× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

অন্ধকার থেকে আলোর পথযাত্রায় বঙ্গবন্ধু

ড. আতিউর রহমান

১১ জানুয়ারি ২০২২, ১০:৪৮ এএম

‘সোনার বাংলা’ বঙ্গবন্ধুর কাছে নিছক একটি রাজনৈতিক স্লোগান ছিল না। এটি ছিল তাঁর চিন্তা ও কর্মের ঐতিহাসিক অনুপ্রেরণা। ঔপনিবেশিক নিষ্পেষণের জাঁতাকলে এ দেশের মানুষের দুর্বিষহ জীবন তাঁকে ভাবিত করত। তিনি নিশ্চিত জানতেন যে, জনমানুষের পক্ষে রাজনীতি করে এ ভূখণ্ডের সেই অতীত গৌরব ফিরিয়ে আনা সম্ভব। শাসক-শ্রেণি জনগণের ন্যায্য দাবি মানতে অস্বীকার করলে তিনি রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। আর রাজনৈতিক আন্দোলন যখন নস্যাৎ করা হয়েছে তখন তিনি বেছে নিয়েছেন সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের পথ। তাই মুক্তিযুদ্ধ শেষে দীর্ঘ কারাবাসের পর ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ স্বাধীন দেশে ফেরার পথে দিল্লিতে তিনি বলেছিলেন, “এ অভিযাত্রা অন্ধকার থেকে আলোয়, বন্দিদশা থেকে স্বাধীনতায়, নিরাশা থেকে আশায়। ... আমি ফিরে যাচ্ছি তাদের নিযুত বিজয়ী হাসির রৌদ্রকরে। আমাদের বিজয়কে শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে পরিচালিত করার যে বিরাট কাজ এখন আমাদের সামনে, তাতে যোগ দেওয়ার জন্য আমি ফিরে যা”িছ আমার মানুষের কাছে।” (টাইমস অব ইন্ডিয়া, ১৩ জানুয়ারি ১৯৭২)।

 সে দিনই ঢাকার মাটিতে তিনি পা রাখেন। এর আগে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করলেও, আমাদের বিজয় পূর্ণতা পায় এই ১০ জানুয়ারি ১৯৭২-এই, বঙ্গবন্ধু দেশের মাটিতে পা রাখার পর। রেসকোর্স ময়দানে তাঁর জন্য অপেক্ষমাণ মানুষের উদ্দেশে সেদিন তিনি বলেছিলেন- “আমাদের সাধারণ মানুষ যদি আশ্রয় না পায়, যদি দেশবাসী খাবার না পায়, যুবকরা চাকরি বা কাজ না পায়, তাহলে আমাদের এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে, পূর্ণ হবে না।” যে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন, তা প্রতিষ্ঠিত করার পরপরই তিনি এভাবে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে ‘ সোনার বাংলা’কে বাস্তবে রূপ দেয়াই হতে যাচ্ছে তাঁর ধ্যান-জ্ঞান।

মূলত এ দেশের নিপীড়িত মানুষের মুক্তির আকাক্সক্ষা থেকেই বঙ্গবন্ধু যোগ দিয়েছিলেন পাকিস্তান আন্দোলনে। কিš‘ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পরই বুঝতে পেরেছিলেন যে, ব্রিটিশ শোষণের চক্র থেকে বেরিয়ে প্রিয় স্বদেশ ঢুকে পড়েছে পশ্চিম পাকিস্তানি শোষকদের চক্রে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জনগণের জন্য কাজ করে এমন সরকারই ছিল তাঁর কাম্য। ১৯৫২ সালে যুবক বয়সে চীন সফরে গিয়ে বিপ্লবোত্তর চীনের সরকারের ভূমিকার সঙ্গে পাকিস্তানের অভিজনচালিত সরকারের পার্থক্যটি তাঁর চোখে তাই প্রবলভাবে ধরা পড়েছে। তাই বঙ্গবন্ধু লিখেছেন- “... তাদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য হলো, তাদের জনগণ জানতে পারল, অনুভব করতে পারল এই দেশ এবং এ দেশের সম্পদ তাদের। আর আমাদের জনগণ বুঝতে আরম্ভ করল, জাতীয় সম্পদ বিশেষ গোষ্ঠীর, আর তারা যেন কেউই নন।”

পাকিস্তানি শাসনামলে পূর্ব বাংলার প্রতি পশ্চিমের অভিজনদের বৈরিতা আর ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক বৈষম্যকে বিবেচনায় নিয়ে বঙ্গবন্ধু ‘দুই অর্থনীতির তত্ত্ব’কে সামনে নিয়ে আসেন। পূর্ব বাংলার মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির কোনো বিকল্প ছিল না। তাই ‘দুই অর্থনীতির তত্ত্ব’কে ভিত্তি করেই গড়ে তোলেন ঐতিহাসিক ‘৬-দফা কর্মসূচি’। স্বভাবতই ৬-দফা আন্দোলন দমনের সর্বাত্মক চেষ্টা চালায় পাকিস্তানি জান্তা। বঙ্গবন্ধুকে কারাগারে নিক্ষেপ করে চিরতরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও হয়। সব বাধা ডিঙিয়ে জনগণই বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করেন। তারাই দেন বঙ্গবন্ধু জনউপাধি। আসে ১৯৭০-এর নির্বাচন। ৬-দফাভিত্তিক সংবিধান ও শাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। কিš‘ পাকিস্তানি অভিজন শাসকরা তাদের কুক্ষিগত ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চেয়েছিল। কাজেই রাজনৈতিক সংগ্রামকে সশস্ত্র যুদ্ধে রূপান্তরের কোনো বিকল্প ছিল না। বঙ্গবন্ধু কারাগারে থেকেও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। এবং অবশেষে কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের নেতৃত্বভার গ্রহণ করেন।

স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধু শুরু করেন তাঁর আজন্ম লালিত স্বপ্ন সোনার বাংলা বাস্তবায়নের কাজ। শুধু নামে স্বাধীনতা তাঁর কাম্য ছিল না। তাই ১৯৭৩-এ বিজয় দিবসের প্রাক্কালে তাঁকে বলতে শুনি- “এই স্বাধীনতা তখনই আমার কাছে প্রকৃত স্বাধীনতা হয়ে উঠবে যেদিন বাংলাদেশের কৃষক-মজুর ও দুঃখী মানুষের সকল দুঃখের অবসান হবে।” এ চিন্তা ও দর্শনেরই প্রতিফলন দেখতে পাই ১৯৭২-এর সংবিধানের চার স্তম্ভে- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশকে তুলে আনতে বঙ্গবন্ধুকে অসাধ্য সাধন করতে হয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত অবকাঠামো তৈরি করতে হয়েছে একেবারে গোড়া থেকে। ১ কোটি শরণার্থীকে পুনর্বাসন করতে হয়েছে, দেশের ভিতর ২০ লাখ মানুষের ঘরবাড়ির ব্যবস্থা করতে হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঢেলে সাজাতে হয়েছে।

মনে রাখতে হবে আমাদের শুরু করতে হয়েছিল একেবারে শূন্য থেকে। অর্থনীতির আকার ছিল মাত্র ৮ বিলিয়ন ডলার। শূন্য ছিল রিজার্ভ। সঞ্চয়-জিডিপি ও বিনিয়োগ-জিডিপির অনুপাত ছিল যথাক্রমে ৩ ও ৯ শতাংশ। ওই দূরবস্থা থেকে দেশকে তুলে আনতেই বঙ্গবন্ধু প্রণয়ন করেন প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৭৩-১৯৭৮)। পরিকল্পনার পাঁচ বছরে কৃষি ও শিল্পের পুনর্গঠনের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যের পাশাপাশি প্রবৃদ্ধির হারকেও ৩ শতাংশ থেকে ৫.৫ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছিল। ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতি সংবেদনশীল থেকে চেয়েছিলেন পরিকল্পনার পাঁচ বছরে বৈদেশিক সহায়তার ওপর নির্ভরতা ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৭ শতাংশে আনতে। সাধারণ মানুষের জীবনমান রক্ষায় বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্যই ওই সময়ে বঙ্গবন্ধু নিত্যপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছিলেন। সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভিত্তিকে মজবুত করার লক্ষ্যে তিনি আমদানি কমিয়ে রপ্তানি বাড়াতে বদ্ধপরিকর ছিলেন।

কৃষি ও শিল্পের যুগপৎ বিকাশকে অপরিহার্য মনে করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি জানতেন কৃষি দেশের বিপুল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্য জোগাবে আর শ্রমশক্তির বড় অংশের কর্মসংস্থান করবে। অন্যদিকে এ খাতই জোগাবে শিল্প খাতের কাঁচামাল ও উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা। তাই দ্রুত কৃষি অবকাঠামো পুনর্র্নিমাণ, বিনামূল্যে বা ভর্তুকিতে কৃষি উপকরণ সরবরাহ, সার্টিফিকেট মামলা থেকে কৃষকদের অব্যাহতি, ন্যায্যমূল্য নির্ধারণসহ বহুসংখ্যক কৃষি ও কৃষকবান্ধব নীতি ও কর্মসূচি শুরু করেন। সদ্য স্বাধীন দেশের বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে শুরুতে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে শিল্পের প্রাথমিক ভিত্তি নির্মাণে মনোনিবেশ করেন বঙ্গবন্ধু। তবে ধীরে ধীরে রাষ্ট্রনির্ভরতা থেকে সরে ব্যক্তি খাতের বিকাশের নীতিতেই তিনি আস্থাশীল ছিলেন। পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় তাই ব্যক্তি খাতের কার্যকর বিকাশের পরিবেশ সৃষ্টির প্রস্তাবনা ছিল। ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের সীমা ২৫ লাখ থেকে ৩ কোটিতে নেওয়া এবং ১৩৩টি পরিত্যক্ত কারখানা ব্যক্তি মালিকানায় হস্তান্তর করা হয়।

কেবল গণমুখী নীতি গ্রহণ নয়, বরং এগুলোর বাস্তবায়নের দিকেও ছিল বঙ্গবন্ধুর একাগ্র মনোযোগ। সোনার বাংলা গড়তে যে সোনার মানুষ দরকার তা তিনি বুঝতেন। তাই কুদরাত-ই-খুদা কমিশনের মাধ্যমে মানবিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ ও নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন জনগোষ্ঠী তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। জ্ঞানী ও বুদ্ধিদীপ্ত কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন শিক্ষিতজন তৈরি করতে চেয়েছিলেন। এরাই প্রশাসনকে মানুষের কল্যাণকামী করবে বলে তাঁর স্বপ্ন ছিল। তাই কেন্দ্র থেকে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত প্রশাসনে আনতে চেয়েছিলেন বৈপ্লবিক রূপান্তর। ১৯৭৫-এর ২১ জুলাই জেলা গভর্নরদের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন- “যে ট্রেনিং আমরা আগে পেয়েছি, সেটা পুরনো ঘুণেধরা সিস্টেম ছাড়া আর কিছু নয়। আপনারা আজ জনগণের শাসক নন। ... আমরা এ দেশের সেবক এ কথা মনে রাখতে হবে। জনগণের সেবার জন্যই আমরা নির্বাচিত হয়েছি এবং তাদের সেবাতেই আমাদের আত্মনিয়োগ করতে হবে।”

সব মিলিয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ইতিবাচক রূপান্তরের এক অবিস্মরণীয় অভিযাত্রায় ছিল বাংলাদেশ। মাত্র সাড়ে তিন বছরে মাথাপিছু আয় প্রায় তিন গুণ বেড়ে ২৭৩ ডলারে পৌঁছেছিল। আমরা সত্যিই ‘সোনার বাংলা’র স্বাদ পেতে শুরু করেছিলাম। কিš‘ চক্রান্তকারীদের কারণে বঙ্গবন্ধুকে শারীরিকভাবে হারিয়ে থমকে গিয়েছিল সোনার বাংলার অভিযাত্রা। দেশ ছিটকে পড়েছিল অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের ধারা থেকে।

দেশবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুকে শারীরিকভাবে সরিয়ে নিলেও তিনি ছিলেন, আছেন আমাদের চিন্তায় ও চেতনায়। তাই বহু ত্যাগের পর দেশ আবার ফিরেছে অন্তর্ভুক্তিমূলক অভিযাত্রায়, বঙ্গবন্ধুকন্যার হাত ধরেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৬ সালে শাসনভার হাতে নিয়েই সেই যাত্রা শুরু করেন। ২০০১-এ আবার বাধা আসে। তবে ২০০৯ থেকে আজ পর্যন্ত এক যুগ ধরে তাঁর নেতৃত্বে যে ইতিবাচক রূপান্তর হয়েছে তা নাটকীয় বললেও কম বলা হয়। ১৯৭৫ থেকে মাথাপিছু আয় সাত গুণ বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ডলার। এর ৭৩ শতাংশই হয়েছে ২০০৯-এর পর। গত এক দশকে গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ (আগের দুই দশকের গড় ৫ শতাংশ)। পাঁচ দশকে রপ্তানি বেড়েছে ৯৮ গুণ (৩৯ বিলিয়ন ডলার)। এর দুই-তৃতীয়াংশই বেড়েছে গত এক দশকে। ১০ বছরে বার্ষিক রেমিট্যান্স প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে (১৮ মিলিয়ন ডলার), রিজার্ভ প্রায় চার গুণ বেড়েছে (৪১ বিলিয়ন ডলার)। সামষ্টিক অর্থনৈতিক এ অগ্রযাত্রার সুফল পৌঁছানো গেছে সামাজিক পিরামিডের পাটাতনে থাকা প্রান্তিক মানুষের কাছে। দারিদ্র্য ও অতিদারিদ্র্য কমেছে। মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণে (৫ থেকে ৬ শতাংশ)। খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে। ডিজিটাইজেশন পুরো ব্যবস্থায় এনেছে অভাবনীয় গতি ও বাড়িয়েছে স্ব”ছতা। আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে ঘটেছে নীরব বিপ্লব। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে আমরা রেখেছি অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপান্তরবাদী দর্শন বাস্তবায়নের সুফল পাওয়া গেছে করোনা মহামারী মোকাবিলার সময়ও। তাই বিশ্বব্যাপী সংকোচনের মধ্যেও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৪ থেকে ৬ শতাংশ। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বলছে চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৭.৭ শতাংশ। এরই মধ্যে ঘোষিত হয়েছে জিডিপির ৪.৩ শতাংশ সমমানের প্রণোদনা প্যাকেজ। বাস্তবায়নে কিছু চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও এ প্যাকেজ হয়তো আরও বাড়তে পারে। কেননা অর্থনীতির গতিময়তা ধরে রাখতেই হবে। দুর্যোগের বছরও রপ্তানি ও রিজার্ভ বেড়েছে যথাক্রমে ১ ও ৩১ শতাংশ, অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রদান বেড়েছে ১১ শতাংশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি যে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছেন সেটি আমাদের আরও আশাবাদী করছে। প্রায় ৬৫ লাখ কোটি টাকার এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রধানত নিজস্ব উৎসের ওপর নির্ভরশীলতা আমাদের সক্ষমতার প্রমাণ। পরিকল্পনায় যে ১ কোটি ১৩ লাখ কর্মসং¯’ানের লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে তাতে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়বে। ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াবে জীবন-মান ও শিল্প খাতের সক্ষমতা। এ নতুন পরিকল্পনার জন্য দরকারি অর্থের ৮১ শতাংশ বিনিয়োগ আসবে বেসরকারি উৎস থেকে। তাই বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়নের বিকল্প নেই। সত্যি বলতে গত কয়েক বছরে বিনিয়োগের প্রায় আদর্শ পরি¯ি’তি তৈরি হয়েছে বলেই পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় উ”চাভিলাষী হওয়া গেছে। পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু শিল্পপার্ক, আড়াইহাজার বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, মেট্রোরেল, রূপপুর প্রকল্প, পায়রা বন্দর এখন দৃশ্যমান। অবকাঠামো প্রকল্পের পাশাপাশি কর, কাস্টমস ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হ্রাসকরণের মাধ্যমে আসলেই বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

পাঁচ দশক আগে কারামুক্ত বঙ্গবন্ধু স্বাধীন দেশে পা রেখেই যেমন সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের দিশা দিয়েছিলেন বহু প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে আমরা সে পথেই হাঁটছি। তাঁর সুযোগ্য কন্যা তাঁর মতোই দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ও কল্যাণকামী। তাই এ মহামারীর মধ্যে কেবল বাংলাদেশ নয় বরং সারা বিশ্বকেই আশার বাণী ও নতুন উন্নয়ন অভিযাত্রার দিশা দিচ্ছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর আর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এ সন্ধিক্ষণে বহু চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়েও এই যে আমরা স্বপ্ন দেখছি, লড়াই করার সাহস পাচ্ছি তার পেছনে মূলত কাজ করছে শান্তি, অগ্রগতি আর সমৃদ্ধির এ পরম্পরা। আলোর পথের এ অভিযাত্রার এ পরম্পরা অব্যাহত থাকুক।

লেখক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর।



Sangbad Sarabela

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । 01894-944220 । [email protected], বিজ্ঞাপন: 01894-944204

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2024 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.