× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

নতুন বছরে পুরনো সমস্যা

ফরিদ হোসেন

১০ জানুয়ারি ২০২২, ০৭:২৬ এএম

নতুন বছর ২০২২ যে ঘটনাবহুল হবে সন্দেহ নেই। সদ্য বিগত বছরের শেষ প্রান্তে দেশের ঝিমিয়ে পড়া রাজনীতি কিছুটা চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। সদ্য-শুরু বছরজুড়ে তা আরো বেগবান হবে তা নিশ্চিত বলা যায়। বড় কারণ হল, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে দেশের ১২তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আগামী জাতীয় নির্বাচন ভালোভাবে মোকাবিলা করতে চায়। স্বাভাবিকভাবেই দলটি আবারও ক্ষমতা ধরে রাখতে আগ্রহী। শুধু আগ্রহ নয়, জয়ী হবার জন্য দলের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকবে সে আভাস এখনই সুস্পষ্ট পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে, এতকাল ছন্নছাড়া প্রধান বিরোধী শক্তি বিএনপি নিজেকে নিজেই ধাক্কা দিচ্ছে। ঘুম থেকে জেগে উঠতে নেতা, কর্মী সমর্থকদের তাগাদা দিচ্ছে। রাস্তায় নামছে। কোথাও আবার নিজেদের মধ্যেই মারামারি করছে। কোথাও পুলিশ বা আওয়ামী লীগ কর্মীদের সাথে সংঘর্ষ হচ্ছে।

২০২২ সালে রাজনীতি যে উত্তপ্ত হবে তার আরো অনেক ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এ বছরের ১৪ আগস্ট বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পাঁচ বছরের মেয়াদকাল শেষ হচ্ছে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতি ২০ ডিসেম্বর থেকে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা শুরু করেছেন। দেশের ৩৯টি নিবন্ধিত দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল এরশাদপš’ী জাতীয় পার্টির সাথে বৈঠকের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির সংলাপ শুরু হয়েছে। তবে বিএনপি এই সংলাপকে অর্থহীন এক তামাশা আখ্যা দিয়েছে। দলটি সাফ জানিয়ে দিয়েছে সংলাপে যাবে না। সিপিবি, বাসদ ও ইসলামী আন্দোলনও বলেছে তারা সংলাপে যাবে না। সবায়ই একই কথা, এই সংলাপের কোন অর্থ নেই। যা হবার তা পূর্ব র্নিধারিত হয়েই আছে। রাষ্ট্রপতির সংলাপ একই আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ যা বলবে তাই হবে। সংলাপে অংশগ্রহণকারি দলগুলো সকলেই একটা কথা বলেছে, সংবিধানের বিধান মেনে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য একটি স্থায়ী আইন তৈরি করতে হবে। সেটা চলতি জানুয়ারি মাসে যে সংসদ অধিবেশন বসছে সেখানেই আইনটি করা সম্ভব। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তা মনে করেন না। সংবিধান অনুযায়ী একটি আইন করতে হবে সেটা তিনি মানেন। তবে মনে করেন যে, রাতারাতি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন করা সম্ভব নয়। সময় লাগবে। প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেতে হবে। ড্রাফটিং রুখতে হবে, মন্ত্রিসভায় তা আলোচনা করতে হবে, অনুমোদন পেতে হবে। সংসদে পেশ করার আগে বিলটির উপর জনমত যাচাই করতে হবে। সরকার আন্তরিক হলে আইনটি রাতারাতি করা সম্ভব বলে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন ও আরো কেউ কেউ যে বলেছেন তার উপর আইনমন্ত্রী এক বালতি শীতল পানি ঢেলে দিয়েছেন।

এটা নিশ্চিত বলা যায় পূর্ববর্তী দুটি নির্বাচন কমিশনারের মতো এবারও রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটির মাধ্যমেই নতুন কমিশন গঠন করবেন। ফলে এ প্রশ্নে যে রাজনৈতিক বিতর্ক তার অবসান হবে না। সারা বছরজুড়েই এই বিতর্ক চলবে। যেভাবেই নির্বাচন কমিশন গঠন করা হোক না কেন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা ও ক্ষমতা অক্ষুন্ন রেখে যদি নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও তার সহযোগী কমিশনারগণ সত্যি যদি একটি সকলের গ্রহণযোগ্য একটি অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু ও স্ব”ছ ভোটের ব্যবস্থা করতে পারেন তবে তারা জনগণের সাধুবাদ পাবেন। ইতিহাসের পাতায় সুনামের সঙ্গে জায়গা করে নিবেন। কমিশন গঠিত হবার পর, তা যদি সাহস ও সততার সঙ্গে তাদের প্রতি অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন তবে এর চেয়ে ভালো কিছু আর হবে না। আমরা এমন একটা নির্বাচন কমিশনের অপেক্ষায় আছি। সুষ্ঠু ও সৎ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কমিশনের হাতে অনেক ক্ষমতা আছে। তারা তা নির্ভয়ে নিরপেক্ষভাবে কেন তা ব্যবহার করতে পারছে না সেটা জাতির সামনে একটি বৃহৎ প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে ঝুলছে।

এ বছরের ১৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অসমাপ্ত আয়োজনসমূহ পালন করা হবে। এটা আমাদের জন্য এক পরম গৌরবের ঘটনা। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে বঙ্গবন্ধুকে আমরা যদি শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখি তাহলে আমরা তাঁর প্রতি যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হব। আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন আছে। তবে, জাঁকজমক অনুষ্ঠানের বাইরে আমাদের প্রথম কাজ, কর্তব্য ও দায়িত্ব হতে হবে তার আদর্শকে লালন করা ও মহান এই ব্যক্তি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি মানুষটি কেমন সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন সেটা সঠিক উপলব্ধি করা ও সে লক্ষ্যে কাজ করা। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন একটি শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে। এই স্বপ্নটি পূরণ করা মোটেই সহজ কাজ নয়। শ্রেণি-বিভক্ত একটি সমাজে সংখ্যালঘিষ্ঠ ধনিক শ্রেণি ও তাদের পৃষ্ঠপোষক রাজনৈতিক শক্তিই ক্ষমতায় থাকে। ধনিক শোষণ করে নি¤œ শে্িরণ মানুষকে যারা আমজনতা বলে পরিচিত। এই শোষণ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে বিস্তৃত। বঙ্গবন্ধু এই ধরনের শোষণের অবসান চেয়েছিলেন। তিনি গরিব মানুষের কথা বলেছেন। কৃষকের কথা বলেছেন। তাঁর ভাবনায় সততাই ছিল শ্রমিক, মজুর ও সর্বাপরি দিন-আনা দিন-খাওয়া মানুষের কথা। মধ্যবিত্ত মানুষের কথা। আজ স্বাধীনতার সুবণ জয়ন্তীতে আমাদের উপলব্ধি করতে হবে, আমরা যেটুকু সমৃদ্ধি অর্জন করেছি তার ন্যায্য ভাগটুকু কি বঙ্গবন্ধুর চিন্তা ও চেতনাই নিয়ত যে সাধারণ মানুষ তাদের কি দিতে পেয়েছি। যদি তা হতো তবে আমাদের দেশে ধনী দরিদ্রদের এতটা বৈষম্য হতো না। এই বৈষম্য কমানোর  কাজটিও বড্ড কঠিন। আজকের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেক হাসিনা তাঁর পিতার মতোই সাধারণ মানুষের কথা ভাবেন। তবে রাষ্ট্র ব্যবস্থা একটি জগদ্দল পাথর। সেটা সরিয়ে এই ক্রমবর্ধমান বৈষম্য দূরীকরণের জন্য যে কাজটি শেখ হাসিনা করতে চান তা সফলভাবে করার জন্য অন্যদের সাহায্য কমই পাচ্ছেন। এক্ষেত্রে তাঁর নিজের দল আওয়ামী লীগকে আরো বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রশাসন শুধু মূলে নয়, সত্যিই জনমুখী হবে হবে। জনগণের কল্যাণ না করে শুধুই নিজেদের সুখ, সুবিধা ও প্রাচুর্য্যরে জন্য কাজ করলে আর যা-ই হোক না কেন বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাঁর আদর্শের প্রতি সম্মান দেখানো হয় না।

আগেই বলেছি এ বছরটি প্রাক -নির্বাচনী বছর। এই বছরের কাজের হিসাব নিকাশ হবে ২০২৩ নির্বাচনী বছরে, সর্বোপরি ভোটের বাক্সে। তাই আওয়ামী লীগকেও দলের, দলীয় নেতাদের, মন্ত্রীদের ও সাংসদদের কাজের হিসাব নিকাশের দিকে নজর দিতে হবে। মূল্যায়ন করতে হবে ২০১৮ সালের সহজ নির্বাচনে বিজয়ী হবার পপর দল ও সরকার জনগণের কাছে দেয়া প্রতিশ্রুতি কতটা পালন করতে পেরেছে। উন্নয়ন ও অর্থনীতিতে দেশ এগুচ্ছে, তবে প্রশ্ন হল এই উন্নয়নের ধারাটি আরো বেগবান হতে পারত কি? ১০০ টাকার কাজ হাজার টাকায়ও শেষ না হবার সমালোচনা থেকে সরকার নিজেকে মুক্ত রাখতে কি তেমন কোন কার্যক্রম উদ্যোগ নিতে পেরেছে? ২০২১ সাল জুড়েই করোনা অতিমারির তাণ্ডব চলেছে। এই অতিমারি যখন উন্নত দেশের শক্তিশালী অর্থনীতিকে কুপোকাত করেছে তখন বাংলাদেশ প্রাথমিক বিপর্যয় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

করোনা মোকাবিলা কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সক্ষমতার সাথে করতে পারেনি বটে, তবে সামগ্রিক বিবেচনায় প্রশংসনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে ও তা বাস্তবায়ন করেছে। শুরুতে কিছুটা অগোছালো হলে সময়ের সাথে বাংলাদেশ ভালোভাবেই এগিয়ে গেছে। অপেক্ষাকৃত এই সাফল্যের উপর কিছু কিছু দুঃখজনক ঘটনা ছায়া ফেলেছে। অর্জনকে কিছুটা হলেও ম্লান করেছে। পদত্যাগী তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ কান্ড সরকারকে বিব্রত করেছে। সার্বজনীন দুর্গাপূজা উৎসবের মণ্ডপে হামলা ও পরবর্তী কয়েকজনের ঘটনাপ্রবাহ আমাদের বেদনার্ত করেছে। আমরা বিস্মিত হয়েছি। যখন দেখেছি প্রশাসন তার যথাযথ ভূমিকা পালনে ব্যর্থ তখন আমাদের লজ্জা হয়েছে। আমাদের সংখ্যালঘিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসবের এ ধরনের হামলা ভাঙচুর আর কখনো ঘটেছে বলে মনে পড়ে না। কয়েকজন নিহত হয়েছেন। অনেকে হয়েছেন আহত। একটি অসাম্প্রদায়িক ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের স্বাধীনভাবে ধর্ম-কর্ম পালনে যে নিরাপত্তা বাংলাদেশের সংবিধান অঙ্গীকার করেছে তার ব্যত্যয় ঘটে গেল আমাদের চোখের সামনে। এমনটা আমরা চাইনি, এমন হবার কথা ছিল না। এটা সত্যি সময়ের পরিবর্তনে একটি বছর চলে যায়, আরেকটি নতুন বিছর আসে। বিগত বছরে যা ঘটে যায় তার সবটাই ভুলে থাকার নয়। নতুন বছরজুড়ে বিশেষত আগামী বছরটিতে রাজনীতির ক্ষেত্রে অনেক চমক থাকবে বলে অনুমান করা যায়।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সরকার যেমন সজাগ থাকবে নতুন  নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করবে তেমনি বিরোধী দলকেও তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর বিতর্ক ও সংঘাত ছড়িয়ে জনগণের ভাবনা অন্য রকম। সাধারণ মানুষ চায় শান্তি, স্থিতিশীলতা ও এমন একটি পরিবেশ যা সুষ্ঠু ও তাদের ভোট প্রদানের অধিকারকে নিশ্চিত করবো জনগণ বর্তমান সরকারের উন্নয়নমুখী রাজনীতি পছন্দ ও সমর্থন করে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও যে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে সাধারণ মানুষ তা বুঝতে পাের। বৃহ প্রকল্প পদ্মাসেতু, কর্ণফুলী নদীতলে বঙ্গবন্ধু টানেল ও মেট্টোরেল  এবছরের মধ্যেই চালু হবার কথা। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবার পথে। জাতিসংঘের স্বীকৃতি মিলেছে। তবে এটা কার্যকর হবে ২০২৬ সাল থেকে। উন্নয়নের এই দারা শেখ হাসিনার দল ও সরকারের আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে গেছে। আগাশী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যে জয়ী হবে সেই বিশ্বাসে ভরপুর দলটি। তবে সাম্প্রতিক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও তার তথাকথিত বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে কলহ, দলীয় প্রতীক নৌকার প্রার্থীদের অনেক জায়গায় দলীয় প্রতীক নৌকার প্রার্থীদের অনেক জায়গায় পরাজয়, হানাহানির কারণে অনেকের মৃত্যু যে অশনি বার্তা দেয় তা দলের নীতি নির্ধারকরা যদি সঠিক পযালোচনা করতে ব্যর্থ হন তবে ক্ষমতাসীন দলের ক্ষতি হতে পারে। তাই আত্মবিশ্বাসের মধ্যেও দলটির আত্ম বিশ্লেষনের প্রয়োজন আছে।


Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.