর রহমান খোকন, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, আতিকুর রহমান রুমন, ছাত্রদলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, ওলামা দলের শাহ মোহাম্মদ নেছারুল হক, শ্রমিকদলের আনোয়ার হোসাইন, কাজী মো. আমীর খসরু, মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, নওগাঁ জেলার আবু বকর সিদ্দিক নান্নু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। 

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের চলমান লড়াই সংগ্রামে ৬ শতাধিক নেতাকর্মী গুম হয়েছে। পাবনার ঈশ্বরদীতে জাকারিয়া পিন্টু সহ ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। এতোদিন পরে সাজা দিয়ে বিরোধী দলকে নির্মূল করতে চায় সরকার। কিন্তু বিরোধী দল আরো নতুনভাবে উদ্যমী হয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এখন লুটেরা দলে পরিণত হয়েছে। নিজেরা লুট করে পাহাড় বানাচ্ছে আর সাধারণ মানুষকে গরিব করছে। কদিন আগেই পাবনার কয়েকজন কৃষককে জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অথচ ক্ষমতাসীনরা ব্যাংক লুট করে দিচ্ছে। খাজাঞ্চিখানা শূন্য করে দিচ্ছে কোনো ব্যাবস্থা নেওয়া হয় না। ইসলামী ব্যাংকের টাকা নামে বেনামে ঋণের নামে লুট করছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের রাজনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করেছে। তারা কেয়ারটেকারের দাবিতে ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল। গান পাউডার দিয়ে আগুন ধরিয়ে মানুষ মেরেছে। পাঁচবার কেয়ারটেকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছে সমস্যা হয়নি। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সেই ব্যবস্থা বাতিল করেছে।

ঢাকা সমাবেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার ঢাকার সমাবেশ নিয়ে ভয় পেয়েছে। আমরা নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাই। তারা তাদের ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ঘুম হারাম করে ফেলেছে। তারা আতংকে ভুগছে। আমরা তো নয়া পল্টনে অসংখ্য সমাবেশ করেছি যেখানে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া উপস্থিত ছিলেন। কই তখন তো কোনো সমস্যা হয়নি। এখন তারা জঙ্গি নাটক শুরু করেছে। নিজেদের প্রয়োজনে জঙ্গী বানায়। নিজেরাই বাস পুড়িয়ে অগ্নিসন্ত্রাস করে। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগ।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, পুলিশ আপনারা কি এই দেশের সন্তান নন? জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বাড়ি গাড়ি বানান। কেন নিরীহ মানুষের ওপর নির্যাতন করেন? খবরদার আর নিপীড়ন করবেন না। আপনারা হলেন জনগণের সেবক। যেখানে আপনাদের উচিত ছিল নেতাকর্মীদেরকে সহযোগিতা করা সেখানে আপনারা পানি বিদ্যুৎ ও খাবার বন্ধ করেছেন। কেন আপনারা এতো অমানুষ? এভাবে সমস্ত মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন। আপনারা বিধান মেনে চলুন। অন্যথায় দেশের মানুষ কিন্তু কোন অন্যায় সহ্য করবে না।

তিনি আরো বলেন, আজকে মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। ক্ষমতাসীনরা দেশের সবকিছু লুটে নিয়ে যাচ্ছে বিদেশে। ডলারের দাম এখন আকাশচুম্বী। কারণ সবই তো কানাডা আর মালয়েশিয়ায় পাচার করেছে। ১১ বছরে ১৯ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে। আর বলে মেগা উন্নয়ন করেছে। অথচ কৃষক সার পায় না। ফসলের দাম পায় না। ঘরে ঘরে চাকরি নেই। ১০ টাকায় চাল নেই। কারণ সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে।

তিনি বলেন, আজকে ধানের শীষে রক্ত মিশেছে। এই রক্ত দূর করে ধানের শীষ পরিষ্কার করতে হবে। আমাদের আন্দোলন বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়। আমাদের আন্দোলন জনগণের ভোটাধিকার ও জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনার আন্দোলন। একটা সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আন্দোলন। আমরা আর কষ্ট করবোনা। এই ভয়াবহ দানব সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তা না হলে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ঠিক থাকবে না। ১৪ বছর ধরে আমরা নির্যাতিত। ছোটো ছোটো বাচ্চাগুলো তাদের বাবা ও স্বজনদের জন্য অপেক্ষায় থাকে।

মির্জা ফখরুল বলেন, রাজশাহীর ইতিহাস আন্দোলনের ইতিহাস। এই রাজশাহীতে অনেক বরেণ্য মানুষের জন্ম হয়েছে। তেভাগা আন্দোলনের সূতিকাগার বৃহত্তর রাজশাহী। এই অঞ্চলে জন্মেছেন দুই মহানায়ক। একজন মওলানা ভাসানী আরেকজন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। বিভাগীয় গণসমাবেশে যোগ দিতে যারা তিনদিন ধরে কনকনে শীত উপেক্ষা করে খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করেছেন। খেয়ে না খেয়ে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। তাদেরকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানান মির্জা ফখরুল।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, এই সরকার তো আগের রাতেই ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় আছে। বিদেশীরাও বলছে তারা ভোট চোর। আসলে তাদের কোনো লজ্জা নেই। তিনি বলেন, গত ২ বছরে ১২ হাজার নতুন কোটিপতি বেড়েছে। অন্যদিকে সাড়ে ৩ কোটি মানুষ আরো গরিব হয়েছে। তাহলে সরকার কার উন্নয়ন করেছে? আজকে দেশের খেটে খাওয়া মানুষ শান্তিতে নেই, যারা হালাল উপার্জন করে। যারা ঘুস খায়, অবৈধ উপার্জন করে তারা কেবল সুখে আছে। এই সরকারকে বদলাতে হবে। কারণ আওয়ামী লীগ হলো চাটার দল, চোরের দল। তাদের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন ‘সবাই পায় সোনার খনি আমি পেলাম চোরের খনি।’ ৮ হাজার কেজি চালসহ আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার হয়েছে। আসলে শেখ মুজিব নেই কিন্তু চোরগুলো রয়ে গেছে।

সেলিমা রহমান বলেন, রাজশাহীর সমাবেশ থেকে প্রমাণিত হয় যে, শেখ হাসিনার সরকারকে দেশের জনগণ আর চায় না। তাকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। আজকে জনগণ সরকারকে লাল কার্ড দেখিয়েছে। সরকার এখন আতংকিত। ইনশাআল্লাহ ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গণসমাবেশ থেকে সরকারকে পদত্যাগের এক দফার কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এরপর জনগণই আপনাদের বিরুদ্ধে খেলবে। সুতরাং ওবায়দুল কাদেরকে বলবো- খেলা বন্ধ করুন। আজকে দেশে মানুষের নিরাপত্তা নেই। জনগণের টাকা লুটে বিদেশে পাচার করে আরাম আয়েশ করছে। অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষ হাহাকার করছে। দেশকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছে।

ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করেছিলাম আজকের বাংলাদেশের জন্য নয়। আজকে একটি সমাবেশ করতে হলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয় এবং জনগণ তিনদিন আগেই এসে তাঁবুতে আশ্রয় নেয়। এটা কি সেই মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ? আজকে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে আন্দোলন করতে হচ্ছে। তবে মানুষের ভোটাধিকার ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আরেকটা মুক্তিযুদ্ধ করবো। রাজশাহী রেঞ্জের পুলিশের যদি আওয়ামী লীগ করার ইচ্ছা হয় তাহলে পোশাক ছেড়ে রাস্তায় এসে বিএনপির সাথে লড়েন। দেখা যাবে কে জেতে? জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আপনাদের পরিবার চলে। সুতরাং আমাদের রক্তচক্ষু দেখালে ভয় পাই না।

রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, সমাবেশ ঠেকাতে সরকার গায়েবি মামলা দিয়েছে, পরিবহন ধর্মঘট করেছে। ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। তবুও আমাদের সমাবেশ মহাসমাবেশে রুপ ধারণ করেছে। তিনি এসময় নেতাকর্মীদের বলেন- আপনারা সরকারকে হলুদ কার্ড দেখান। পরে নেতাকর্মীরা হলুদ ক্যাপ উুঁচু করে ধরেন। যারা পরিশ্রম ও কষ্ট করেছেন সবাইকে ধন্যবাদ জানান দুলু।

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফজলে হুদা বাবুল নিজ এলাকার প্রায় ৩ হাজারের বেশি নেতাকর্মী নিয়ে সমাবেশ যোগ দেন। তিনি বলেন, বুধবারই ঈদগাঁ মাঠে অবস্থান নেন তারা। সেখানে নেতাকর্মীদের খাওয়ার জন্য যাবতীয় সরঞ্জাম ও উপকরণে ব্যবস্থা করেন। গতকাল শনিবার তিনি ১ টি গরু জবাই করে মাংস ও খিচুড়ি রান্না করে নেতাকর্মীদের খাইয়েছেন। 

তিনি বলেন, পুলিশ ও প্রশাসন বাধা দিবে, পরিবহন ধর্মঘট হবে এগুলো মাথায় রেখেই তারা আগেই সমাবেশে এসেছেন। ট্রেনে আসার সময় সান্তাহার রেল স্টেশনে পুলিশ নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের চেষ্টা করে। কিন্তু লোকসংখ্যা বেশি হওয়ায় পুলিশ পিছু হটে বলে তিনি জানান।

Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.